নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের পার আমডাঙ্গা ও লোহাগড়া ইউনিয়নের ছাগলছেড়া গ্রামের ৩শ’ পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে মধুমতী নদীতে। ক্ষতিগ্রস্তরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সোমবার (২ অক্টোবর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই ভাঙ্গনের দৃশ্যপট।
এ সময় এলাকাবাসী বলেন, আমরা দীর্ঘ ৩/৪ বছর ধরে মধুমতী নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে আছি। বিগত দিনে কিছু সহযোগিতা পেলেও এ বছরে নতুন করে এখনো কোন সাহায্য সহযোগিতা পায়নি। সরকারি যে সাহায্য সহযোগিতা সেটি খুবই নগন্য ছিল। নতুন করে কোন সরকারি ও স্থানীয় কোন প্রতিনিধি আমাদের পাশে এসে দাঁড়াইনি। আমরা এখন সর্বশান্ত, আমাদের মাথা গোজার ঠায় নেই। দুই গ্রামের এখনো প্রায় ৬শ’ পরিবার নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছেন। এই ভাঙ্গন প্রায় ২ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।
পার আমডাঙ্গা গ্রামের আঃ সবুর খান, নুর আলম মাস্টার, সোহাগ মাস্টার, জাহেদা বেগম, রাসেল মোল্যা, রাজীব মুন্সি তাওসিফ নুর আয়ানসহ এলাকাবাসী জানান, আমাদের গ্রামের শতবর্ষের মসজিদ-মাদ্রাসা, কবরস্থানসহ আমাদের অসংখ্য ঘর-বাড়ী ও হাজার একর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সহায় সম্বল হারিয়ে আমরা এখন পথে বসেছি। আমরা সরকারি ও স্থানীয়ভাবে কোন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পায়নি। এলাকাবাসী সরকারের কাছে দ্রুত নদী ভাঙ্গন রোধ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পূনর্বাসনের দাবি জানান।
এদিকে উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের পারশালনগর, রামচন্দ্রপুর এলাকায় নদী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করায় ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙ্গন আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা।
এলাকাবাসী আরও বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য প্রায় দুই বছর আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমি এমপি থাকি বা না থাকি আপনাদের নদী ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাস্তবে তার কোন প্রতিকার আমরা এখনো পায়নি।
এ বিষয়ে লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন, নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ৮২ জনকে ১০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কতৃক নদী ভাঙ্গন রোধে ৭০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। এছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্যকে নিয়ে আমরা কয়েকবার ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় পরিদর্শন করেছি।
এ ব্যাপারে নড়াইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল কুমার সেন জানান, ২০২০/২১ অর্থ বছরে নদী ভাঙ্গন রোধে ৭০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। কিন্তু সেটিও এখন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে ওই এলাকার ভাঙ্গনের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে পুনরায় নদী ভাঙ্গন রোধে কাজ করা হবে।
এ ব্যাপারে নড়াইলের জেলা প্রশাসকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, নদী ভাঙ্গনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদেরকে পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন।
এ ব্যাপারে নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মূর্তজার সহকারী জামিল আহমেদ সানি জানান, ওই এলাকার নদী ভাঙ্গন রোধে কাজ করার কথা থাকলেও করোনা মহামারির কারণে সেটি সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে এমপি স্যার মন্ত্রণালয়ে সব সময় যোগাযোগ রাখছেন। বরাদ্দ পেলেই দ্রুত ভাঙ্গন রোধে কাজ করা হবে।
খুলনা গেজেট/এনএম