যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) বাস চালক মফিজুর রহমান নিজের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। এতে গুরুতর অবস্থায় তাকে প্রথমে যশোর জেনারেল হাসপাতাল ও পরবর্তীতে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়। তার অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
মফিজুরের সহকর্মী সূত্রে জানা যায়, তার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। গত শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) রাত ১টার দিকে আমবটতলায় নিজ বাড়িতে তিনি এ আত্মহত্যার চেষ্টা চালান।
এদিকে, যবিপ্রবির বাস চালক ও হেলপাররা ৩১ ডিসেম্বর মফিজুরের আত্মহত্যার চেষ্টার পিছনে পরিবহন প্রশাসকের অসৌজন্যমূলক আচারণকে দায়ী করে রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আনিছুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া পরিবহন প্রশাসক ড. জাফিরুল ইসলামকে সাময়িকভাবে অপসারণ করে সহকারী পরিবহন প্রশাসক ড. জাহাঙ্গীর আলমকে প্রশাসকের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন।
চালক, হেলপারদের লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, পরিবহন দপ্তরের পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. জাফিরুল ইসলাম যোগদান করার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবহন দপ্তরের কর্মরত চালক-হেলপারদের সাথে বিভিন্ন সময় অসৌজন্যমূলক আচারণ করেন। তেল মাপা কমিটি কর্তৃক মাইলেজ নির্ধরণ করে দেয়ার পরেও পরিবহন প্রশাসক বিভিন্ন সময় চালক-হেলপারদের তেল চোর বলেন। এছাড়া, একজন সিনিয়র চালককে বিনা অপরাধে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় চালক মফিজুর রহমানকে অফিসের দায়িত্ব দেয়া হলে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং অপমানিত হওয়ায় রাতে গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করতে যান।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, অগ্নিদগ্ধ মফিজুর হাসপাতালে যাওয়ার সময় তার স্ত্রীকে বলে যায় আমার যদি কিছু হয়, তুমি যানবাহন কর্মকর্তা ও পরিবহন প্রশাসকের নামে মামলা করবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. জাফিরুল ইসলাম বলেন, আমার উপরে যেসকল অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। যেটি হয়েছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি বাস নষ্ট হয়ে পড়ে থাকায় দু’জন ড্রাইভার এমনিতে বসে ছিল। অফিসে কোন পিওন না থাকার কারণে উপাচার্য মহোদয়ের নির্দেশে তাদের থেকে একজনকে অফিসের কাজের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল এবং এটা নিয়ে চিঠিও দেয়া হয়। ব্যক্তিগতভাবে কোনো ড্রাইভারদের সাথে আমার খারাপ সম্পর্ক নেই। সে এমনিতেই পারিবারিক সমস্যার মধ্যে ছিল। কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হেলপারের স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে তিনি বিয়ে করেন। পারিবারিক কারণে হয়ত তিনি গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করতে পারের। তার আত্মহত্যা চেষ্টা করার পেছনে আমি কোনোভাবে দায়ী নই।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসনে বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া তার চিকিৎসার জন্য প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। তার বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখা হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/কেডি