করোনা ভাইরাসে ভারত যখন বিপর্যস্ত, তখন উদারতা দেখালেন একদল মুসলিম যুবক। বিহারের গয়া জেলায় তারা মুসলিম-হিন্দু ঐক্যের এক নজির স্থাপন করলেন।
ধারনা করা হয়, সেখানে করোনায় মারা যান ৫৮ বছর বয়সী এক হিন্দু নারী। তার মৃতদেহ এসব মুসলিম যুবক বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন- এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এই ভিডিওটি ইমামগঞ্জ পুলিশ স্টেশনের অধীনে তেতারিয়া গ্রামের। সেখানকার প্রভাবতী দেবী (৫৮) নামে একজন নারীকে ভর্তি করা হয়েছিল একটি বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। চিকিৎসকরা মনে করেন, তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন।
ইমামগঞ্জের সমাজকর্মী মোহাম্মদ শারিক বলেন, চিকিৎসায় যখনই ওই নারীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে, তখন তার অভিভাবকদেরকে ডাক্তার অনুরোধ করেন, তার করোনা পরীক্ষা করাতে। দ্রুততার সঙ্গে তার পরীক্ষা করানো হলে তাতে নেগেটিভ ধরা পড়ে। কিন্তু চিকিৎসা দেয়ার সময় তিনি মারা যান। পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ, তিনি করোনায় মারা গেছেন। তাই তারা কেউই প্রভাবতী দেবীর মৃতদেহ স্পর্শ করতে রাজি হলেন না। হাসপাতাল প্রশাসন তার মৃতদেহ একটি গাড়িতে উঠিয়ে দেয়। কিন্তু প্রভাবতী দেবীর স্বামী বা দুই ছেলের কেউই তাকে নিজেদের সদস্য দাবি করে এগিয়ে যাননি। শনিবার ওই গাড়িতে দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পড়ে থাকে মৃতদেহ।
মোহাম্মদ শারিক বলেন, এ বিষয়টি জানতে পেরে আমরা সেখানে যাই এবং তাদেরকে আশ্বস্ত করি যে, মৃতদেহের সৎকারটা আমরাই করবো। এ সময়ও তারা দূরত্বে অবস্থান করছিলেন। এরই মধ্যে আমরা ওই যান থেকে মৃতদেহ নামিয়ে আনি। আমাদের মুসলিম যুবকদের একটি গ্রুপ কিছু বাঁশ ব্যবহার করে লাশ নেয়ার মতো একটি ব্যবস্থা করেন। তাতে করে আমরা লাশ নিয়ে যাই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পাদনের স্থানে। এ সময় তার পরিবারের সদস্যরা ভুল বুঝতে পারেন। তারা এসে আমাদের সঙ্গে বাঁশের তৈরি ওই বিয়ারে কাঁধ লাগান।
মৃত প্রভাবতী দেবীর এক ছেলে মিডিয়ার কাছে বলেছেন, আমার মায়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করতে সহায়তা করেছেন মোহাম্মদ রফিক, মোহাম্মদ শারিক, মোহাম্মদ কালামি, মোহাম্মদ বারিক, মোহাম্মদ লাদ্দান এবং মুসলিমদের একদল যুবক। তারা মুসলিম ও হিন্দুদের ঐক্যের এক চমৎকার উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তাদের কাছে আমাদের পুরো পরিবার কৃতজ্ঞ।
খুলনা গেজেট/ এস আই