খুলনা, বাংলাদেশ | ২৯ পৌষ, ১৪৩১ | ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  আরও ৬০ দিন বাড়ল সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা
  রমজান ও ঈদের সম্ভাব্য তারিখ জানাল আরব আমিরাত
  দেশে একজনের শরীরে এইচএমপিভি ভাইরাস শনাক্ত : আইইডিসিআর

যশোরে ধান নিয়ে ঘুম নেই গ্রামীণ নারীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

যশোরের গ্রামীণ জনপদের নারীরা এখন বোরো ধান নিয়ে মহাব্যস্ত দিন পার করছেন। তাদের চোখে ঘুম নেই। বাড়িতে ভেজা ধান শুকানো থেকে শুরু করে মাড়াই-ওড়ানো, বস্তায় ভরা সব কাজই তাদের করতে হচ্ছে। এ কাজে এখন নাওয়া-খাওয়া নেই গ্রামের প্রতিটি পরিবারের নারীদের। ঘূর্ণিঝড় অশনি জেলার ৬০ ভাগ কৃষকের মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে। ক্ষেতে পানিতে ভিজে কল গজিয়ে দিয়েছে তাদের শত পরিশ্রমের বোরো ধানে।

যশোর কৃষি অফিস সূত্র জানায়, যশোরের আট উপজেলায় এবার এক লাখ ৫৮ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। সারাদেশে গড়ে হেক্টরে ৫.৮২ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হলেই বাম্পার ফলন ধরা হয়। যশোরে সেখানে গড়ে হেক্টর প্রতি ৬ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি কর্মকর্তারা। এ ফলনে কৃষকের মুখে ব্যাপক হাসি ফুটলেও এখন তাদের হাসি ফিকে হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে বৃষ্টিপাত তাদের হাসি ও স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে। গত সপ্তাহের সোম ও মঙ্গলবার থেমে যশোর জেলা জুড়ে বৃষ্টিপাত হয়। এ বৃষ্টিপাতে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয় বোরো চাষীরা। তাদের ক্ষেতের ৬০ ভাগ ধান পানিতে ভিজে যায়। এছাড়া ক্ষেতে কেটে রাখা ধান পানিতে তলিয়ে চারা গজিয়ে যায়। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়ে কৃষক। তীব্র রোদে পুড়ে তাদের কষ্টের আবাদের এ ক্ষতি কোনভাবেই তারা মেনে নিতে পারছেন না। তারপরও বসে ঘরে বসে নেই কৃষক পরিবারের প্রতিটি সদস্য। তারা মাঠের কাঁদা পানিতে নেমেই কষ্টের ভেজা ধান ঘরে তুলছেন। এক্ষেত্রে তারা বাড়ির সামনের পাকা রাস্তা ব্যবহার করছেন। গ্রামের প্রতিটি রাস্তায় এখন ধান শুকানো হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ যাবৎ কৃষক মাঠ থেকে সরাসরি ক্ষেতে কেটে রাখা ভেজা ধান তুলে বাড়ির সামনের রাস্তার পাশে ফেলছেন। এরপর সকল দায়িত্ব পড়ছে বাড়ির নারীদের ওপর। তারা ওই ধান পাকা সড়কের ওপর তুলে রোদে শুকাচ্ছেন, এরপর রাস্তার ওপর ধান মাড়াই ও বাতাসে, কুলোয় বা ইলেকট্রিক ফ্যানে ঝেড়ে বস্তায় ভরে ঘরে তুলছেন। গোটা এ কাজ নিয়ে গ্রামের নারীদের এখন নাওয়া খাওয়া নেই। এ কাজেই তারা সকাল সন্ধ্যা পার করছেন।

সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত যশোর সদর উপজেলার সাড়াপোল গ্রাম ঘুরে এ দৃশ্য দেখা যায়। এ গ্রামের গৃহবধূ আকলিমা খাতুন (৩৮) বলেন, স্বামী মাঠ থেকে ট্রলিতে করে ধান এনে বাড়ির সামনে ফেলছেন, আর তিনি ও দু’ মেয়ে এ ধান পাকা রাস্তায় ছড়িয়ে রোদে শুকিয়ে মাড়াই করছেন। এরপর ঝেড়ে বস্তায় ভরে ঘরে তুলছেন। যদিও তাদের নীচু মাঠের কিছু কিছু ধানে কল গজিয়ে গেছে। এ ধান নিয়ে তারা কি করবেন, সে বিষয়ে কিছুই ভাবতে পারছেন না। অপর গৃহবধূ জয়গুন্নেছা বলেন, গত ৫দিন তাদের বাড়ির কারো দিনের খাওয়া হচ্ছে না। তাদের মাঠের ৬বিঘা জমির ধান কেটে রাখা ছিল। যা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে কল গজিয়ে গেছে। গত কয়েকদিন যাবৎ তারা এ ধান তুলে রাস্তায় শুকিয়ে ঘরে তুলছেন। বৃষ্টি তাদের সব আশা কেড়ে নিয়েছে। ভাগ্যে কি আছে, সেটা তারা জানেন না।

যশোর কৃষি বিভাগ বলছে, যশোর জেলায় ৪০ ভাগ বোরো ধান বৃষ্টির আগে কৃষক কেটে বাড়ি তুলতে সক্ষম হয়েছে। বাকি ধান বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারপরও কৃষক ধান ভেজার সাথে তুলে শুকিয়ে নিতে পারলে কোন সমস্যা হতো না। কিন্তু এ কাজটি বেশিরভাগ কৃষক শ্রমিক সঙ্কটে করতে পারেনি। ফলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষককে বেগ পেতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে সদর উপজেলার ডহরসিংহা গ্রামের কৃষক রজব আলী বলেন, তার ১৮ বিঘা জমির ধান কেটে মাঠে রাখা ছিল। গত সপ্তাহে বৃষ্টি শুরুর সাথে সাথে তিনি পানিতে ভিজে শ্রমিক নিয়ে ধান ঘরে তোলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সব ধান তুলতে পারেননি। এ ধান তিনি এখন পর্যায়ক্রমে বাড়িতে তুলছেন। আর বাড়ির মহিলারা ধান উঠানে রোদে শুকিয়ে মাড়াই করে ঘরে তুলছেন। ঘরে তোলার গোটা এ প্রক্রিয়া মহিলারা করছেন বলে তাদের রান্না হচ্ছে না। সন্ধ্যায় একবেলা রান্না করে তারা রাতে ও সকালে খাচ্ছেন। দুপুরের খাবার তাদের কপালে জুটছে না।

বিষয়টি নিয়ে যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে যশোরে কৃষক তাদের কঠোর শ্রমের অর্জিত ধান মাঠ থেকে ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও কিছু ধান পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে। সামান্য এ ক্ষতি কৃষকরা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দু’দিনের বৃষ্টিপাতে কৃষকরা এ সমস্যায় পড়েছেন বলে তিনি জানান।

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!