পণ্য আমাদিন কম হলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দরে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থ বছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরে (জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত) ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৫৫২ মেট্রিক টন পণ্য কম আমদানি হলেও রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৬ কোটি ৩৭ লক্ষ ৪৩ হাজার ৩৫৪ টাকা। যার প্রবৃদ্ধির হার ৩৩.৯৮ শতাংশ।
দেশের তৃতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর হিসাবে ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য পরিমান রাজস্ব আহরণ করে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রেখে চলেছে এই বন্দর। এই শুল্ক বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার থেকে দেড় হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী বাংলাদেশ ও ভারতে আসা-যাওয়া করেন। বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেনাপোল স্থল বন্দরের পরেই এই বন্দরের অবস্থান। এই বন্দও দিয়ে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চারশত ভারতীয় ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্য, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও শিল্পজাত পণ্য আমদানি হয়ে থাকে।
এছাড়াও প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুইশত ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানী হয়ে থাকে। এই বন্দরে সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি ও অন্যান্য পরিসেবা কোনরূপ প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই আন্তরিকতার সাথে ও সৌহার্দ্যপূর্নভাবে সম্পন্ন হয়ে থাকে।
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব শাখা থেকে জানা গেছে, বিগত ২০২২-২৩ অর্থবছরে (জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত) মোট ২৭.৬২৬ টি পণ্যবাহী গাড়িতে ১০ লক্ষ ৯ হাজার ৩৫৪ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়। যার শুল্ককরাদির পরিমাণ ছিল ১৯৫ কোটি ৩২ লক্ষ ৫৬ হাজার ৮৪৪ টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে (জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত) ২৫ হাজার ৩২ টি পণ্যবাহী গাড়িতে ৮ লক্ষ ৬০ হাজার ৮০২ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়। যার শুল্ককরাদির পরিমান ২৬১ কোটি ৭০ লক্ষ ১৯৮ টাকা। গত অর্থ বছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরে (জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত) ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৫৫২ মেট্রিক টন পণ্য কম আমদানি হলেও রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৬ কোটি ৩৭ লক্ষ ৪৩ হাজার ৩৫৪ টাকা। যার প্রবৃদ্ধির হার ৩৩.৯৮ শতাংশ। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জুলাই-২২ মাস থেকে অক্টোবর-২২ মাস পর্যন্ত রপ্তানিকৃত পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যা ছিল ৭ হাজার৬৬৭ টি। কিন্তু ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের একই সময়ে গাড়ির সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ২৯৩ টি। এসময় পণ্য রপ্তানি হয়েছে যথাক্রমে ১ লক্ষ ১৪ হাজার ৫৭০ মেট্রিক টন ও ৮৯ হাজার ৮৫৬ মেট্রিক টন।
ভোমরা স্থল শুল্ক স্টেশনে কর্মরত কাস্টমস কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের সুব্যবস্থাপনা ও জিরো টলারেন্স নীতির কারণে বিগত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের ১লা জুলাই থেকে ৩১ অক্টোবর চার মাসের তুলনায় বর্তমান অর্থবছরের ১লা জুলাই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত আমদানীর পরিমান কম হওয়া সত্ত্বেও ক্রমবর্ধমান হারে রাজস্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভোমরার একজন ব্যবসায়ি জানান, ভারতের কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের সঙ্গে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দরের দূরত্ব বাংলাদেশের যে কোনো বন্দর অপেক্ষা কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে সুবিধাবোধ করেন।
বর্তমানে বন্দরটিতে আমদানি ও রপ্তানি কাজে জড়িত রয়েছেন পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ী। ফলে ক্রমান্বয়ে এই বন্দরে সরকারি রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল আমদানি ও রপ্তানিতে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের লক্ষ্যে অপপ্রচার চালিয়ে প্রগতিশীল স্থল শুল্ক বন্দরকে অস্থিতিশীল করার পায়তারা করছে। এছাড়াও মৌসুমী ফল বা তাজা ফল আমদানিতে ওই মহলটি অনৈতিক সুবিধা আদায়ের পায়তারা করে যাচ্ছেন, যা সরকারী রাজস্ব আহরণে প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে জাতীয় স্বার্থকে বিঘ্নিত করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা মাত্র। এ পরিস্থিতিতে ভোমরা স্থল বন্দরের রাজস্ব আদায়ে সরকারের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এবং রাজস্ব আদায়ের চলমান গতিশীলতা অব্যহত রাখার স্বার্থে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বরত কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার মো. এনামুল হক জানান, চলতি অর্থ বছরের প্রথম চার মাসে পণ্য আমদানি কম হলেও রাজস্ব আদায় বেড়েছে। প্রথম চার মাসে রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হার ৩৪ শতাংশ। আর এটা সম্ভব হয়েছে ব্যবসায়িদের সেবারমান বৃদ্ধির পাশাপাশি এখানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে। পণ্য খালাসে একদিন দেরী হলে ব্যবসায়িদের ড্যামারেজ যেতে পারে এটা মাথায় রেখে আমরা দ্রুত পণ্য খালাসের ব্যবস্থা করে থাকি। তিনি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভোমর শুল্ক ষ্টেশনের ব্যবসায়িদের সেবার মান আরো বাড়াতে সকলের সগযোগিতা কামনা করেন। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এই বন্দরে রাজস্ব আদায় আরো বাড়বে বলে জানান এই কাস্টমস কর্মকর্তা।
খুলনা গেজেট/ টিএ