খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আইনজীবী আলিফ হত্যা : ভিডিও দেখে শনাক্ত ১৩ জন, গ্রেপ্তার ৭

বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েও অর্থাভাবে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষ্ণপদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

মা সমিত্রা রায়, মানসিক প্রতিবন্ধী। কিছুই করতে পারেন না তিনি। আর শ্রবণ প্রতিবন্ধী বাবা শ্রীপদ রায় নদীতে জাল টানেন। পাশাপাশি কলা বিক্রি করেন। তবে বর্তমানে কোমরের ব্যথায় আর জাল টানতে পারেন না। কলা বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়েই ৫ সদস্যের পরিবার চলে। সামান্য আয় দিয়ে পরিবার চালাতে হিমসিম খেতে হয়। খেয়ে না খেয়ে কোনোমতে দিন কাটে তাদের। অর্থাভাবে মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। ছোট ছেলে অমীত রায় (১৭) সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। মা প্রতিবন্ধী হওয়ায় সংসারের কাজ করতে হয় তাকে।

দুঃখ-দুর্দশার এমন বর্ণনা শুনিয়েছেন এই পরিবারের বড় ছেলে কৃষ্ণপদ রায় (২০)। তিনি এবার গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে গুচ্ছভুক্ত ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুয়েট, রুয়েট ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

এ ছাড়া প্রকৌশল বিভাগে গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি। সেদুটি হলো- খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট)।

মা-বাবা ও নিজের স্বপ্নপূরণে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে কৃষ্ণপদ রায়কে। বিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষার্থী এসএসসিতে এ প্লাস এবং এইচএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এইচএসসি পাসের পর অর্থাভাবে ভর্তি পরীক্ষার ফরমপূরণ, যাতায়াত, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারছিলেন না তিনি। কৃষ্ণপদর এমন বিপদে পাশে দাঁড়ান পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম। আর্থিক সহযোগিতা করে তার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ করে দেন।

মেধাবী শিক্ষার্থী কৃষ্ণপদ রায় বলেন, বাবা-মা দুজনই প্রতিবন্ধী। আমরা তিন ভাই-বোন। টাকার অভাবে মাঝ পথে বড় বোনের লেখাপড়া বন্ধ করে বিয়ে দেওয়া হয়। ছোট ভাইকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর পর তারও লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। মা কয়েক বছর ধরে মানসিক প্রতিবন্ধী। কিছুই করতে পারেন না, তাকে দেখভাল করতে হয়। বাবা শ্রবণপ্রতিবন্ধী, কলা বিক্রি করেন। খাবার কষ্ট কাকে বলে আমরা বুঝি। এত কষ্টের মাঝেও লেখাপড়া বন্ধ করিনি।

মেধাবী হয়েও ভাই-বোন লেখাপড়া করতে পারেনি। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। পাইকগাছার ইউএনও স্যারের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। তাকে আমার সমস্যার কথা বলার পর তিনি নিজে আমাকে সহযোগিতা করেছেন। আজ আমি ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনোটিতে ভর্তি হতে পারব। এ জন্য আমি ইউএনও স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি সহযোগিতা না করলে আমার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যেত।

তিনি বলেন, আমার স্বপ্ন ইঞ্জিনিয়ার হব। এ জন্য কুয়েটে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এর জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। ইউএনও স্যারের পরামর্শে কয়েকজনের কাছে যাচ্ছি, যদি সহযোগিতা মেলে তাহলে স্বপ্নপূরণ করতে পারব। এমপি ও ওসি স্যার সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। সবার সহযোগিতা পেলে ভর্তির সুযোগ পাব।

পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম বলেন, দুই মাস আগে কৃষ্ণ নামে দলিত সম্প্রদায়ের মেধাবী ছেলেটি আমার কাছে আসে। তার খুব ইচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। কিন্তু ভর্তির ফরমপূরণের টাকাসহ ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাওয়ার মতো উপায় ছিল না। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম টাকা জোগাড় না হলে কী করবে? সে বলল, লেখাপড়া বন্ধ করে বাবার মতো কাজ করতে হবে।

ইউএনও বলেন, অনিশ্চিত ফলাফল তারপরও সিদ্ধান্ত নিলাম তার পাশে দাঁড়ানোর। যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করেছি। এখন সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, কুয়েটেও চান্স পেয়েছে। মা প্রতিবন্ধী, বাবা নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরেন। এখন সে স্বপ্ন দেখে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পরিবারের হাল ধরার। তবে তার ভর্তি এবং কম্পিউটার কিনতে অনেক টাকার প্রয়োজন। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ অনেককে জানিয়েছি। তারাও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

তিনি বলেন, সমাজে যারা বিত্তবান রয়েছেন তাদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা এ ধরনের মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ান।

মেধাবী এই শিক্ষার্থীর বাড়ি পাইকগাছা উপজেলার লাড়ুলী ইউনিয়নের কাটিপাড়া গ্রামের জেলেপাড়ায়। তাকে সহযোগিতা করতে এই নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেছেন তিনি। বিকাশ নং- ০১৭০৩৪৭৩৫২৯ (পার্সোনাল)।

এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকের মুদারাবা স্টুডেন্ট একাউন্ট : Account Neme- Krishnapada Roy, Account No: 20507776709191608.

খুলনা গেজেট/এমএনএস




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!