খুলনা বিভাগের একমাত্র করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের কোভিড ১৯ রোগীদের পরিবহনের জন্য অ্যাম্বুলেন্স মাত্র একটি। ড্রাইভার মাত্র একজন। করোনা সংক্রমনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিনই করোনা পজেটিভ রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, করোনার স্যাম্পল ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কাজ করে চলেছেন বিরামহীনভাবে।
বেশির ভাগ মানুষ যখন করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত, কেউ আক্রান্ত হলেই দূরে সরে যাচ্ছেন। হাসপাতালের চিকিৎসক নার্স ও কর্মচারীদের অনেকেই যখন দুরে সরে যাচ্ছে তখন ড্রাইভার শান্ত একেবারে ব্যতিক্রম। একেবারে কাছ থেকে পরিবরহণ করেছে শত শত রোগী আর হাজারও নমুনা।
শান্ত জানান, ছোট বেলা থেকেই কাজ পাগল মানুষ। কোনো কাজ দেখে ভয় পান না তিনি। বলেন, আল্লাহর ইচ্ছায় আমার কোনো সমস্যা হবেনা। মনের শক্তি থেকেই মানুষের সেবা করছি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজের মধ্যেই থাকেন শান্ত। তিনি বলেন, করোনার বিভীষিকা, রোগীদের আতঙ্ক, অস্থিরতা আর সব সময় মৃত্যু ভয়ে কাতর মানুষের মুখগুলো চোখের সামনে ভাসে। ভীষণ কষ্ট লাগে, মনটা বিষন্ন হয়ে ওঠে এসব মানুষের দেখে।
শান্ত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আউট সোর্সিং জনবলের মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত ড্রাইভার। করোনা শুরুর দিকে যখন করোনা রোগীদের পরিবহণ এবং করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হতো, তখন হাসপাতাল থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু সেই অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার কেউ হতে চায়নি। সরকারি ড্রাইভারগুলো বিভিন্ন অজুহাতে মুখ ফিরিয়ে নিলেও এগিয়ে এসেছিলো এক যুবক। বলেছিলো আমি গাড়ি চালাতে চাই। আমাকে নেন। তখন উপযুক্ত লাইসেন্স ও অভিজ্ঞতা থাকায় মৌখিকভাবে শান্তকেই বেছে নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর আউট সোর্সিং নিয়োগ হলে অনেক চেষ্টা ও তদবিরের পর শান্তর ভাগ্যে জোটে আউট সোর্সিং এর ড্রাইভার এর চাকুরী। সেই দিনের পর থেকে কেটে গেছে ৬ মাস কিন্তু এক দিনের জন্য ছুটিও নেয়নি শান্ত। দিন নেই রাত নেই প্রথম দিকে প্রতিদিনই করোনার নমুনা নিয়ে ঢাকায় যেতে হত তাকে। কিন্তু এরপর রোগী নিয়েও যেতে হতো। এখনও সারাদিন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে করোনা হাসপাতালে রোগী পরিবহণ করে শান্ত। তবে ঠিক মত বেতন পায় না সে। এই মাসের বেতন সেই মাসে। এভাবেই কষ্ট করিয়ে নিলেও ঠিকমত পারিশ্রমিক পায়না শান্ত। এখনও দুই মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে তার।
শান্ত বলেন, সবচেয়ে খারাপ লাগে দিনশেষে যখন চিকিৎসক ও নার্সদেরই ধন্যবাদ জানানো হয়। আমার মত বা অন্য ছোট পদগুলিতে যারা আছেন, এই যেমন প্রতিদিন সকালে কিটবক্সগুলি একজন সুইপার জীবাণুমুক্ত করে দেন। এই করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে তারও তো ভূমিকা রয়েছে। তাদের কেউ ধন্যবাদ দেয় না। শুধুমাত্র চিকিৎসক-নার্সদের কথা না বলে যদি বলা হতো স্বাস্থ্যকর্মী তাহলেও আমরা শান্তি পেতাম।
তিনি বলেন, সরকারের যদি মনে হয় আমি করোনা যোদ্ধা হিসাবে মানুষের জন্য কাজ করছি তাহলে সরকারও যেন আমার দিকে একটু সুদৃষ্টি দেয়। আমার চাকুরীটা যদি স্থায়ী করা যায় । সারা জীবন মানুষের সেবা করতে পারবো।
খুলনা গেজেট / এমবিএইচ / এমএম