যশোর জেলা পরিষদ নির্বাচনে বৃহস্পতিবার উৎসবমূখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন প্রার্থীরা। চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য ও সাধারণ সদস্য প্রার্থীদের সাথে তাদের সমর্থকরা আসেন নির্বাচন অফিসে। তাদের পদচারণায় মুখর ছিল সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়। এদিন সকাল আটটা থেকে বিকেল তিনটে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় নির্ধারণ ছিল। সকাল নয়টার পরই প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে হাজির হন। সর্বপ্রথম মনোনয়নপত্র জমা দেন মারুফ হাসান কাজল নামে একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী। এরপর পর্যায়ক্রমে সংরক্ষিত ও সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এদিন চেয়ারম্যান পদে দু’জনসহ ৫৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সবার নজর ছিল আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইফুজ্জামান পিকুলের দিকে। শোনা যাচ্ছিল তিনি আওয়ামী লীগের দু’ গ্রুপের নেতাদের সাথে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাবেন। কিন্তু শেষ অবধি আশাহত হন অনেকেই। সাইফুজ্জামান পিকুলের সাথে যারা ছিলেন তাদের প্রায় সবাই এমপি নাবিল গ্রুপের নেতাকর্মী। একমাত্র শাহীন গ্রুপের ছিলেন দপ্তর সম্পাদক মুজিবুদ্দৌলা সরদার কনক। তিনি নেতাকর্মী-সমর্থক নিয়ে নির্বাচন অফিসে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
আগামী ১৭ অক্টোবর যশোর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ও সাধারণ ওয়ার্ডে মোট ৫৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে দু’জন, আটটি সাধারণ ওয়ার্ডে ৪০ সদস্য ও তিনটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১৩ জন সদস্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান প্রশাসক সাইফুজ্জামান পিকুল তার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করবেন বলে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর সাংবাদিকদের জানান।
মনোনয়নপত্র জমা দানকালে চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইফুজ্জামান পিকুলের সাথে ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, সহসভাপতি মেহেদী হাসান মিন্টু ও হুমায়ুন কবীর কবু, উপপ্রচার সম্পাদক লুৎফুল কবির বিজু, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লাইজুজামান, সদর উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সেতারা বেগম, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লব, জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি মঞ্জুন্নাহার নাজনীন সোনালীসহ নেতাকর্মীরা।
যশোর জেলা পরিষদ নির্বাচনে এক হাজার ৩১৯ জনপ্রতিনিধি তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এরা সবাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও মহিলা মেম্বার। ভোটারদের মধ্যে পুরুষ এক হাজার সাত ও ৩১২ জন নারী ভোটার রয়েছেন। স্থানীয় সরকারে জেলা পরিষদই সবচেয়ে কম সংখ্যক ভোটারের নির্বাচন। এ কারণে এ নির্বাচনে ভোটারদের ‘ম্যানেজ’ করা সবচেয়ে কঠিন বলে জানিয়েছেন একাধিক প্রার্থী। ১৮ সেপ্টেম্বর মনোয়নপত্র বাছাই, ২৫ সেপ্টেম্বর প্রত্যাহার ও ২৬ সেপ্টেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে।
সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এবারের নির্বাচনে ৬২ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেেছন। এদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত জমা দিয়েছেন ৫৬ জন।
মনোনয়নপত্র জমা দেয়া সংরক্ষিত ও সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থীরা হলেন, সংরক্ষিত ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৮ জন হচ্ছেন, রেহেনা খাতুন, হাজেরা পারভীন, রাখী ব্যানার্জী, লায়লা খাতুন, নাছিমা সুলতানা, সান-ই-শাকিলা আফরোজ, মরিয়াম বেগম ও বিলকিস সুলতানা সাথী। সংরক্ষিত ২ নম্বর ওয়ার্ডে ৩ জন হচ্ছেন, তাসরিন সুলতানা, রুকসানা ইয়াসমীন পান্না ও নাদিরা বেগম। সংরক্ষিত ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৩ জন হচ্ছেন, সাহানা আক্তার, নাসিম আরা চৌধুরী ও শায়লা জেসমিন।
সাধারণ ১ নম্বর ওয়ার্ডে ২ জন সদস্য প্রার্থী হচ্ছেন, সহিদুল আলম ও সালেহ আহমেদ, সাধারণ ২ নম্বর ওয়ার্ডে ৫ জন হচ্ছেন, ইমামুল হাবিব, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ইকবাল আহমেদ, আনারুল ইসলাম ও সুরত আলী, সাধারণ ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৪ জন হচ্ছেন, তৌহিদুর রহমান, কামরুজ্জামান, আসাদুল ইসলাম ও আহসান হাবীব, সাধারণ ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৬ জন হচ্ছেন, প্রদীপ দে, আব্দুর রউফ মোল্লা, জিএম মনিরুজ্জামান, শেখ মাহবুব উর রহমান, ফারাজী আশিকুল ইসলাম বাঁধন ও এমএম আজিম উদ্দিন, সাধারণ ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৫ জন হচ্ছেন, জয়নাল আবেদীন, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, ইউনুছ আলী, এনায়েত হোসেন লিটন ও রাকিব হাসান, সাধারণ ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৭ জন হচ্ছেন, জবেদ আলী, শেখ ইমামুল কবির, অহেদুজ্জামান, সুলতান মাহমুদ বিপুল, সোহেল রানা, রাকিবুল আলম রাকিব ও শেখ আব্দুল মতলেব, সাধারণ ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ২ জন হচ্ছেন, গৌতম চক্রবর্তী ও শহীদুল ইসলাম এবং সাধারণ ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৯ জন হচ্ছেন, জাকির হোসেন, সোহরাব হোসেন, এসএম মহব্বত হোসেন, সাঈদুর রহমান, মাসুদুজ্জামান, আজিজুল ইসলাম, আলতাফ হোসেন বিশ্বাস ও নজরুল ইসলাম খাঁন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারী তিনজনের একজনও মনোনয়নপত্র জমা দেননি।
আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর প্রতীক পাওয়ার পর প্রার্থীরা ভোটের লড়াইতে পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করবেন। যদিও তিনটি পদের প্রার্থীরা ইতিমধ্যে ভোটের কার্যক্রম শুরু করেছেন। নির্বাচনে জিততে নানা কৌশল নিচ্ছেন তারা।
খুলনা গেজেট/এসজেড