যশোরে পরকীয়া প্রেমের জেরে খুনের শিকার স্কেভেটর চালক ইসরাফিল হোসেন মান্নাত (৪২) প্রাণ বাঁচাতে মসজিদে উঠেও রক্ষা পাননি। ভগ্নিপতি শাহ আলমের ভাগ্নে শামীম ইট দিয়ে নির্মমতা চালিয়ে তাকে হত্যা করে। ২৬ অক্টোবর গভীর রাতে হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারী শাহ আলী মৃধা ওরফে শাহ আলমসহ দু’জনকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। এছাড়া অন্যতম আসামি মান্নাতের সাবেক স্ত্রী সুমিকে খুঁজছে পুলিশ।
২৩ অক্টোবর রাতে যশোর শহরের কারবালা সিএন্ডবি রোডের পাশে হত্যা করা হয় মণিরামপুর উপজেলার খেদাপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা বজলুর রহমানের ছেলে মান্নাতকে। তিনি যশোরের বকচর বিহারী কলোনীর গোলাম মোস্তফার বাড়ি ভাড়া থাকতেন। ২৪ অক্টোবর তার মা আনোয়ারা বেগম কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। এতে ৫ জনকে আসামি করা হয়।
এদিকে, মামলাটি স্পর্শকাতর হওয়ায় তদন্তে নামে জেলা গোয়েন্দা শাখা। তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির এসআই শামীম, এসআই মফিজুল ইসলাম, নূর হোসেনসহ আরও কয়েক অফিসারকে সাথে নিয়ে তদন্ত ও আটক অভিযান শুরু করেন। তদন্তে গোয়েন্দা পুলিশ পরিস্কার হয় নিহত মান্নাতের স্ত্রী শারমিন সুলতানা সুমির সাথে ভগ্নিপতি শাহ আলমের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। এ নিয়ে গোলযোগের জের ধরে শাহ আলম তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ওই হত্যায় শাহ আলমসহ ৯ জন জড়িত বলে তদন্তে তথ্য পায় পুলিশ।
২৪ ও ২৫ অক্টোবর অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় মাহিদিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে আল আমিন, পুরাতন কসবা কাঁঠালতলা নান্টুর বাগান এলাকার আবু তাহেরের ছেলে রিফাত, সুজলপুরের আব্দুর রশিদের ছেলে রায়হান শেখ ও শফিকুল ইসলামের ছেলে নয়ন হোসেনকে। তারা হত্যা মিশনে জড়িত স্বীকার করে পুলিশকে নানা তথ্য দেয়। এরপর ২৬ অক্টোবর রাত ১ টা ৩৫ মিনিটে ঢাকায় পালিয়ে যাওয়ার সময় হাশিমপুর থেকে আটক করা হয় শাহ আলমকে। তিনি শহরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়া মানিকতলার শফিয়ার রহমানের ছেলে। ওই রাতে আটক করা হয় হত্যা মিশনের আরেক সদস্য আল আমিনকে। তিনি রামনগর খাঁ পাড়ার ছমেদ আলীর ছেলে।
এরপর ২৭ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন শাহ আলম ও আল আমিন। তারা জানান, মান্নাতকে হত্যার পরিকল্পনা করে কৌশলে কারবালা রোডে নিয়ে গেলে মান্নাত টের পেয়ে যায়। হত্যাকারী শামীমকে ছায়ার মত দেখতে পেয়ে একটি মসজিদে ঢুকে পড়েন মান্নাত। পরে তাকে অভয় দিয়ে ড্রাইভার আল আমিন ফোন করে ডেকে আনেন। এরপর তাকে ধরে নিয়ে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করেন শাহ আলমের ভাগ্নে শামীম ও তার সহযোগীরা।
শাহ আলম শ্যালক মান্নাতের স্ত্রী শারমিন সুলতানা সুমির সাথে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পালিয়ে বিয়ে করেন। তাদের খোঁজ পেয়ে কোটচাঁদপুর এলাকার স্থানীয় পৌরসভার কাউন্সিলরের মাধ্যমে তালাক করাতে বাধ্য করেন মান্নাত। ওই সময় ভগ্নিপতি শাহ আলমকে মারপিট করা হয়। এরপর মান্নাত ও সুমির মধ্যেও ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় শাহ আলমের পিছু নেন মান্নাত। এতে ক্ষুব্ধ হন তিনি। ওই আক্রোশে শাহ আলম তার ভাগ্নে শামীম ও তার পরিচিত উঠতি দুর্বৃত্তদের মাধ্যমে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শামীম জানান, মান্নাতের মা ৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। তদন্তে হত্যাকান্ডে ৯ জন জড়িত বলে তথ্য মিলেছে। মূল পরিকল্পনাকারী শাহ আলমসহ ৬ জন আটক হয়েছে। তারা হত্যার দায় স্বীকার করেছে। এছাড়া খোঁজা হচ্ছে মান্নাতের সাবেক স্ত্রী সুমিকে। খোঁজা হচ্ছে ভাগ্নে শামীমকে। দ্রুতই তারা আটক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
খুলনা গেজেট/এনএম