মশার অত্যাচারে জনজীবন অতিষ্ঠ। দিন ও রাতে সমান তালে চলে এদের অত্যাচার। ঘরের জানালা ও দরজা খুলে রাখার উপায় নেই। মশার কয়েল, স্প্রে ও ইলেকট্রিক ব্যাট ব্যবহার করেও কোন সুফল পাওয়া যায় যাচ্ছে না। মশক নিধনে সিটি কর্পোশেনের কোন প্রোগ্রাম কাজে আসছেনা বলে নগররিক নেতারা মনে করেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, খুলনার অধিকাংশ এলাকায় চলছে ড্রেন ও রাস্তার সংস্কার কাজ। এ কাজের সময় ড্রেনের মুখবন্ধ রেখে কাজ করতে হয় শ্রমিকদের। সেখানে জমে থাকে নোংরা পানি। বদ্ধ নোংরা পানি থেকে জন্ম নেয় মশা।
খুলনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ড্রেনগুলোতে পলিথিন, কাগজ ও বিভিন্ন ধরনের ময়লা জমে রয়েছে। এগুলো পরিস্কার ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের রয়েছে উদাসীনতা যা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছে ওই এলাকার বসিন্দারা।
নগরীর হাজী মুহাসীন এলাকার বাসিন্দা মিন্টু শেখ খুলনা গেজেটকে বলেন, এ এলাকার বেশিরভাগ বাড়ির সদস্যরা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। তার বড় ভাইয়ের ছেলে মশা বাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, ফগার মেশিন দিয়ে বাড়ির বাইরে ওষুধ ছিটিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মশা মরে না। সেগুলো উড়ে ঘরে প্রবেশ করে।
শামসুর রহমান এলাকার বাসিন্দা ইমন হাসান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে মশার উপদ্রব বেশ। দিন ও রাতে সমান তালে চলে এদের অত্যাচার। ঘরের জানাল ও দরজা ঠিক মতো খোলা যায় না। জানালা খুললে ঘরে মশা প্রবেশ করে। শুরু হয় অত্যাচার। মঝেমধ্যে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ওষুধ ছিটানো হয়। কিন্তু তাতে কোন কাজ হয় না।
সিটি কর্পোরেশনের ছিটানো ওষুধের মান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন টুটপাড়া এলাকার বাসিন্দা রিমন হাসান। তিনি বলেন, ওষুধ ছিটিয়ে দেওয়ার পর কিভাবে মশা উড়ে বেড়ায় আর আমাদের কামড় দেয়। তাছাড়া আমরা নিয়মিত পৌরকর পরিশোধ করে থাকি। তারা কেন আমাদের নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত করে।
নাগরিক নেতা বাবুল হাওলাদার খুলনা গেজেটকে বলেন, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না। এলাকার অলিগলির ড্রেনে পলিথিন, কাগজ ও বিভিন্ন ধরনের ময়লা জমে থাকতে দেখা যায়। এসব ময়লা তারা ঠিকমতো পরিস্কার করছে না। এখানকার পানি থেকে জন্ম নিচ্ছে মশা। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে কেসিসি মাঝে মধ্যে সভা করে। সভার মধ্যে তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকে। বাস্তবে তারা কোন কাজ করেনা। মশক নিধনে মানসম্মত ওষুধ ছিটানে প্রয়োজন।নিয়মিত ড্রেন পরিস্কার করা ও বজ্য ব্যবস্থাপনার সংস্কার প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
সিটি কর্পোরেশনের বজ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান আব্দুল আজিজ খুলনা গেজেটকে বলেন, পানি জমে লার্ভার সষ্টি হয়। এখান থেকে মশার জন্ম হয়। তিনি বলেন, লার্ভা ধ্বংস করা জন্য ড্রেনে কালো তেল ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া ফগার মেশিনের শব্দ শুনে অনেক মশা পালিয়ে যায়। যেসব মশার গায়ে ধোয়া লাগে তারা মারা যায়। আর উড়ন্ত মশার জন্য ব্যবহার করা হয় সাইফার মেথ্রিল ১০ ইসি।
তিনি খুলনা গেজেটকে আরও বলেন, গেল মাসের ৩০ তারিখে তিনি বজ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান হিসেবে যোগদান করেছেন। এর আগে এখানে যিনি ছিলেন মশক নিধনে তিনি কি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তা তার জানা নেই। তবে মশার উপদ্রব বৃদ্ধির জন্য তিনি আবহাওয়ার পরিবর্তনকে দায়ি করেছেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি বিভিন্ন ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছেন। মশার উপদ্রব থেকে বাচার জন্য তিনি নগরবাসীকে সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বাড়ির জঙ্গল ও আশপাশের ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিস্কার করার তাগিদ দিয়েছেন।
খুলনা গেজেট/সাগর/এইচ