খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৯ মে, ২০২৪

Breaking News

  হেলিকপ্টার দূর্ঘটনায় নিঁখোজ ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম রাইসি
  বাজারে থাকা এসএমসি প্লাসের সব ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস প্রত্যাহারের নির্দেশ, বাজারজাতকারীকে ১৬ লাক টাকা জরিমানা
  ৭ ব্যক্তিকে জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

বিড়াল যখন বিজ্ঞানী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বিড়াল পোষার শখ অনেকেরই রয়েছে। যদি প্রশ্ন করা হয় ঘরে আপনার বিড়াল কি কাজে লাগে? অনেকেই হেসে বলবেন- ইঁদুর তাড়াতে কাজে লাগে৷ বিড়াল ইঁদুর তাড়ায় এটা পুরনো কথা। তবে বিজ্ঞানী বিড়াল বা বিড়াল গবেষণা করছে এমন কথা আপনার না-শোনারই কথা!

ঘটনাটি ১৯৭৫ সালের৷ পদার্থ ও জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জ্যাক এইচ হেথারিংটন অধ্যাপনার কাজে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। এর পাশাপাশি গবেষণা করছিলেন তাপমাত্রায় পরমাণুর কোনো এক জটিল বিষয় নিয়ে। রীতিমতো গবেষণা শেষ করে ফল কর্তৃপক্ষকে জমা দেন হেথারিংটন। তার গবেষণার ফল পর্যবেক্ষণ করেন অন্যান্য বিজ্ঞানী ও গবেষকরা। কিন্তু এই গবেষণা মন জয় করতে পারেনি ফিজিক্যাল রিভিউ জার্নালের বিজ্ঞানীদের।

সমস্যাটা দাঁড়ায়, গবেষণাপত্রে ‘আমি’র বদলে হেথারিংটন লিখেছেন ‘আমরা’। অথচ নাম উল্লেখ রয়েছে শুধু হেথারিংটনের। তাহলে অন্যজন কে?

গবেষণা প্রবন্ধে সর্বনামের ভুল তো আর মানতে পারেন না কেউ। হেথারিংটনকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হলো, এই গবেষণা নতুন করে লিখতে হবে। অথবা আমরা না লিখে একজন গবেষকের নাম দিতে হবে। তা না হলে অন্যজন কে তার নামও উল্লেখ করতে হবে।

রাত-দিন পরিশ্রম করে নিজের গবেষণা অন্যের নামে কে প্রকাশ করতে চায়? হেথারিংটনও চাননি। কিন্তু নতুন করে লেখাও কষ্টসাধ্য কাজ। বর্তমান সময়ের মতো তখন তো আর স্মার্টফোন কিংবা ল্যাপটপ ছিলো না। তখন ধীরে ধীরে লিখতে হতো টাইপরাইটারে। এ নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন হেথারিংটন। ভাবতে লাগলেন কি করবেন। অনেক ভাবনার পর হেথারিংটন স্থির করলেন গবেষণা পত্রে তিনি দ্বিতীয় গবেষকের নাম সংযুক্ত করবেন। তাই সহকারী হিসেবে নাম জুড়ে দিলেন চেস্টারের। ভাবছেন এই বিজ্ঞানী আবার কে? এই চেস্টার হলো তারই পোষা সিয়ামিজ বিড়াল।

কিন্তু একটি গবেষণাপত্রে তো আর শুধু ‘চেস্টার’ নাম দেওয়া ভালো দেখায় না। তাই চেস্টারের নতুন নাম রাখা হলো এফ ডি সি উইলার্ড। চেস্টারের পুরো নামের ব্যাখ্যা হলো ‘এফ’ ও ‘ডি’র পূর্ণরূপ হলো ফেলিস ডমেস্টিকাস (বিড়ালের বৈজ্ঞানিক নাম)। আর ‘সি’ হলো চেস্টার এবং উইলার্ড ছিল চেস্টারের বাবা। এভাবেই দ্বিতীয় গবেষক হিসেবে চেস্টারের নাম দিয়ে গবেষণা জমা দিলেন হেথারিংটন।

গবেষণাপত্রটি গ্রহণ করে ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসে প্রকাশ করা হয় ফিজিক্যাল রিভিউ। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে দারুণ এই গবেষণার জন্য প্রশংসিত হন উইলার্ড ও হেথারিংটন। এবার চেস্টারকে ইউনিভার্সিটিতে পড়ানোর জন্য মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞানের চেয়ারম্যান ট্রুম্যান উডরাফ একটা চিঠি পাঠালেন। এবার বাঁধলো গণ্ডগোল।

এখানেই শেষ নয়, উইলার্ডকে দেখার জন্য বায়না ধরলেন হেথারিংটনের এক সহকর্মী। এবার আর লুকোনো গেল না। দেশের সবাই জেনে গেল উইলার্ড একটি বিড়াল। ১৯৭৮ সালে এই ঘটনা খুব আলোচিত হয়।

আরেকবার হলো কি! ফ্রান্সে বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে গবেষক এফ ডি সি উইলার্ডের ডাক এলো। প্রয়োজন স্বাক্ষরের। কি করা যায় এবার? হেথারিংটন চেস্টারের এক পায়ে কালি লাগিয়ে বসিয়ে দিলেন ছাপ। মানুষের হাতের লেখা স্বাক্ষরের পাশে বিড়ালের পায়ের ছাপ দেখে এবার বিশ্ববাসীও বুঝে গেল আসল ঘটনা।

এছাড়াও আরও একবার গবেষণার সুযোগ পেয়েছিল চেস্টার। ১৯৮০ সালে মার্কিন এবং ফরাসীরা মিলে একটি গবেষণা করছিল। সেই দলে ছিলেন হেথারিংটন৷ কিন্তু গবেষণা শেষে তার ফল নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল না কেউই। তাই বুদ্ধি করে হেথারিংটন সবাইকে বলেছিল, এই গবেষণায় যেহেতু আমরা সন্তুষ্ট নই, তারচেয়ে চেস্টারের নাম জুড়ে দেই। ভুল হলে কেউ আর আমাদের ধরতে পারবে না। এই প্রস্তাব মেনে নিয়ে সবাই গবেষকের জায়গায় লিখেছিল অধ্যাপক এফ ডি সি উইলার্ড। এভাবে বিশ্বের প্রথম এবং একমাত্র প্রাণি হিসেবে গবেষকের খাতায় নাম ওঠে একটি বিড়ালের।

১৯৮২ সালে প্রায় ১৪ বছর বয়সে মারা যায় চেস্টার। তবে হেথারিংটন বর্তমানে অবসরে রয়েছেন।

 

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!