কাজ শুরুর প্রায় তিন বছর পর ভৈরব সেতুর নকশায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। নতুন প্রস্তাবে মূল সেতু কংক্রিটের পরিবর্তে হবে আর্চ স্টিলের। নতুন নকশায় সেতু দেখতে হবে কালনা সেতু ও হাতিরঝিলের মতো। এরই মধ্যে সংশোধিত নকশা তৈরির কাজ সম্পন্ন করেছে সড়ক বিভাগ। চলতি মাসেই চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
এ ছাড়া সেতুর প্রশস্ততা বাড়ায় ১৭, ১৮ ও ১৯ নং পিলারের নকশায়ও সংশোধন আনা হচ্ছে। প্রকল্পে নগরীর মহসীন মোড়ের আগে অ্যাপ্রোচ সড়কে একটি আন্ডারপাস নির্মাণ, সেতু নির্মাণের জন্য ভেঙে ফেলা দুটি মসজিদ ও একটি ঈদগাহ নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। এ জন্য প্রকল্পটি সংশোধন করতে হবে। সংশোধিত প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়বে, তবে টাকার পরিমাণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বর্তমানে প্রকল্প ব্যয় ৬১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সেতু নির্মাণের ব্যয় ৩০২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
বর্তমান নকশায় নদীর ওপর ১৬০ মিটার কংক্রিটের সেতু নির্মাণের কথা রয়েছে। সেতুর প্রশস্ততা হবে ৭ দশমিক ৩ মিটার বা প্রায় ২২ ফুট। দুই লেনের সেতুতে স্বল্পগতির যানবাহন এবং মানুষ চলাচলের জন্য পৃথক কোনো লেন নেই। এতে করে ভবিষ্যতে যানবাহনের চাপ বাড়লে যানজট এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দেবে।
সড়ক বিভাগ খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ আসলাম আলী বলেন, নতুন নকশায় প্রশস্ততা বাড়িয়ে ১০ দশমিক ৩ মিটার করা হবে। রূপসা সেতুর মতো দুই পাশে স্বল্পগতির যানবাহনের জন্য সার্ভিস লেন থাকবে। ওজন কম এবং নদীর ভেতরে পিলারের প্রয়োজন না হওয়ায় আর্চ স্টিল সেতু নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় সামান্য বাড়বে। তবে নকশা পরিবর্তনের জন্য কাজের গতিতে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান তিনি।
কাজে ধীরগতিতে ক্ষোভ জনপ্রতিনিধিদের
কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও সেতু নির্মাণের কাজে গতি আনা যাচ্ছে না। গত তিন বছরে কাজের অগ্রগতি মাত্র ১৩ দশমিক ২৯ শতাংশ। এ অবস্থায় নতুন করে মেয়াদ ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। নির্মাণকাজ নিয়ে হতাশ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ।
প্রকল্প এলাকা ঘুরে ও সড়ক বিভাগ থেকে জানা গেছে, গত তিন বছরে প্রকল্পের দৃশ্যমান অগ্রগতি সামান্য। সেতুর ৫৮টি পিলার কলামের মধ্যে মাত্র ২০টি নির্মাণ হয়েছে। ২৮টি পিয়ার ক্যাপের মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে ৮টির। সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড, সার্ভিস রোড, আরসিসি বক্স কালভার্ট, ড্রেন, কংক্রিটের ঢাল ও দুটি ইন্টারসেকশনের কাজ শুরুই হয়নি।
সেতুর দিঘলিয়া অংশের বেশির ভাগ পিলারের কাজ শেষ হলেও খুলনা শহরের অংশে গতি নেই। কার্যাদেশের চার বছরেও ঠিকাদারকে শহর অংশের জমি বুঝিয়ে দিতে পারেনি সড়ক বিভাগ।
গত সোমবার সেতুর নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এত বছর হয়ে গেল, সেতুর কাঠামো এখনও দেখতে পেলাম না। এখন একটাই আশা, জীবিত অবস্থায় যেন সেতুটি দেখতে পাই।
মঙ্গলবার সেতুর পর্যালোচনা সভায় ধীরগতির কাজ নিয়ে সড়ক বিভাগ ও ঠিকাদারের প্রতি ক্ষোভ ঝাড়েন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। তিনি বলেন, তিন বছরে অর্ধেক পিলারের কাজও শেষ হয়নি, যেভাবে পারেন দ্রুত কাজ শেষ করেন।
জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শহর অংশের জমি এখনও বুঝে পাইনি। জমি বুঝে পেলে কাজ শেষ করতে সময় লাগবে না।
সড়ক বিভাগ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, দু-একদিনের মধ্যে স্থাপনা নিলামের কার্যাদেশ পাওয়া যাবে। ১৫ দিনের মধ্যে ঠিকাদারকে শহর অংশের জমি বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
খুলনা নগরীর রেলিগেট ও দিঘলিয়া উপজেলাকে পৃথক করেছে ভৈরব নদ। ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভৈরব সেতু নির্মাণ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়। ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয় সড়ক বিভাগ। ২০২১ সালের ২৪ মে ঠিকাদার আনুষ্ঠানিকভাবে সেতু নির্মাণকাজ শুরু করে।
খুলনা গেজেট/হিমালয়