খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৯ মে, ২০২৪

Breaking News

  ৭ ব্যক্তিকে জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী
  নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ১৭

মোংলা বন্দরে পাচারকারী সিন্ডিগেট আবারও সক্রিয়, ট্রলার বোঝাই তেলসহ আটক ১

মোংলা প্রতিনিধি

মোংলায় দীর্ঘদিন ধরে জাহাজ থেকে ডিজেল (কেরোসিন) পাচারের নেপথ্যে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। মোংলা বন্দরে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশী-বিদেশি জাহাজে জ্বালানি তেল (বাঙ্কারিং) অসাধু কিছু ব্যাবসায়ীদের সহায়তায় চিহ্নিত সিন্ডিকেট চক্রটি অবৈধভাবে হাজার হাজার মেট্রিক টন ডিজেল পাচার করছে। সোমবার গভীর রাতে একটি ট্রলার বোঝাই তেলসহ এক পাচারকারীকে আটক করে কোষ্টগার্ড সদস্যরা।

বন্দরের হারবাড়িয়া এলাকা থেকে লোকসহ অবৈধ এ তেলগুলো জব্দ করা হয়। যা মোংলা শহর, বাজুয়া, বটিয়াঘাটা, চালনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে কিছু পন্য জব্দ করতে পারলে এর সাথে জড়িতরা রয়েছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সিন্ডিকেট গ্রুপটি দল আর উচ্চ পর্যায় নেতৃবৃন্দের নাম ভাঙ্গিয়ে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে অনেকে। এতে একদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, অন্যদিকে আর্ন্তজাতিক বাজারে সুনাম নষ্ট হচ্ছে মোংলা সমুদ্র বন্দরের।

সূত্র জানায়, একটি শক্তিশালী চোরাই গ্রুপ মোংলা বন্দরে আসা দেশী-বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে বিভিন্ন ধরণের জ্বালানী তেলসহ মূল্যবান মালামাল চুরি করে কালোবাজারে পাচারের অভিযোগ রয়েছে বহুদিন থেকে। এতে করে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বন্দরে আসা বিদেশী বিভিন্ন জাহাজে কাস্টমসের পিও (প্রিভেন্টিভ অফিসার) থাকা সত্বেও কিভাবে তেল পাচার হয় এবং কাস্টমসের ভূমিকা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

আবারও সোমবার রাত ৩টার দিকে গোপন সংবাদ পেয়ে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের টহল মোংলা ও হারবাড়িয়া সম্বলিত দুইটি দল পশুর নদীর হারবারিয়া সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালায়। এসময় ২৭৬০ লিটার অবৈধ তেল ও ১টি ইঞ্জিন চালিত কাঠের নৌকাসহ বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার কাশিয়া গ্রামের আব্বাস মোল্লার ছেলে মেঃ হাফিজুর মোল্লা (২২) কে আটক করে। সকালে তেলসহ তাকে মোংলা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

বন্দরের হারবার বিভাগ সূত্রে জানায়, প্রতি মাসে ৮০ থেকে ৯০টি দেশী-বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজ বিভিন্ন রকমের পন্য নিয়ে এ বন্দরে আসে। চলতি আর্থ বছরের জুলাই মাস থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ শতাধিকেরও বেশী জাহাজ পন্য নিয়ে এ বন্দরে ভিড়েছে। এসব জাহাজ থেকেই মূলত তেলসহ মুল্যবান মালামাল পাচার করে থাকে জাহাজের সাথে সংশ্লিষ্ট সংঘবদ্ধ চোরাকারবারীরা। এ সকল জাহাজ হতে রাতে অন্ধকারে টন-কে টন তেল (ডিজেল) পাচার করে থাকে সংশ্লিষ্ট চোর চক্রের সদস্যরা বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

মোংলা শহরের জাহাজের বৈধ কাগজপত্রের মাধ্যমে কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, বন্দরে আগত দেশী-বিদেশী জাহাজে বাজার সরবরাহের নামে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী প্রতিদিনই ওইসব জাহাজ থেকে তেল পাচার করে তা কালো বাজারে বিক্রি করছেন। একই সাথে তারা জাহাজের মূল্যবান মালামালও চুরি করে নিয়ে আসছে। দলীয় উচ্চ পর্যায় কিছু নেতৃবৃন্দের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব করে তারা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন বলেও অভিযোগ তাদের।

স্থানীয় কতিপয় শিপিং এজেন্টের যোগসাজসে মোংলার মামার ঘাট সংলগ্ন রিজেকশন গলির প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তি এ তেল পাচার কারবারের সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। এক শ্রেণীর অসাধু শিপিং এজেন্ট অতি মুনাফার আশায় অবৈধ এ কারবারে সরাসরি সহযোগীতা করছেন জাহাজের নাবিকসহ সংঘবদ্ধ চোরাকারবারী চক্রটি। এ গ্রুপটির বিরুদ্ধে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক অভিযোগও রয়েছে। আর বার বার চোরাকারবারীদের মাধ্যমে বেপরোয়াভাবে জাহাজের মুল্যবান মালামাল পাচারের খবরে আর্ন্তজাতিক বাজারে এ বন্দরের সুনাম ক্ষুন্নের আশংকা করছে বন্দর ব্যাবহারকারীরা।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাষ্টার কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দিন বলেন, বন্দরে নঙ্গরকরা জাহাজ থেকে কখনও চোরাকারবারীরা জোর করে মালামাল পাচার করতে পারেনা। সম্ভবতো এর সাথে জাহাজের ক্যাপটেন, শিপ অফিসার ও শিপ ইঞ্জিনিয়ার জড়িত রয়েছে। তবে পাচার ঠেকাতে কোষ্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীদের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানায় বন্দরের এ কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাহাজের ওয়াসম্যান (পাহাড়াদার) নেতারা বলেন, সোমবার যে তেল পাচার হয়েছে, সেখানে ফেড়িওয়ালা গ্রুপ প্রায় ৫৫টির মতো ড্রাম ভর্তি ডিজেলসহ ২টি ট্রলার বোঝাই করে নামিয়ে এনেছিল। একটি ট্রলার মোংলা বাজারে পৌছানোর কথা থাকলেও অন্য দিকে চলে যায় আর তেল বোঝাই অন্যটি ট্রলাটি কোষ্টগার্ডের হাতে আটক হয়। তবে জাহাজে ওয়াসম্যান বাধা দিলে পাচারকারী এ শক্তিশালী গ্রুপটি তাদের কর্মস্থলে কাজ করতে সমস্যা হবে বলে কোন প্রতিবাদ করার সাহস থাকে না বলে জানায় নেতারা।

থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, সোমবার সকালে ব্যারেল বোঝাই করে ২৭৬০ লিটার ডিজেল থানায় নিয়ে আসে কিন্ত তেলগুলো এখনও বুঝে নেইনি। কারণ ব্যারেলে থাকা তেলের মধ্যে পানি মিশ্রিত রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট পাচারকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

মোংলা কোষ্টগার্ড পশ্চিম জোন সদর দপ্তরের অপারেশন কর্মকর্তা লে. ইমতিয়াজ আলম বলেন, সোমবার রাতে বন্দরের হারবাড়িয়া এলাকা থেকে বেশ কিছু ডিজেল জব্দ করা হয়েছে। বন্দর ও বন্দর সংলগ্ন এলাকায় চোরাচালান বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!