ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে খুলনা জেলার উপকূলীয় উপজেলা কয়রা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। এখানকার অনেক এলাকায় ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধ এখনো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। জোয়ার-ভাটা খেলছে সেখানে। খাবার পানির উৎস বন্ধ। রান্না বান্না তো দূরের কথা, ঘরের চৌকির ওপর থাকাও দুরূহ ব্যাপার। ফলে রোগ বালাই ছড়িয়ে পড়াসহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে সেখানে।
পূর্ব মঠবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রাণ কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, সেখানে আশ্রয় নিয়েছে ৫০/৫৫ পরিবার। তবে তাদের খাওয়ার সমস্যাতো রয়েছেই, তার থেকেও বড় সমস্যা খাবার পানির।
সদানন্দ সরকার আশ্রয় নিয়েছেন মঠবাড়ি শান্তিময়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তিনি জানান, ২৫টি পরিবার সেখানে কোন সহযোগিতা পাননি, মেডিকেল টিমও নাই সেখানে। একই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দা রজত আলীরও।
পশ্চিম দেয়াড়া সাইক্লোন শেল্টারে তিনটি গ্রামের ৭৫ থেকে ৮০টি পরিবার রয়েছে। এখানে অধিকাংশের এলার্জির সমস্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়া কিছু লোকের ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব ও মাথাব্যথা দেখা দিয়েছে। জোয়ার আসলে এ এলাকার জনগণের বাড়িতে ৪/৫ ফিট পানি থাকছে। এখান চরম খাদ্য সংকট রয়েছে।
পশ্চিম দেয়াড়া একতা সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সাংবাদিক তরিকুল ইসলাম বলেন, এখানে অবস্থানকারীদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহায়তায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে দু’টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে। এছাড়া সংগঠনের সদস্যদের উদ্যোগে জীবানুনাশক স্প্রে করা হয়েছে।
সাংবাদিক তরিকুল আরও জানান, এখানে ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ এখনো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। ফলে ভাটার সময় হাটু পানি থাকলেও জোয়ারে তা কোমর ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে ঘরের চৌকির ওপরও থাকা অনেক সময় দুরূহ হয়ে পড়ছে। যে কারণে অধিকাংশ বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাগর হোসেন সৈকত বলেন, আমাদের ১১৭ টা আশ্রয় কেন্দ্রে ১৫ শতের মত লোক আছে। গত দিন আমরা ৩ শত পরিবারকে শুকনা খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছি| আজও প্রতিটা আশ্রয় কেন্দ্রে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সুদীপ বালা বলেন, প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে পর্যাপ্ত ঔষধ পোঁছে দেওয়া হয়েছে। আর আমাদের ৭ টা মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে কল করলে তারা তাৎক্ষণিক পৌঁছে গিয়ে সেবা দিবে। পানি বহিত সকল প্রকার রোগের ঔষধ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ডায়রিয়া রুগি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়নি, তবে কেউ আক্রান্ত হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে হয়তো আসতে পারছে না।
খুলনা গেজেট/এমএম