খুলনার চালনা পৌরসভায় ময়লা-আবর্জনা ফেলার কোনো ভাগাড় নেই। শহরের দুই প্রান্ত দিয়ে প্রবেশের দুটি রাস্তারসহ পৌরশহরের চারপাশ ঘিরে ফেলা হয় আবর্জনা। ফলে দুর্গন্ধে প্রবেশপথেই নাক চেপে শহরে ঢুকতে হয়। দিনের পর দিন রাস্তার পাশে আবর্জনা ফেলায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এলাকার এবং ওই পথে চলাচলকারী মানুষ। কিন্তু আধুনিক আবর্জনা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেই পৌর কর্তৃপক্ষের।
পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে চালনা পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ৯ দশমিক ৪৯ বর্গকিলোমিটারের পৌরসভাটি ২০১৩ সালের আগস্টে ‘গ’ থেকে ‘খ’ শ্রেণিতে উন্নীত হয়। তারপর ২০২০ সালের মাঝামাঝির দিকে ‘খ’ শ্রেণির পৌরসভায় ১০টি ডাস্টবিন নির্মাণ করা হয়। শহর পরিষ্কার রাখার জন্য চারজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য ১০টি ডাস্টবিন হয়েছে। তবে তা ব্যবহারের জন্য উপযোগী হয়নি। এসব ডাস্টবিন ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে শহরবাসি ময়লা-আবর্জনা ফেলেন। এসব স্থান থেকে প্রতিদিন ময়লা সরানো হয় না এবং ভালোভাবে পরিষ্কারও করা হয় না।
পৌরসভার নিজস্ব ভাগাড় ও বর্জ্য সংগ্রহব্যবস্থা না থাকায় শহরবাসি বর্জ্য পাশের ড্রেন, নদ, খাল, পুকুর ও ডোবায় ফেলছে। পৌরসভার প্রাণকেন্দ্র হয়ে বয়ে গেছে চালনা খাল। খালে পানিপ্রবাহ নেই। ময়লা-আবর্জনা ফেলায় খালের পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা বন্ধ হয়ে কচুরিপানায় ভরে আছে। নিষ্কাশনব্যবস্থা না থাকায় ময়লাযুক্ত পানিতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। খালের পাশে বাজার। ফলে ভোগান্তিতে পড়ছে লোকজন। পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে।
পৌরভবনের দিকে যেতে খান সুপার মার্কেট-পৌরসভা গ্যারেজ রোডে চালনা বাজার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের অবস্থান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ফটকের সামনে ময়লা আবর্জনার স্তূপ। নর্দমার ওপরেই ময়লা পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে অনেক সময় নাকে কাপড় চেপে লোকজন ওই স্থান পার হচ্ছেন।
পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে এ রকম ময়লা-আবর্জনার অসংখ্য স্তূপ রয়েছে। দুর্গন্ধে শহরবাসির পথ চলা দায় হয়ে পড়েছে। তাঁদের অভিযোগ শহরে পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকায় লোকজন যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলছেন। পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন না। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, শহরবাসি যথাযথ স্থানে ময়লা না ফেলায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে শহর ঘুরে দেখা যায়, পৌরসভার ব্যস্ততম জায়গা বৌমার গাছতলা, খান সুপার মার্কেটের সামনে চালনা খালের পাশে ও উপজেলা খাদ্যগুদামের সামনে, নলোপাড়া সড়কের পাশে, চালনা বাজার মোড়, শহীদ মিনার সড়কের পাশে, সরকারি কোয়ার্টার সংলগ্ন সড়কের পাশে, আছাঁভূয়া মোড়, আছাঁভূয়া খালের পাশে, চালনা এমএম কলেজের পাশে, মোহাম্মাদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে, পশুর হাট সড়কের পাশে, পৌর সড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ এলাকার লোকজন দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পেতে অনেক সময় নাক চেপে ধরে চলাচল করছেন। সবচেয়ে বড় দুর্বিষহ পোহাতে হয় বর্ষাকালে।
শহীদ মিনার এলাকার বাসিন্দা সৈয়েদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘শহীদ মিনার রোড় সংলগ্ন চালনা বাজার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পাশের ড্রেনের ওপরে কয়েক বছর ধরেই ময়লার স্তূপ দেখছি। সব সময় দুর্গন্ধ ছড়ায়। পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কোনো দিনই ভালোভাবে পরিষ্কার করতে দেখিনি।’
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ফেলার জন্য শহরের কিছু স্থানে পৌরসভার নির্ধারিত ডাস্টবিন রয়েছে। কিন্তু ডাস্টবিন থেকে বর্জ্য অপসারণ না করায় পঁচে দুগর্ন্ধ ছড়িয়ে যাচ্ছে বলে জানান বৌমার গাছতলা এলাকার ব্যবসায়ী মো. আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এ এলাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এখানে একটি বড় খাল রয়েছে। এ খাল দিয়ে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিসহ শহরের সব পানি নিষ্কাশন হয়ে থাকে। কিন্তু পৌরসভার বর্জ্য ফেলায় খালটি ক্রমেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে।’
চালনা পৌরসভার মেয়র সনৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘বর্জ্য ফেলার জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা পৌরসভায় নেই। তবে বর্জ্যব্যবস্থাপনার জন্য জমি কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি জমি কিনে সেখানে বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করা হবে, পরিবেশ বিনষ্ট হবে না।’
খুলনা গেজেট / এমএম