খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  বিচার বিভাগকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে : ড. ইউনূস
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৩৮৯
  পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব : প্রধান উপদেষ্টা

বর্ষীয়ান রাজনীতিক খালেদুর রহমান টিটো আর নেই

যশোর প্রতিনিধি

চলে গেলেন যশোরের বর্ষীয়ান রাজনীতিক সাবেক এমপি খালেদুর রহমান টিটো (৭৬)। শনিবার দুপুর ১টা ২০ মিনিটে যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত ঘোষণা করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলা্ইহি রাজিউন)।
যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মুক্তিযোদ্ধা ডা. নাসির উদ্দিন তার মৃত্যু নিশ্চিত করে বলেন, ইতোমধ্যে মরদেহ তার বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। এরআগে সকাল ১০টার দিকে শারীরিক অবস্থার গুরুতর হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।

তার মেঝ ছেলে অ্যাড. খালিদ হাসান জিউস জানান, ফুসফুসে ইনফেকশনজনিত কারণে তিনদিন আগে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিন সকাল ১০টার দিকে অবস্থার অবনতিতে তাকে লাইফ সাপোর্টে দেয়া হয়।

খালেদুর রহমান টিটো ১৯৪৫ সালের ১ মার্চ কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম অ্যাডভোকেট হবিবুর রহমান। তিনি একজন এমএ, বিএল ছিলেন। মা মরহুম করিমা খাতুন একজন এমএ, এম-এড ছিলেন। সাত ভাইবোনের মধ্যে টিটো দ্বিতীয়। বড়ভাই মাসুকুর রহমান তোজো ১৯৭১ সালে রাজাকার বাহিনীর হাতে নৃশংসভাবে খুন হন।

খালেদুর রহমান টিটোর শিক্ষাজীবন শুরু হয় যশোর জিলা স্কুলে। ১৯৬০ সালে তিনি ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৬৩ সালে ঢাকার কায়েদে আজম কলেজ হতে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। ১৯৬৭ সালে কারাগারে অবস্থানকালে যশোর এমএম কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন করেন। পরবর্তীতে মাস্টার্স করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হয়েও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে পড়াশুনা আর শেষ করতে পারেননি।

 

খালেদুর রহমান টিটো ১৯৬৭ সালে শ্রমিক রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৯ সালের শেষের দিকে তিনি কৃষক আন্দোলন জোরদার করতে কোটচাঁদপুর, মহেশপুর ও কালীগঞ্জ এলাকায় ভ্রমণ করেন। ১৯৭০ সালের শেষের দিকে তার সাথে দলের রাজনৈতিক মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। শ্রেণিশত্রু উৎপাটনের পদ্ধতিকে তিনি মেনে নিতে পারেননি। ফলে দল থেকে বের হয়ে আসেন। এসময় তিনি পুলিশি অভিযানের কারণে কুষ্টিয়াতে চলে যান। ওই বছরের মার্চ মাসে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি আবার ভারতে চলে যান। বাম রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার কারণে সেখানে তিনি শান্তিতে থাকতে পারেননি। আবার পূর্ব পাকিস্তানেও ঢুকতে পারতেন না। এর কারণ হিসেবে ওই সময় পাক আর্মি তার মাথার দাম ধার্য করেছিলো ১০ হাজার টাকা।

স্বাধীনতার পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। ইতোমধ্যে বড়ভাই মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হলে সংসারের দায়িত্ব তার কাঁধে এসে পড়ে। সাংসারিক ব্যয়ভার বহন করার জন্য এসময় তিনি ব্যবসা শুরু করেন এবং আব্দুস সামাদ মেমোরিয়াল স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি গ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালের প্রথমদিকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী-ন্যাপ) এ যোগদান করেন ও এ বছরই তিনি ন্যাপের জেলা সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় তিনি ন্যাপের পক্ষ থেকে তাকে সমর্থন করেন। নির্বাচনের পর বিএনপি নামে রাজনৈতিক দল গঠিত হলে তিনি ন্যাপের সাথেই থেকে যান। ১৯৮১ সালে ‘গণতান্ত্রিক পার্টি’ গঠিত হলে তিনি এই রাজনৈতিক দলে যোগ দেন। গণতান্ত্রিক পার্টির ১১জন স্টান্ডিং কমিটির মেম্বরদের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন।

১৯৮৪ সালে যশোর পৌরসভার নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টি পক্ষ থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৭ সালে তিনি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হন। ১৯৯০ সালের মে মাসে তিনি শ্রম ও জনশক্তি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। সরকার পতনের ফলে ১৯৯১ সালে তাকে জেলে যেতে হয়। ১৯৯১ এর শেষে জাতীয় পার্টির মহাসচিব হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর পার্টির চেয়ারম্যান জেনারেল এরশাদের সাথে তার মতবিরোধ হয়। এরপর ১৯৯৭ সালে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তাকে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে তিনি নির্বাচন বয়কট করেন ও ২০০৫ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে খালেদুর রহমান টিটো তার প্রতিপক্ষ বিএনপিনেতা, সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামকে পরাজিত করে যশোর সদর আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭২ সালের ১৮ মে যশোর শহরের চুটিপট্টির মেয়ে রওশন আরা বেগমের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার তিন ছেলে রয়েছে। ২০০৭ সালে তার স্ত্রী মারা যান।

খুলনা গেজেট/এ হোসেন

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!