কার্যাদেশ অনুযায়ি খুলনাবাসির প্রত্যাশিত ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ চলতি বছরের ২৫ নভেম্বর সম্পন্ন হওয়ার কথা। বাকী রয়েছে মাত্র ৩ মাস। কাজের অগ্রগতি ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তে ২৩ এবং ২৪ নং এবং শহরাংশে রেলিগেটে ১৩ নং পিলারের কাজ চলমান। কাজের এই ধীরগতির জন্য সেতুর তদারকি সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মাসুদ বৈশ্বিক মহামারী করোনাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারীর কারণে সারা দেশে প্রকল্পের কাজ কিছুটা স্থির ছিলো।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ভৈরব সেতু প্রকল্পের কাজের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আমরা ১৮ মাস অর্থাৎ (দেড় বছর) সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছি। আশা করি যথাসময়ে এবং খুব দ্রুতই কাজটা এগিয়ে যাবে এবং এ সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারবো। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা কর্ম পরিকল্পা তৈরী করছি। তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে আমরা সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তের জমি বুঝে পেয়েছি। রেলিগেট প্রান্তেও আমরা কিছু জমি বুঝে পেয়েছি সেখানে স্থায়ী পাইপ স্টিল কেসিং ড্রাইভ (পাইলের কভার) এর কাজ শুরু হয়েছে।
সেতুর শহরাংশে রেলিগেট নদীর তীরবর্তী ১৪ নং পিলারের ১ নং স্থায়ী পাইপ স্টিল কেসিং ড্রাইভ (পাইলের কভার) এর কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর তিনি সাংবাদিকের এ সব কথা বলেন।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খুলনা সওজ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ হাবিবুর রহমান, সেতুর কনসালটেন্ট টিমের টিম লিডার প্রকৌশলী রইসউদ্দিন, কনসালটেন্ট প্রকৌশলী কমলেন্দু মজুমদার, টিমের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার আঃ আজিজ, ভৈরব সেতুর প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী এস এম নাজমুল, প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মাহাবুবুর রহমান, মোঃ মিজানুর রহমান,
একইদিন সকালে জেলা প্রশাসকের পক্ষে কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মোঃ আল মামুন ভৈরব সেতুর দিঘলিয়া প্রান্তের দেবনগর এবং দিঘলিয়া মৌজার ১০ দশমিক ৩৭৪ একর অধিগ্রহণকৃত ভূমির কাজপত্র খুলনা সওজ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমানের হাতে হস্তান্তর করেন। উক্ত ভূমি হস্তান্তরের মধ্যদিয়ে ঝিমিয়ে পড়া ভৈরব সেতুর কাজে দ্রুত গতি আসবে বলে খুলনাবাসীর প্রত্যাশা। একই রকম প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন কনসালটেন্ট টিমের টিম লিডার প্রকৌশলী রইস উদ্দিন।
শনিবার (৩ আগস্ট) সওজ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর উপস্থিতি এবং তার নির্দেশনা মোতাবেক ২ নং পাইপ স্টিল কেসিং ড্রাইভ করা হয়। এ সময় সেতুর সেতুর কনসালটেন্ট টিমের সদস্যও উপস্থিত ছিলেন।
ভৈরর সেতু প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বরত কর্মকর্তা খুলনা সওজ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ হাবিবুর রহমান খুলনা গেজেটকে বলেন, এ রকম ১০টি পাইপ স্টিল কেসিং ড্রাইভ সম্পন্ন করার পর উক্ত পাইলের ক্যাপ ঢালাই কাজ করা হবে। ক্যাপ ঢালাইয়ের উপর পিলার স্থাপন করা হবে। প্রত্যেকটি পাইপ স্টিল কেসিং এর গভীরতা ১০ মিটার অর্থাৎ ৩৬ ফুট।
২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভৈরব সেতু নামে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। এরপর ২০২০ সালের ২৭ জুলাই খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ভৈরব নদীর উপর সেতু নির্মাণ কাজের দরপত্র আহবান করেন। প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। এর ১৩ দিন পর ২৬ নভেম্বর উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য হবে ১ দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬’শ ১৭ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি টাকা। বাকি টাকা সেতু সংক্রান্ত অন্যান্য কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে। ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বর ভৈরব সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা।