খুলনায় বিস্ফোরক মামলায় খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও কেসিসি’র সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনিসহ বিএনপি’র ৫২জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেছে আদালত। পুলিশের দায়েরকৃত একটি মামলায় আজ সোমবার খুলনা মহানগর স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক এস এম আশিকুর রহমান এ চার্জগঠন করেন।
২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর খুলনা সদর থানায় বিএনপির ৪৫জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ২৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা (যার নং-১৯) দায়ের করেছিলেন এস আই অনুকুল চন্দ্র ঘোষ। ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল ৫২জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন এসআই মো. আশরাফুল আলম ও মো. মোস্তাক আহম্মেদ। ওই সময় নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও মনিরুজ্জামান মনি খুলনা মহানগর বিএনপি’র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
মামলার এজাহারে পুলিশ উল্লেখ করেছে, ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে বিএনপি নেতৃত্বাথীন ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা হাতে লাঠি, লোহার রড, বাশের লাঠি, ইটপাটকেল ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সরকার বিরোধী শ্লোগান দিয়ে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করে। এসময় তারা রাস্তায় চলাচলরত যানবহন ভাংচুর করতে থাকে। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আসামিদের ধ্বংসাত্মক কার্যকালাপ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু তারা সেটি না করে পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। রাস্তায় চলাচলরত সাধারণ জনতা দিক-বিদিক ছুটতে থাকে। এসময় আসামিরা কয়েকটি ট্রাক ও পিকআপ ভাংচুর করে। প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামালের ক্ষতি হয়।
এজাহারে পুলিশ আরও উল্লেখ করেছিলো, আসামিদের নিক্ষিপ্ত বোমার আঘাতে সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার টিএম মোশারফ হোসেনের ডান হাত ও কয়েকজন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়। তখন নিজের জান মাল রক্ষার্থে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়রসেল ও গুলি বর্ষণ করে। পরে সেখান থেকে নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। পরে আহত পুলিশ অফিসার ও সদস্যদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
এ ঘটনায় ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর এস আই অনুকুল চন্দ্র ঘোষ বাদী হয়ে ৪৫ জনের নাম উল্লেখসহ আরও আড়াইশ’জনকে আসামী করে খুলনা সদর থানায় মামলা করেন। ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল ৫২জনকে দায়ী করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ওইবছরের ২৬ মে চার্জশিট গ্রহন করেন আদালত। পরে বিচারের জন্যে মামলাটি মহানগর স্পেশাল ট্রাইবুনাল-১ এ প্রেরণ করা হয়। বিএনপি’র এসব নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক আইনের ৩/৫ ধারায় অপরাধী বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।
আসামী পক্ষের আইনজীবী মোল্লা গোলাম মওলা বলেন, ২০১৩ সালে ২৬ নভেম্বর বিএনপি পাওয়ার হাউস মোড়ে সমাবেশ করছিল। সে সময় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও পুলিশ তাদের ওপর হামলা চালায়। এটি একটি মিথ্যা মামলা। এ মামলায় একজনের নাম দু’বার ও একজন আসামী মারা গেছেন। আজ ৫০ জন আসামীর বিরুদ্ধে খুলনা মহানগর স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-২ এর আদালতে চার্জ গঠন হয়েছে। আদালতে আজ সকল নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। ন্যায় বিচার হলে আসামিরা সকলে খালাস পাবেন বলে তিনি মনে করেন।
এর আগে, গত ১ সেপ্টেম্বর সোনাডাঙ্গা থানার একটি মামলায় নগর বিএনপি’র সাবেক প্রচার সম্পাদক ও সোনাডাঙ্গা থানা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুরাদসহ ৪৮জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালত খুলনা।
গত ২৫ আগস্ট পুলিশের দায়ের করা আরেক মামলায় খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ বিএনপির ৭০ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেছেন খুলনা বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক ড. ওহিদুজ্জামান শিকদার। ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর সোনাডাঙ্গা থানায় মামলাটি করে পুলিশ।
চার্জগঠন সম্পর্কে খুলনা-২ সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, সরকার আবারও একটি সাজানো-পাতানো নির্বাচনের নীলনকশা আঁটছে। কথিত নাশকতার মামলাগুলোর সাজানো-পাতানো রায় দিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে নির্বাচন থেকে দুরে সরিয়ে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। এসব করে বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যাবে না।