বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে খুলনা মহানগরীর ৪১টি সড়কের নতুন নামকরণের উদ্যোগ নিয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। ইতোমধ্যে নগরবাসীর কাছ থেকে প্রস্তাব সংগ্রহ করা হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আজ ১৮ সেপ্টেম্বর নামগুলো যাচাই-বাছাই কমিটিতে উত্থাপন করা হবে।
ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাসহ বিশিষ্টজনদের নামে নগরীর একাধিক সড়কের নামকরণ করা হয়। এই কার্যক্রম শুধু নামফলক স্থাপনেই সীমাবব্ধ রয়েছে। এখনও পুরাতন নামে পরিচিত ওই সব এলাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশংসনীয় এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে মূল সমস্যা ঠিকানা পরিবর্তন জটিলতা। বর্তমানে ওই এলাকার বাসিন্দাদের জাতীয় পরিচয়পত্র, শিশুদের জন্ম সনদ, পাসপোর্ট, ব্যাংক হিসাব, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সব জায়গায় পুরাতন ঠিকানা দেওয়া রয়েছে।
সড়কের নতুন নাম দেওয়ার পর এটি কার্যকর করতে গেলে হাজার হাজার মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের কাগজপত্র পরিবর্তন করতে হবে। যা অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ এবং ভোগান্তিমূলক। এই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ না নিয়ে নতুন নামকরণ করা হলে সেগুলোও কার্যকর না হওয়ার আশংকা রয়েছে। আর সমস্যা নিরসনের উপায় বের না করে হঠাৎ কার্যকর করলে ভোগান্তির আশংকা রয়েছে স্থানীয়দের।
কেসিসি থেকে জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনার নাম মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণের জন্য ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকেও পৃথক নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনার আলোকে সড়ক নামকরণের প্রস্তাব চেয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে কেসিসি। পত্রিকায়ও বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নাম চাওয়া হয়। নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি আবেদন করেন। আবেদনগুলো কয়েক দফা যাচাই বাছাই করে ৪১টি সড়কের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সূত্রটি জানায়, নতুন নামকরণের প্রস্তাব আসা ২৭টি সড়ক নগরীর ২৮নং ওয়ার্ডের মধ্যে রয়েছে। ১, ৯, ১৭, ২২, ২৩, ২৫নং ওয়ার্ডে একটি সড়ক, নগরীর ১০ ও ৩০নং ওয়ার্ডে দুটি করে সড়ক এবং ১৬নং ওয়ার্ডে ৩টি সড়কের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব উঠেছে।
সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক জেলা সভাপতি অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, বিভিন্ন সময় কেসিসির পক্ষ থেকে বিশিষ্টজনের নামে সড়ক-স্থাপনার নামকরণ করা হলেও তা শুধু ঘোষণাকেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। একটি নামফলক স্থাপনার ছাড়া ওই এলাকার আর কোনো পরিবর্তন হয়নি। ঠিকানা পরিবর্তনের জটিলতা নিরসনে কেসিসিকেই উদ্যোগী হতে হবে। এ সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া না হলে নতুন নামকরণও ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এটি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যও অবমাননাকর হবে।
খুলনার সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা পরিবর্তন করতে হলে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এক মাসের মধ্যে আবেদন নিষ্পত্তি করা হবে। তবে তাদের সংশোধিত স্মার্ট কার্ড পেতে সময় লাগবে।
তবে বাস্তব অভিজ্ঞতা হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা সংশোধনে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়।
নতুন নামকরণের প্রস্তাব আসা ২৭টি সড়কই নগরীর ২৮নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজমল আহমেদ তপন বলেন, ওয়ার্ড ও থানা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বসে ২৭টি সড়কের প্রস্তাবিত নামগুলো যাচাই করা হয়েছে। এই উদ্যোগে এলাকার মানুষ আনন্দিত। সমস্যা হচ্ছে, ওই ২৭টি সড়কে প্রায় ১৫/২০ হাজার মানুষ বসবাস করে। তাদের পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, জন্মসনদ, ব্যাংকসহ প্রয়োজনীয় কাগজে কিভাবে ঠিকানা পরিবর্তন করবেন-সেটি আগে সুরাহা করে নিলে ভালো হয়।
তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে ৫ মাস সময় লেগেছে। সংশোধন নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা অধিকাংশ নগরবাসীর।
নামকরণ প্রস্তাব যাচাই-বাছাই উপ-কমিটির আহ্বায়ক কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কর তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগেও বিভিন্ন সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে স্থানীয় বাসিন্দাদের ঠিকানা পরিবর্তন করতে হয়নি। এবারের বিষয়টি নিয়ে মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কেসিসি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেওয়া হবে, যাতে দুটো ঠিকানাই রাখা যায়। রোববারের সভায় বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
খুলনা গেজেট/ টি আই