খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৯ মে, ২০২৪

Breaking News

  বাজারে থাকা এসএমসি প্লাসের সব ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস প্রত্যাহারের নির্দেশ, বাজারজাতকারীকে ১৬ লাক টাকা জরিমানা
  ৭ ব্যক্তিকে জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী
একদিনে করোনায় মৃত্যু তিন, আক্রান্ত ২শ’৪১

যশোরে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা, লকডাউন ৭দিন বৃদ্ধি

যশোর প্রতিনিধি

যশোরে করোনায় প্রতিদিনই মৃত্যুর লাইন লম্বা হচ্ছে। বাড়ছে হাহাকার। একদিনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দুশ’ ছাড়িয়েছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুতে প্রতিদিনই হচ্ছে নতুন রেকর্ড। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতফেরত পাঁচজনসহ আক্রান্ত হয়েছে দুশ’ ৪১ জন। মারা গেছেন তিনজন। এদের মধ্যে একজন করোনায়। বাকি দু’জন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এ পরিস্থিতিতে পৌর এলাকার পাশাপাশি আরো চারটি ইউনিয়নে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টারে চারশ’ ২৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় দুশ’ ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে সদর উপজেলার একশ’ ৫২ জন। ঝিকরগাছায় ১৫, অভয়নগরে পাঁচ, মণিরামপুরে ১০, বাঘারপাড়ায় এক, শার্শায় ১৫ ও চৌগাছায় আটজন করে রয়েছেন। এছাড়া যশোর হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্্ের ৮১ জনের অ্যন্টিজেন পরীক্ষায় ৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা আট হাজার পাঁচশ’ ৪৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ছয় হাজার সাতশ’ জন। মৃত্যু হয়েছে ৯৩ জনের।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরিফ আহমেদ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন, কেশবপুর উপজেলার কলেজপাড়ার আবুল হোসেন (৬৭), যশোর শহরের রেলগেট এলাকার মরিয়ম বেগম (৬৫) ও শার্শার কাশিয়ানির মরিয়ম খাতুন (৪)। এদের মধ্যে আবুল হোসেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের রেডজোনে মারা গেছেন। বাকি দু’জন উপসর্গ নিয়ে ইয়োলোজোনে মৃত্যুবরণ করেছেন।

গত ১৩ জুন করোনা উপসর্গ নিয়ে আবুল হোসেন হাসপাতালের ইয়োলোজোনে ভর্তি হন। সেখানে ১৪ জুন তার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর তাকে রেডজোনে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। ১৪ জুন শহরের রেলগেট এলকার মরিয়ম বেগম (৬৫) করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তার মৃত্যু হয়। ১৩ জুন করোনা উপসর্গ নিয়ে শার্শার কাশিয়ানির মরিয়ম নামে এক শিশুকে হাসপাতালের ইয়োলোজোনে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ জুন রাতে সে মারা যায়। তিনি আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রেডজোনে নতুন করে ২৪ জন ভর্তি হয়েছে। ইয়োলোজোনে ভর্তি হয়েছেন ৪১ জন।

এদিকে, যশোরের পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ায় জেলা প্রশাসন লকডাউন আরো সাতদিন বৃদ্ধি করেছে। একইসাথে পৌর এলাকা সংলগ্ন চারটি ইউনিয়ন লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে। ইউনিয়নগুলো হলো, উপশহর, নওয়াপাড়া, চাঁচড়া ও আবরপুর ইউনিয়ন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।
যশোর পৌরসভার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার যশোরে পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে ৫২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১ নম্বর ওয়ার্ডে ১৩ জন, ২ নম্বর ওয়ার্ডে চার, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে তিন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে চার, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ছয়, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে পাঁচ, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে এক, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ১৩ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে তিনজন করে রয়েছেন।

হাসপাতালে দেখা গেছে, করোনার নমুনা সংগ্রহ কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। মঙ্গলবার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ইয়োলোজোনে। যেখানে গত দু’দিনে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। ওই ওয়ার্ডের ভেতর করোনার নমুনা সংগ্রহ করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাসপাতালে আসা লোকজন।
রোগীর বাড়তি চাপ সামলাতে গিয়ে বেসামাল পরিস্থিতিতে পড়ার কথা জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরিফ আহমেদ। হাসপাতালটির করোনা ওয়ার্ডে শয্যার চেয়ে ভর্তি রোগী বেশি থাকায় ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দায় রোগী রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আরও একটি সাধারণ ওয়ার্ডকে করোনা ওয়ার্ড করার কাজ চলছে।

সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন জানান, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। করোনার ব্যাপারে নিজের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজেই নিতে হবে। করোনা সংক্রমণ বর্তমান যেভাবে বাড়ছে, তাতে সামনে মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে যশোর। যা সামাল দেয়া কঠিন। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!