বাংলা সাহিত্যের অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৪৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার। মহামারি করোনার কারণে মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার জন্মভূমি যশোরের কেশবপুরের সাগরদাঁড়িতে এদিন কোন অনুষ্ঠান থাকছে না। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন তিনি কলকাতার আলিপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরলোকগমন করেন।
মধুসূদন দত্ত যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি জমিদার পিতা রাজনারায়ন দত্ত ও মা জাহ্নবী দেবীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৫৩ সালে তিনি খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেন। তখন থেকে তার নামের সঙ্গে ‘মাইকেল’ যুক্ত হয়। তিনি ‘পদ্মাবতী’ নাটক, ‘একেই বলে সভ্যতা’ ও ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নামে দুটি প্রহসন, ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’, ‘ব্রজাঙ্গনাকাব্য’, ‘কৃষ্ণকুমারী’ নাটক, ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’ ও ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী’ রচনা করেন। বাংলা সাহিত্যে গাম্ভীর্যপূর্ণ অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক তিনি।
প্রাকৃতিক অপূর্ব লীলাভূমি, পাখি ডাকা, ছায়া ঢাকা, শষ্য সম্ভারে সমৃদ্ধ সাগরদাঁড়ি গ্রাম আর বাড়ির পাশে বয়ে চলা স্রোতস্বিনী কপোতাক্ষের সাথে মিলেমিশে শিশু মধুসূদন ধীরে ধীরে শৈশব থেকে কৈশোর এবং কৈশোর থেকে পরিণত যুবক হয়ে ওঠেন। কপোতাক্ষ নদ আর মধুসূদনের মধ্যে গড়ে উঠে ভালবাসার এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন। মধুকবি যখন জন্মগ্রহণ করেন সে সময়ে আজকের এই মৃত প্রায় কপোতাক্ষ নদ কাকের কালো চোখের মত স্বচ্ছ জলের জোঁয়ার ভাটায় ছিল পূর্ণ। নদের প্রশস্ত বুক চিরে ভেসে যেত পাল তোলা সারি সারি নৌকার বহর ও মাঝির কন্ঠে শোনা যেত প্রাণ উজাড় করা সব গান। শিশু মধুসূদন এসব অপলক দৃষ্টিতে দেখে মুগ্ধ হতেন। স্রোতস্বিনী কপোতাক্ষের অবিশ্রান্ত ধারায় বয়ে চলা জলকে মায়ের দুধের সাথে তুলনা করে তাই কবি সুদুর ভার্সাই নগরে বসে রচনা করেন বিখ্যাত সনেট কবিতা ‘কপোতাক্ষ নদ।’
১৯৮৯ সালে সাগরদাঁড়িতে মধুসূদন একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রতিবছর কবির জন্মভ‚মিতে মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। মহামারি করোনার কারণে গত বছরও কোন অনুষ্ঠান হয়নি। এবারও সাগরদাঁড়িতে কবির মৃত্যুবার্ষিকী পালনে উন্মুক্ত কোন কর্মসূচি গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।
মধুসূদন একাডেমির পরিচালক কবি ও গবেষক খন্দকার খসরু পারভেজ বলেন, মহামারির কারণে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের মৃত্যুবার্ষিকীতে শুধুমাত্র সাগরদাঁড়ির মধুপল্লীতে মহাকবির আবক্ষমূর্তিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হবে। এছাড়া কোন কর্মসূচি থাকছে না।
খুলনা গেজেট/ টি আই