খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনি রোডম্যাপ দেয়ার আহবান বিএনপির: মির্জা ফখরুল
  চলমান ইস্যুতে সবাইকে শান্ত থাকার আহবান প্রধান উপদেষ্টার: প্রেস সচিব
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৮

মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটুকু চায় প্রয়াত বাবর আলীর পরিবার

তরিকুল ইসলাম

দীর্ঘ তিন মাস নিজ বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। তাদের সাথে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ফলে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শহীদ রেজাউল ও প্রশিক্ষক এডভোকেট কেরামত আলী তাকে খোকা বলে ডাকতেন। বামিয়ার শহীদ সোহরাওয়ার্দী ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। যুদ্ধকালীন ৯ নং সেক্টরের আওতাধীন কপিলমুুনি ও খুলনা শহরে পাকবাহিনীদের বিপক্ষে মেজর এম এ জলিলের নির্দেশে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। খুলনার ফুলতলাস্থ মিলিশিয়া ক্যাম্পে যুদ্ধপরবর্তী ৩০৩ রাইফেল জমা দেন। তবুও দীর্ঘদিন স্বীকৃতির স্বাদ না নিয়েই চলে যেতে হয়েছে পরপারে। অর্থসংকটে উন্নত চিকিৎসার অভাবে কয়েকবছর প্রায় অচেতনাবস্থায় পড়ে থাকতে হয়েছে বিছানাতে। অবশেষে গেল বছর ৯ জুন মারা যান তিনি।

এ প্রতিবেদকের কাছে দু:খভারাক্লান্ত হৃদয়ে এসব কথা বলেন, মরহুম বাবর আলী গাজীর ছোট ছেলে মোঃ শামীম আখতার। তিনি আরও বলেন, “স্বাধীনতার পরে লেখাপড়াসহ অন্যান্য কাজে এলাকার বাইরে থাকায় বিভিন্ন সময়ে প্রস্তুত করা মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি। পরে বিভিন্ন স্থানে দৌঁড়ঝাপ করেও মেলেনি আমার পিতার স্বীকৃতি।”

মরহুম বাবর আলী গাজী খুলনার কয়রা উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের মৃত মোঃ কফিল উদ্দিন গাজীর ছেলে। তার জাতীয় পরিচয় পত্র নং-৪৭১৫৩৭২৫৬৫৮২২, আর স্বীকৃতির জন্য আবেদনের অনলাইন সিরিয়াল নং-০০০৩৯০৮৬৮। স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে চললো, সমস্ত দালিলিক প্রমাণও আছে, তবুও স্বীকৃতির আশায় প্রশাসনের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা প্রয়াত বাবর আলী গাজীর পরিবার।

তার স্ত্রীও বর্তমানে জটিল রোগে অসহায় অবস্থায় বিছানায় পড়ে রয়েছেন। কান্না জড়িত কন্ঠে স্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, আমার স্বামী মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার পরেও স্বীকৃতি না পেয়ে চাপা বেদনায় দিনতিপাত করতেন। স্বীকৃতির স্বাদ না নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে তাকে। তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরও বলেন, “সেতো আর শুনে যেত পারলো না, আমিও স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির খবর শুনে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারবো কিনা জানি না। বেঁচে থাকতে স্বামীর স্বীকৃতির খবর শুনতে পারলে মনে তৃপ্তি পেতাম।” সরকার ও সংশ্লিষ্টদের কাছে স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

বাবর আলীর স্ত্রী আরও জানান, “সামান্য আয় দিয়ে জীবনে অনেক কষ্ট করে সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়েছি, মানুষের মত মানুষ করার চেষ্টা করেছি। আল্লাহর রহমতে এখন তারা মোটামুটি স্বাবলম্বী। স্বীকৃতি পেলে এ জীবনে চাওয়া পাওয়ার আর কিছু থাকতো না।”

জানা যায়, বাবর আলী স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফুলতলা মিলিশিয়া ক্যাম্পে অস্ত্র (৩০৩ রাইফেল) জমা দেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণ করার প্রত্যায়ন পত্র দেন কয়রাস্থ শহীদ নারায়ন ক্যাম্পের কমান্ডার এড. কেরামত আলী। শহীদ সোহরাওয়ার্দী ক্যাম্পের তৎকালীন কমান্ডার রেজাউল করিম যুদ্ধ পরবর্তী শহীদ হওয়ায় পাশ্ববর্তী নারায়ণ ক্যাম্পের কমান্ডার বাবর আলীর স্বপক্ষে প্রত্যায়ণ দেন। কয়রা উপজেলার সাবেক কমান্ডার জিএম মতিউর রহমানও তার স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি প্রত্যায়নে লিখেছেন, স্বশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ক্যাম্পে সার্বক্ষণিক অবস্থান করতেন এবং সর্বশেষ সহযোদ্ধাদের সাথে খুলনা শহরমুক্ত করার যুদ্ধসহ বিভিন্ন স্থানে রাজাকারদের বিরুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন।

এছাড়া ক্যাম্পের অন্তর্ভুক্ত ১০ জন সহযোদ্ধা তার স্বপক্ষে প্রত্যয়নপত্র প্রদান করেন। লাল মুক্তি বার্তা ও গেজেটভুক্ত ওই ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা হলেন এস এম গোলাম রব্বানী (গেজেট নং ৭৯৬), আব্দুল খালেক গাজী (গেজেট নং -৮৫৮), সাইদুর রহমান (গেজেট নং-৯১১), আফসার আলী (গেজেট নং-৭৯৩), এমদাদুল হক (গেজেট নং-৭৯৮), আতিয়ার রহমান (গেজেট নং-৯১২), নুরুল ইসলাম (গেজেট নং-৮৮০), শওকত হোসেন গাজী, (গেজেট নং-৭৯৯), লূৎফর রহমান মোল্লা (গেজেট নং-৮৪৬), সুরাত আলী মোড়ল (গেজেট নং- ৮৪৮)। বাবর আলী গাজী মুক্তিযুদ্ধে ৯ নম্বর সেষ্টরে অংশ নেওয়ায় তৎকালীন সশস্ত্রবাহিনীর অধিনায়ক মোহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানী তাকে স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদ প্রদান করেন।

প্রয়াত বাবর আলী গাজীর পরিবার মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রশাসনের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!