খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৮ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১২১৮
  বিএনপি কর্মী খুনের মামলায় সাবের হোসেন ৫ দিনের রিমান্ডে
  সামিট গ্রুপের আজিজসহ পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা, ফের ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজে ধীরগতি

একরামুল হোসেন লিপু

ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় দীর্ঘ প্রায় দুই মাস ধরে ধীমে তালে চলছে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ। ফলে খুলনাবাসীর বহুকাঙ্খিত সেতুটি নির্মাণে আবারও ধীরগতি দেখা দিয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভৈরব সেতুর কাজ শেষ হওয়া নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তবে দ্রুত জমিগ্রহণ কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা। সোমবার (২০ ডিসেম্বর) অধিগ্রহণকৃত ভূমির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য লে-আউটকৃত ভৈরব সেতুর উভয় পার্শ্বের জমি সরজমিনে পরিদর্শন করেছে পৃথক ২টি ​প্রতিনিধি দল।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ মারুফুল আলম খুলনা গেজেটকে বলেন, ‌‌’আগামী দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে ভৈরব সেতুর জমি অধিগ্রহণের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবো বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি’।

​এদিকে ভৈরব সেতু নির্মাণ কাজে দ্রুত গতি আনায়নের লক্ষ্যে একই দিন দিঘলিয়ার দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাব মাঠে সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষে খুলনা সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মাসুদ ভৈরব সেতুর কনসালটেন্ট টিম লিডার এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন।

সওজ’র সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভৈরব সেতু নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ পায়। প্রথম অবস্থায় ছাড়পত্র সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সেতু বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা পাঠাতে বিলম্ব করে। পরবর্তীতে সকল দপ্তরের ছাড়পত্র (এনওসি) পাওয়ার পর চলতি বছরের ২৪ মে সেতুর পূর্ব সাইট দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাবের সামনে সরকারি খাস জমিতে ( ঈদগাহের মধ্যে) সেতুর ২৫ নং পিলারের টেস্ট পাইলিংয়ের কাজের মধ্য দিয়ে ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। এরপর একই স্থানে ২৪ নং পিলারের টেস্ট পাইলিং এর কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে সেতুর পূর্ব সাইট ভৈরব নদীর তীর সংলগ্ন সরকারি খাস জমির উপর ১৪ নং পিলারের টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর জমি অধিগ্রহণ না হওয়ার কারণে থমকে যায় ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানারকম বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।

ভৈরব সেতুর জন্য দিঘলিয়া, মহেশ্বরপাশা এবং দেবনগর মৌজার মোট ১৭ দশমিক ৪৯ একর (৭ দশমিক ০৮ হেক্টর) ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন। এরমধ্যে সেতুর পূর্ব সাইট অর্থাৎ নগরীর কুলি বাগান থেকে রেলিগেট পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের ৭ দশমিক ১১৩৬ একর (২ দশমিক ৮৮ হেক্টর) ভূমি রয়েছে। সেতুর উভয় পাশের উক্ত জমি অধিগ্রহণের জন্য খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর কার্যালয় থেকে গত মাসে ভূমি অধিগ্রহণের এর কাজ দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করার জন্য ২টি সংশোধিত প্রস্তাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সার্ভেয়ার টিম সেতুর উভয় পাশের লেআউট কৃত জমির পরিমাপ শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রিপোর্ট পেশ করে।

সোমবার (২০ ডিসেম্বর) অধিগ্রহণকৃত ভূমির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) মোঃ মারুফুল আলম এবং সেতু বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মাসুদের নেতৃত্ব পৃথক ২টি প্রতিনিধিদল যৌথভাবে লে-আউটকৃত ভৈরব সেতুর উভয় পার্শ্বের জমি সরজমিনে পরিদর্শন করেন। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহি অফিসার মোঃ মাহবুবুল আলম, ভৈরব সেতুর সুপারভেশন কনসালটেন্ট কমলেন্দু মজুমদার, সেতুর কনসালটেন্ট RE BE টিম লিডার রইসউদ্দিন মির্জা ও বেনজীর আহন্মেদ, সওজ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ রাশিদুর রেজা, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এম এ রিয়াজ কচি ও মোঃ হাফিজুর রহমান, ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লিঃ (করিম গ্রুপ) এর ডিপিএম ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মিজানুর রহমান, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সার্বেয়ার মোঃ মোতালেব হোসেন, সওজ অধিদপ্তরের সার্ভেয়ার মোঃ নাইমুল ইসলাম প্রমুখ।

জানা যায়, ভৈরব সেতুর পিলার বসবে মোট ৩০ টি। এরমধ্যে নদীর পশ্চিমপাশ অর্থাৎ নগরীর কুলিবাগান থেকে রেলিগেট ফেরিঘাট সংলগ্ন নদীর তীর পর্যন্ত ১ থেকে ১৪ নং পিলার বসবে। এই অংশের প্রথম পিলারটি বসবে নাগরীর কুলিবাগান আকাঙ্খা পাট গোডাউনের কর্ণারে। ৫ এবং ৬ নং পিলারের মাঝখান দিয়ে রেললাইন ক্রস করবে। এরপর ৭ এবং ৮ নং পিলার বসবে। ৯ থেকে ১৩ নং এই ৫ টি পিলার বসবে নগরীর রেলিগেট ঢাকা ট্রেডিং হাউজ লিঃ এর অভ্যন্তরে। এর ফলে রপ্তানিকারক এ প্রতিষ্ঠানটি ভাঙ্গা পড়বে। ১৭ থেকে ২৮ নং পিলার বসবে ভৈরব নদীর পূর্বপাশ অর্থাৎ দিঘলিয়া উপজেলার নগরঘাট বানিয়াঘাট ফেরী সংলগ্ন মধ্যবর্তী স্থান থেকে উপজেলা সদরের কুকুরমারা পর্যন্ত।

পশ্চিম পাশে নদীর পাড় থেকে ৪২ মিটার ভেতরে ১৫ নং পিলার এবং পূর্ব পাশে নদীর পাড় থেকে ১৮ মিটার ভেতরে ১৬ নং পিলার বসবে। এছাড়া সেতুর উভয় দিকে সেখান থেকে সেতুর স্লোপ শুরু হবে সেখানে A-1 এবং A-2 দুটি এবাটমেন্ট বসবে। নদীর ভেতর কোন পিলার বসবে না। ১৫ এবং ১৬ নং পিলারের উপর ১০০ মিটার স্টিলের সিটে বসবে নদীর উপর মূল সেতুটি। নেভিগেশনের জন্য যাতে সেতুর নীচ দিয়ে অনায়াসে কার্গো এবং জাহাজ চলাচল করতে পারে সেজন্য মূল ব্রিজের স্নাব বটম জোয়ারের পানি থেকে ৬০ ফুট উঁচু হবে।

২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ‘ভৈরব সেতু’ নামে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। ভৈরব সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৭ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ২ বছর। অর্থাৎ ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বরের মধ্যে সেতু নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!