“শুধু বয়স্ক ভাতা বাবদ সামান্য কয়ডা টাহা পাই। তাই দিয়ে কি আর আমার সংসার চলে ? তাই বাধ্য হয়ে হাত পাততে নামছি।” এমনভাবেই খুলনা রেলস্টেশনে কথাগুলো বলছিলেন ১০৬ বছরের বৃদ্ধা ফজিলা খাতুন। তার স্বামী আঃ হামিদ সরদার ১০ বছর আগে মারা যান, এরপর থেকেই তিনি পথে পথে ভিক্ষা করে বেড়াচ্ছেন।
শুধু ফজিলা খাতুন নয়, এমনিভাবে ভিক্ষা করছে ডালমিল মোড়ের আলতাফ হোসেনের স্ত্রী আশি উর্দ্ধ বয়স্কের ফাতিমা বেগম। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, “আগে খুলনা রেলওয়ে স্টেশন বস্তিতে থাকতাম। সরকার উচ্ছেদ করে দিলে আমরা ডালমিল মোড়ে বাসা নিয়ে থাকি।”
দোলখোলা মতলেবের মোড়ে ২৪ নং ওয়ার্ডের ভোটার হাসিনা বেগম। আল হেরা জামে মসজিদের সামনে তিনি জানান, ভোটার কার্ড থাকা সত্বেও এখনো পর্যন্ত কোন সহযোগিতা পাননি তিনি।
কাষ্টমসঘাটের ওপার থেকে ভিক্ষা করতে আসেন মৃত মহাসিন শেখের স্ত্রী মাজেদা আলী। তিনি জানান, “ওপারে কেউ খুব একটা ভিক্ষা টিক্ষা দেয় না, তাই শহরে এসে ভিক্ষা করি।”
খুলনা জেলা প্রশাসনের একটি বিশেষ উদ্যোগে ২০১৭ সালে ভিক্ষুকমুক্ত কর্মসুচি বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়ে বেশ সুনাম অর্জন করে তৎকালীন প্রশাসন। সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা জেলা প্রশাসনের ভিক্ষুক পুনর্বাসন কর্মসূচিকে স্বাগত জানালেও আগের মতই রয়েছে ভিক্ষুকদের আনাগোনা।
‘ভিক্ষাবৃত্তিকে না বলুন, ভিক্ষুকমুক্ত খুলনা গড়ুন’ কর্মসূচির আওতায় খুলনা মহানগরীর তালিকাভুক্ত ১ হাজার ১৫৯ জন ভিক্ষুককে নগদ অর্থসহ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী প্রদান করা হয়েছিল।
জেলা প্রশাসনের সূত্র জানায়, খুলনা জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার লক্ষ্যে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহায়তায় জেলা প্রশাসন কাজ সম্পন্ন করছে। তারা ১ হাজার ১৫৯ জন ভিক্ষুককে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী ও রেশন প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ছিল সেলাই মেশিন, ফ্লাক্স, পানের দোকানসহ বিভিন্ন সামগ্রী। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভিক্ষুকদের হাতে এসব সামগ্রী তুলে দেয়া হয়।
সরেজমিনে খুলনার নিউমার্কেট, ময়লাপোতা, পিটিআই মোড় , রয়েলের মোড়, সাতরাস্তা মোড় সহ একাধিক স্পটের মসজিদ ও কবরস্থানের সামনে ভিক্ষুকদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে মসজিদগুলোর প্রাঙ্গন ছিল ভিক্ষুকে সয়লাব। তাদের মধ্যে জেলা প্রশাসনের সহায়তা গ্রহণকারীরাও রয়েছে। এরা চার বছর পূর্বের জেলা প্রশাসনের সাহায্যকে যৎসামান্য দাবি করেছে। বাকিরা কোন প্রকার সহায়তা পায়নি বলেও জানান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চার বছর পূর্বের এই কর্মসূচির কোন ফলোআপ না থাকায় তারা ফের ভিক্ষাবৃত্তিতে ফিরছে। এদের সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে শহরের বাইরে থেকে আসা নতুন ভিক্ষুক।
খুলনা গেজেট/এনএম