খুলনার কয়রায় ভোক্তা পর্যায়ে সারের দাম বৃদ্ধি ও বিএসআইসি ডিলার কর্তৃক খুচরা বিক্রেতাদের থেকে দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে খুলনা গেজেট-এ প্রতিবেদন প্রকাশের কয়েক ঘন্টার মধ্যে কড়া মনিটরিংয়ে মাঠে নেমেছেন প্রশাসন। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্নস্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস।
এসময় কয়রা উপজেলার সদর, মহারাজপুর ইউনিয়নের হায়াতখালি বাজার, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের গিলাবাড়ি বাজার ও বাগালি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ভোক্তা অধিকার আইনের ২০০৯ এর ৪০ ধারা মোতাবেক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। ভোক্তা পর্যায়ে সারের দাম বেশি রাখায় উপজেলার সদর ইউনিয়নের সততা এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর গোলাম রসুলকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের গিলাবাড়ী বাজারের তৌফিক এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর মোদাস্সেদ হোসেন রাজাকে ৫ হাজার ৬শ` টাকা জরিমানা করা হয়।
এ বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান বলেন, ভোক্তা পর্যায়ে সারের মূল্য নিয়ন্ত্রণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মনিটরিং করে দুই সার ব্যাবসায়ীকে ১০ হাজার ৬ শত টাকা জরিমান করা হয়। সারের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আমাদের মনিটরিং অব্যাহত থাকবে।
আরও পড়ুন: কয়রায় সরকার নির্ধারিত দরে সার পাচ্ছে না কৃষকরা
এর আগে সরেজমিন যেয়ে মহারাজপুর ইউনিয়নের বিএসআইসি ডিলাররে বিরুদ্ধে একাধিক খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ পাওয়া যায়। তারা জানান, সরকার নির্ধারিত খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি টাকায় ডিলার থেকে তাদের সার কিনতে হচ্ছে। এসব তথ্য ফাঁস করলে বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হয়।
তারা আরও জানান, “ডিলাররা আমাদের কাছ থেকে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ইউরিয়া ১১০০/ ১১২০ টাকা নিচ্ছে। ডিলার পয়েন্ট থেকে নিজেদের দোকানে আনতে ২০/৩০ ভ্যান ভাড়া লাগে। এরপরে অপচয়, ঘরভাড়াসহ আনুষঙ্গিক কিছু খরচ রয়েছে। সরকার নির্ধারিত দর ২২ টাকায় কেজি বিক্রি করতে গেলে প্রতি বস্তায় ৫০/৬০ টাকা পকেট থেকে যাবে। এছাড়া ডিলাররা খুচরা বিক্রেতাদের কোন সঠিক বিক্রি রশিদ দেন না। যেটা দেন তার চেয়ে তাদেরকে বেশি দাম দিয়ে সার সংগ্রহ করতে হয়। তারা বলেন, এসব বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তারা সবই জানেন। তবে কোন সমাধান করেন না। আমরা প্রতিবাদ করলে উল্টো হয়রানির শিকার হই। আমরা নিরুপায় হয়ে পেটের দায়ে অন্যায়কে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি।”
১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে মহারাজপুর ইউনিয়নের অন্তাবুনিয়া বাজারস্থ গাজী স্টোরে যেয়ে দেখা যায়, সেখানে কোন টিএসপি(মরক্কো) নেই। ইউরিয়া বিক্রি করছেন ২৪ টাকা কেজি ও টিএসপি (টিউনেসিয়া) বিক্রি করছেন ৩৩ টাকা কেজি। এক বস্তা ইউরিয়া ও এক বস্তা টিএসপি (মরক্কো) কিনতে চাইলে তিনি বলেন, ইউরিয়া একবস্তা দেয়া যাবে না, কয়েক কেজি নিতে পারেন। আর টিএসপি নিতে পারেন তবে ১৬৫০ টাকা বস্তা পড়বে। সরকারি দরের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউনিয়ন ডিলার আমাদের থেকে ইউরিয়া ১১২০ টাকা ও টিএসপি (টিউনেসিয়া) ১৫২৫ টাকা বস্তা নিচ্ছে। এরপরে প্রতিবস্তা নিজ দোকান পর্যন্ত আনতে ২০ টাকা খরচ হয়। ঘরভাড়াসহ অন্যান্য খরচতো রয়েছেই। তারপরে আমাদের সংসার চালাতে হয়। তবে ডিলার থেকে ক্রয় রশিদ দেখাতে বললে তিনি বলেন, আমাদের কোন ক্রয় রশিদ দেয়া হয় না।
বিষয়টি ঘটনাস্থালে দাঁড়িয়ে উপজেলা কৃষি অফিসারকে অবহিত করা হয়। তখন ওই খুচরা বিক্রেতাও প্রতিবেদকের মুঠোফোনের মাধ্যমে কৃষি অফিসারকে ডিলারের বেশি দাম নেওয়ার বিষয়টি জানান।
৩ দিন অতিবাহিত হলেও ওই ডিলার কিংবা খুচরা বিক্রেতার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে ওই দিন কৃষি কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান জানান, ওই খুচরা বিক্রেতাকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি লিখিত অভিযোগ দিতে অস্বীকার করেছেন। এজন্য আমরা কিছু করতে পারছি না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খুলনার উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বেশি দরে সার বিক্রির কোন সুযোগ নেই। খুচরা বিক্রেতারা বিসিআইসি ডিলারদের থেকে প্রতি বস্তা ইউরিয়া ও টিএসপি কিনবেন ১০৮০ টাকা দিয়ে। আর কৃষকদের কাছে বিক্রি করবেন ১১শ’ টাকায়।
সরেজমিন কৃষি অফিসারকে অবহিত করার পরেও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আপনার কাছে রেকর্ড থাকলে কৃষি অফিসারকে দেন, তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনবেন। আমি কৃষি অফিসারকে বলে দিচ্ছি। তবে কিছুক্ষণ পরে কল দিয়ে বলেন, আমি কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলেছি। তবে উনারা বলেছেন, লিখিত অভিযোগ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় আনা সম্ভব নয়। আপনি একটা লিখিত অভিযোগ করেন।
খুলনা গেজেট/ টি আই