নিরাপদ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প প্রনয়ণের লক্ষে বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎস সন্ধানে নেমেছে বিশেষজ্ঞদল। খুলনার চারটি উপজেলার মিঠে পানির উৎসের জন্য মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে তারা। সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে দলটি প্রতিবেদন দাখিল করবে। উপজেলাগুলো হচ্ছে কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটা।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, দুষণের কারণে মিঠে পানি পাওয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বৃষ্টির পানি একমাত্র ভরসা। চলমান দাবদাহের কারণে এসব এলাকায় পানির স্তর নেমেছে।
বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিউটের অধ্যাপক একেএম সাইফুল ইসলাম বলেছেন, খুলনাসহ কয়েকটি জেলায় মিঠে পানির সংকট চলছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২০ সেন্টিমিটার বেড়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে সহজেই সমুদ্রের লবণাক্ততা লোকালয়ে চলে এসেছে। এছাড়া ফারক্কা ও তিস্তা থেকে পানি প্রত্যাহার করায় দেশে পানির প্রবাহ কমেছে। সব মিলিয়ে পানির ব্যবস্থাপনা বড় চ্যালেঞ্জ। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় মানুষ মিঠে পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আকমল হোসেন জানান, ৬শ’ পিপিএম পর্যন্ত লবণাক্ততার পানি পানের যোগ্য। কিন্তু খুলনার ৪ উপজেলায় লবণাক্ততার ২ হাজার পিপিএমের ওপরে। পাইকগাছা উপজেলায় গভীর নলকূপ সফল হয়না। এ উপজেলার দেলুটি, শামুকপোতা, দাকোপ উপজেলার সদর, বাজুয়া, বানিয়াশান্তা ইউনিয়নে ৮ মাস পানি কিনে ক্ষেতে হয়। উপজেলাগুলোতে চাহিদার ৬৫-৭০ শতাংশ বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট চলছে। কয়রার দক্ষিণ বেদকাশিতে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে।
তাঁর দেওয়া তথ্য মতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে রাইটু নামক দেশিয় সংস্থার বিশেষজ্ঞ দলের ৫ সদস্য তৃনমূলে সম্ভব্যতা যাচাই করছে। অপর এক সূত্র বলেছে, দাকোপ, বটিয়াঘাটা ও পাইকগাছাই বোরো আবাদ ও তরমুজ চাষে লবণাক্ততার প্রভাব পড়েছে। লবণাক্ততা সুপেয় পানি সকল উৎস স্থল গ্রাস করেছে। গভীর নলকূপের পানিতে লবণ ও আয়রন। কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মোমিনুর রহমান তথ্য দিয়েছেন বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে এলাকাবাসি খাবার পানির চাহিদা পূরণ করছে।
বানিশান্তা এলাকার নাগরিক নেতা নুরুজ্জামান মাছুম বলেছেন বর্ষা মৌসুুম ছাড়া বাকি সময়টা পানি কিনে পান করতে হয়। কয়রার কালিকাপুর গ্রামের চন্দনা দাসের ভাষ্য জলের কষ্ট দিন দিন বাড়ছে। পুকুরের পানি পান করে এলাকার মানুষ জীবন ধারণ করে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, বাংলাদেশে কল থেকে যে পানি বের হয় তা পান নিরাপদ নয়। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশে^র জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশেরও বেশী মানুষ পানির সংকটে থাকা দেশগুলোতে বাস করে। একই সংখ্যক মানুষ মলমূত দ্বারা দূষিত পানীয় জলের উৎস ব্যবহার করে। এ কারণে প্রতিবছর কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড ও পোলিওসহ নানা রোগ পানীয় জলের মাধ্যমে ছড়ায়। এসব পানির সাধারণ রাসায়নিক দূষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- সিসা, পারদ, কীটনাশক, ওষুধ ও প্লাষ্টিক কণা।
খুলনা গেজেট/কেডি