খুলনার পাইকগাছার মিনাজ নদীর স্থানীয় বাজার সংলগ্ন একটি মাত্র গেট কয়রাসহ দু’উপজেলার অন্তত ৭০ টি গ্রামের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম। দীর্ঘদিন যাবৎ নাব্যতা হ্রাসে নদীসহ গেটটির সামনের ক্যানেলটি সরু হয়ে পড়ায় বিস্তীর্ণ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের প্রধান অন্তরায় হয়ে পড়েছে।
উপজেলার ১৫ কি:মি: দৈর্ঘের মিনাজ নদীর মাত্র ২.৫২ একর জমি ইজারা দেওয়ায় ইজারাদারদের অপরিকল্পিত নেট-পাটা দিয়ে নদী শাসনে মাছ চাষে বর্ষা মৌসুমে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে সৃষ্টি হয় কৃত্রিম জলাবদ্ধতা। সমস্যা সমাধানে স্থানীয় লস্কর ইউপি চেয়ারম্যান কে এম আরিফুজ্জামান তুহিনের নেতৃত্বে এলাকাবাসী আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসলেও সমাধান আসেনি। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে স্থানীয় সাবেক ও বর্তমান এমপি, ইউএনও, জেলা প্রশাসক, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সচিবকে অবহিত করেও কোন কাজ হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, পাইকগাছার খড়িয়া মিনাজ বাজার সংলগ্ন পানি সরবরাহের একটি মাত্র গেট লস্কর ইউনিয়নের ৮টি ওয়ার্ডের ২০টি গ্রাম, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইউনিয়ন চাঁদখালীর ৩২টি গ্রাম, গড়ইখালী ইউনিয়নের ১০টিসহ পার্শ্ববর্তী কয়রা উপজেলার আমাদী ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকাসহ অন্তত ৭০ গ্রামের পানি সরবরাহের একমাত্র মাধ্যম। তবে অব্যাহত নাব্যতা হ্রাসে গেটের সামনের ক্যানেলটি সরু হওয়ার পাশাপাশি নদী অভ্যন্তরের কিছুটা সামনের খড়িয়া মিনাজ চক প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকায় পলি জমে ভরাট হয়ে পড়ায় বিস্তীর্ণ অঞ্চলের পানি সরবরাহে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
সর্বশেষ বর্ষা মৌসুমে এলাকার বৃষ্টির পানি সুষ্ঠুভাবে নিষ্কাশন না হওয়ায় গজালিয়া থেকে চাঁদখালী অভিমুখে পীচের রাস্তায় পানি উঠে যায়। অবস্থা এতটাই খারাপ হয় যে, স্থানীয়রা রাস্তার উপর থেকে মাছও ধরে। মৌসুমের ৩ দিনের পানি সরতে সময় লাগে অন্তত ১৫ দিন। এসময় সৃষ্ট কৃত্রিম বন্যায় এলাকার ধান ও মাছ চাষীরা ব্যাপকভাবে ক্ষত্রিগ্রস্থ হয়। ধ্বসে পড়ে বহু কাঁচা ঘর-বাড়ি। নদী পাশের রাস্তা সংষ্কার হলেও পানির তোড়ে তা বারবার ভেঙ্গে যায়। দ্রুত পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় সেখানকার স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে নদীর ভরাটি অংশের খনন না হলে ঐ অঞ্চলের অন্তত এক লাখ বিশ হাজার মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হবে।
এলাকাবাসী জানান, একদিকে মিনাজ নদীর অংশবিশেষসহ গেটের সামনে মাটিভরাটে পানি সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা, অন্যদিকে বাইনতলা গেটটি দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় বিস্তীর্ণ অঞ্চলের পানির একমাত্র চাপ মিনাজ গেট’র উপর।
লস্কর ইউপি চেয়ারম্যান কে এম আরিফুজ্জামান তুহিন বলেন, বাস্তবতার আলোকে মিনাজ নদীর চর ভরাটি অংশ খননপূর্বক অবমুক্ত করা এখন সময়ের দাবি। আর তা না হলে এ অঞ্চলে ধান চাষ কোন ভাবেই সম্ভব নয়। এব্যাপারে জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণে তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মাননীয় প্রধনমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
খুলনা গেজেট/ টি আই