যশোর সদর ও কেশবপুর উপজেলার ২৬টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫০ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এদের মধ্যে সদর উপজেলার ২৮ জন এবং কেশবপুর উপজেলার ২২ জন প্রার্থী রয়েছেন।
এসব প্রার্থী তাদের প্রাপ্ত ভোটের আট শতাংশ না পাওয়ায় জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। জামানত হারানো প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের দু’জন, স্বতন্ত্র ৩১ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ১৪ জন ও জাকের পার্টির তিনজন রয়েছেন।
সদর উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে যারা জামানত হারিয়েছেন তারা হলেন, ফতেপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী শিল্পী খাতুন। তিনি আনারস প্রতীকে ০.১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এই ইউনিয়নে মোটরসাইকেল প্রতীকের আলমগীর হোসেন ১.৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন। কচুয়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান অটোরিকশা প্রতীকে ১.৬ শতাংশ ও আনারস প্রতীকের হাফিজুর রহমান খান ৪ শতাংশ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।
ইছালী ইউনিয়নের ঘোড়া প্রতীকের সিরাজুল ইসলাম জামানত হারিয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ০.৪ শতাংশ ভোট।
রামনগর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী অটোরিকশার জুলেখা বেগম ০.২ শতাংশ, ঘোড়া প্রতীকের কামরুজ্জামান ০.২ শতাংশ ও টেলিফোন প্রতীকের কামরুজ্জামান ০.১২ শতাংশ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।
বসুন্দিয়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী এস.কে মমিনুল ইসলাম আমিনুল ঘোড়া প্রতীকে ০.৮ শতাংশ, মোটরসাইকেল প্রতীকের নুরুজ্জামান খাঁন ০.৭ শতাংশ ও আনারস প্রতীকের শেখ শাহাবুদ্দিন ০.৩ শতাংশ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।
নরেন্দ্রপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের হোসেন ফেরদাউস আলম ৩ শতাংশ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন। চাঁচড়া ইউনিয়নে ০.৩ শতাংশ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন মোটরসাইকেল প্রতীকের ফারুক হোসেন।
আরবপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের নূরুল ইসলাম ৬ শতাংশ ও আনারস প্রতীকের সামসুর রহমান ২ শতাংশ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।
চুড়ামনকাটি ইউনিয়নে ২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন টেলিফোন প্রতীকের আলমগীর কবীর, ১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন মোটরসাইকেল প্রতীকের মো. বাদশা ও ০.৩৬ শতাংশ ভোট পেয়ে অটোরিকশা প্রতীকের সাইফুল ইসলাম জামানত হারিয়েছেন।
কাশিমপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোটরসাইকেল প্রতীকের বিএম সাইফুল ইসলাম ০.৪ শতাংশ ও আনারস প্রতীকের মোস্তফা এনামুল বারী ২.৯ শতাংশ ভোট পেয়ে হারিয়েছেন জামানত।
জামানত হারানো ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখার প্রার্থীরা হলেন, নওয়াপাড়া ইউনিয়নে মোশাররফ হোসেন, দেয়াড়ায় মো. আব্দুল্লাহ, চাঁচড়ায় শামছুর রহমান, নরেন্দ্রপুরে ওলিয়ার রহমান ও কচুয়ায় বাবুল হুসাইন।
এছাড়া, জাকেরপার্টির গোলাপ ফুল প্রতীকের জামানত হারানো প্রার্থীরা হচ্ছেন, ইছালী ইউনিয়নের সাইফুর রহমান, আরবপুরে গাজী রফিকুল ইসলাম ও চুড়ামনকাটিতে মতিয়ার রহমান।
সদর উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান, মহিলা মেম্বার ও পুরুষ মেম্বার প্রার্থী মিলিয়ে নয়শ’ ৬৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৮১, সংরক্ষিত মেম্বার পদে একশ’ ৮৫ ও সাধারণ মেম্বার পদে সাতশ’ একজন প্রার্থী ছিলেন।
৮১ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে জামানত হারিয়েছেন ২৮ জন। নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী কাস্টিং ভোটের আট শতাংশ না পেলে জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। সেই হিসেবে ২৮ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কারণ তাদের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা খুবই নগন্য।
তবে, সদর উপজেলার কোনো ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের কোনো প্রার্থীর জামানত বাতিল হয়নি। ফলে, তাদের জামানত বাবদ জমা দেয়া পাঁচ হাজার টাকা ফেরত পাবেন।
আর যেসব মেম্বার প্রার্থী কাস্টিং ভোটের আট শতাংশ পেয়েছেন তারা তাদের জামানতের দু’ হাজার টাকা ফেরত পাবেন বলে আরবপুর ও দেয়াড়া ইউনিয়নের রিটার্নিং অফিসার সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন।
এদিকে, কেশবপুরে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করা ৪৮ প্রার্থীর মধ্যে ২২ জনের জামানত বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার দু’জন প্রার্থী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নয়জন রয়েছেন। বাকিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলেন। গত বুধবার উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষে ফলাফল বিশ্লেষণে এ তথ্য জানা গেছে।
উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ত্রিমোহিনী ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ অহিদুজ্জামান নৌকা প্রতীকে এক হাজার একশ’ ৭৪ ভোট পাওয়ায় জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এছাড়া, ২৭৩ ভোট পেয়ে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ কবির আলমগীরের।
সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত অলিয়ার রহমান নৌকা প্রতীকে ৫০৬ ভোট পাওয়ায় জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এছাড়া জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী আকরাম খান (১৩৬৯ ভোট) ও আমানত আলী (১৭১ ভোট), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ইসমাইল হোসেনের (২৮৪ ভোট)।
মজিদপুর ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুল লতিফ খান ৮৯৭ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।
বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হজরত আলী ৪৬৩ ভোট ও মঙ্গলকোট ইউনিয়নে একই দলের মিজানুর রহমান মোড়ল ৭২২ ভোট এবং স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী এস এম কামরুজ্জামান ১১০৩ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।
কেশবপুর সদর ইউনিয়নের মূলগ্রাম ভোট কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত থাকায় সম্পূর্ণ ফলাফল প্রকাশ হয়নি।
তবুও স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ১২০৭ ভোট, আয়ুব আলী ১২৩ ভোট ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আনিছুর রহমান ২২৩ ভোট পাওয়ায় জামানত ফেরত পাবেন না বলে নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পাঁজিয়া ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আব্দুল হামিদ ১৯৫ ভোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিহির কুমার বসু মাত্র ৭৫ ভোট, সুফলাকাটি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন মাত্র ২ ভোট ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুল আহাদ ১৫৬ ভোট পেয়ে জামানত খুইয়েছেন।
গৌরীঘোনা ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম আলিমুজ্জামান রানা ১৭৩ ভোট, সাতবাড়িয়া ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ৩৪৮ ভোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থী উত্তম কুমার ঘোষ ১৪১০ ভোট এবং রেজাউল ইসলাম ১৩২৬ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছে।
হাসানপুর ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আব্দুল গফফার মোড়লের মাত্র ১২১ ভোট পাওয়ায় জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার বজলুর রশিদ জানান, গ্রহণকৃত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ না পেলে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে থাকে।