খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ২০ মে, ২০২৪

Breaking News

  কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং শুরুর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
  ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ : কাদের
  ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত : রয়টার্স; জীবিত কারও সন্ধান মেলেনি : রেড ক্রিসেন্ট
বি‌বি‌সির প্রতিবেদন

বিএনপি কীভাবে দলের নেতাদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখছে

গেজেট ডেস্ক 

বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনকে ঘিরে দেশজুড়ে নেতাদের সতর্ক থাকার বার্তা দিয়েছে বিএনপি, যাতে করে নির্বাচনে অংশ নিতে কোন ‘চাপ বা কৌশলের ফাঁদে’ তাদের পড়তে না হয়। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনকে সামনে রেখে প্রার্থী হওয়ার মতো সব নেতাই ‘আত্মগোপনে গেছেন দলের পরামর্শেই’।

পরিস্থিতি সামলাতে প্রার্থী হওয়ার মতো নেতাদের মধ্যে যারা কারাগারের বাইরে আছেন তাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে চলেছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। দলীয় নেতাদের সাথে কথা বলে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

ঢাকার কাছে নারায়ণগঞ্জে দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার নাম উল্লেখ করে বিএনপির মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আগেই অভিযোগ করেছেন যে ‘জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য চুরি করে বিএনপি নেতাদের নামে মনোনয়নপত্র কেনার চক্রান্ত করছে সরকার’।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী বৃহস্পতিবারই মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন।

বিএনপি এ তফসিলকে প্রত্যাখ্যান করলেও বিএনপি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং দলটির সাবেক কয়েকজন এমপিসহ জেলা পর্যায়ের কিছু নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। এসব নিয়ে দলের একাংশের ভেতরে উদ্বেগ থাকলেও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান অবশ্য বলছেন বিএনপি থেকে বেরিয়ে যারা এই নির্বাচনের অংশ হচ্ছেন, তারা দলের কোন পর্যায়েরই গুরুত্বপূর্ণ কোন নেতা নন।

“আমরা জানি নির্বাচনে যাওয়ার জন্য প্রচণ্ড প্রেশার দেয়া হচ্ছে অনেককে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোন নেতা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যায়নি, যাবেও না,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

দলটির স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য ডঃ মঈন খান বলছেন সরকার গত পনের বছরে অনেক চেষ্টা করেও বিএনপিকে ভাঙ্গতে পারেনি এবং দলের চেয়ারপার্সনকেও আটক করা ছিলো তারই অংশ। “ দল ভাঙ্গার প্রচেষ্টা আগেও সফল হয়নি, এবারেও হবে না,” বলছিলেন তিনি।

কীভাবে নেতাদের সামলালো বিএনপি
বিএনপির বড় মাপের কোন নেতা এখনো নির্বাচনের দিকে না গেলেও দলটির মধ্যে রীতিমত ‘কাঁপন’ ধরিয়েছিলো তৃণমূল বিএনপি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বা বিএনএম নামের নতুন দল দুটি।

বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের তৈমুর আলম খন্দকারের তৃণমূল বিএনপিতে যাওয়াটা বিস্ময়ের পাশাপাশি উদ্বেগও তৈরি করেছিলো দলের বিভিন্ন স্তরে। অনেকের মধ্যে আশঙ্কা ছিলো ‘মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত কিংবা বিরোধী রাজনীতি করতে করতে ক্লান্ত’ হয়ে পড়া নেতাদের কেউ কেউ এ দল দুটির ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিতে রাজী হয়ে যান কি-না।

এ উদ্বেগের বড় কারণ ছিলো এ দুটি দলের উদ্যোক্তারা কিছুদিন আগেও বিএনপির রাজনীতিতেই সক্রিয় ছিলেন এবং তাদের দল গঠনের সময়েই বলা হচ্ছিলো যে বিএনপি ‘অনেক নেতা তাদের সঙ্গে যোগ দিবেন’। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এমন কিছু না হওয়ায় এখন আপাতত দলটির মধ্যে স্বস্তির বাতাসই বইছে বলে ধারণা দিয়েছেন বেশ কয়েকজন নেতা।

তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মূলত বিএনএম ও তৃণমূল বিএনপি গঠনের পর থেকেই সতর্ক হয়ে ওঠেছিলো বিএনপি নেতৃত্ব। এরপর থেকেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সহ দলের সিনিয়র নেতারা কয়েকজন দলীয় নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেছেন।

‘হর্স ট্রেডিংয়ে লাভ হবে না’
ডঃ আব্দুল মঈন খান বলছেন, আওয়ামী সরকার গত পনের বছর ধরেই বিভিন্ন ভাবে অনেক চেষ্টা করছে বিএনপিকে ভেঙে চুরে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সরকার পনের বছরে পনের জন দূরে থাক, বিএনপির একজনও গুরুত্বপূর্ণ নেতাকেও কী তাদের দলে ভেড়াতে পেরেছে ?

“হর্স ট্রেডিং করে সরকার হয়তো একটি মেকি সাজানো সংসদ তৈরির প্রয়াস পেতে পারে, তবে সরকারের অল্টারনেট গণতন্ত্রের স্বপ্ন এ প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়িত হবে না,” বিবিসি বাংলাকে বলেছেন তিনি।

অর্থাৎ যত চাপ বা চেষ্টাই হোক দলটির নেতারা মনে করছেন বিএনপি নেতারা দল ছেড়ে এসে নির্বাচন করবেন- এমন আশঙ্কা তাদের মধ্যে এখন আর নেই।

সেলিমা রহমান বলছেন বিএনপির মধ্যে যারা প্রার্থী হওয়ার মতো যোগ্য মানুষ তাদের বেশিরভাগ বহু বছর ধরে নির্যাতিত এবং অনেকেই কারাগারে।

“দলের হাইকমান্ড জানে এরা আপোষ করবে না। এর বাইরে এ বার্তা সবাইকে দেয়া সম্ভব হয়েছে যে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে কোনও ভাবেই যাওয়া যাবে না। এটি দলের মধ্যে কাজ করেছে,” বলছিলেন মিজ রহমান।

দলের আরেকজন নেতা কায়সার কামাল বলছেন নির্বাচনকে ভাঙ্গা বা দল থেকে লোকজনকে ভাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা হবে এটা বিএনপি নেতৃত্ব আগে থেকেই ধারণা করছিলো।

“এ কারণে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আগে থেকেই কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি দলের প্রতিটি স্তরের নেতাদের সাথে কথা বলেছেন, আশ্বস্ত করেছেন। নেতারাও তার প্রতি আস্থাশীল। এ জন্যই দল থেকে গুরুত্বপূর্ণ কেউ সরে যায়নি,” বলছিলেন তিনি।

তবে দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন মূলত শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে আলোচনা করেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সাথে সাথেই দেশজুড়ে দলের প্রার্থী হতে পারেন এমন নেতারা ‘আত্মগোপনে’ চলে যান। আবার কেউ কেউ আগেই ‘চাপ এড়াতে’ মামলায় আত্মসমর্পণ করে কারাগারে চলে যান।

বিশেষ করে দলের সাবেক এমপি এবং ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে যাদের দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিলো তাদের মধ্যে যারা কারাগারের বাইরে তাদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয় বিএনপি শীর্ষ নেতৃত্বের দিক থেকে। তবে বিএনপি ভাঙ্গার চেষ্টার অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করা হয়েছে আওয়ামী লীগ বা সরকারের পক্ষ থেকে।

মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ”আমার কাছে তথ্য আছে, তারেক রহমানকে যারা নেতা হিসাবে মানতে পারছেন না, তার লিডারশিপ মানতে যাদের কষ্ট হচ্ছে, তারা অনেকে নির্বাচনে আসবে বলে আমরা জানি। নির্বাচনে আসার জন্য তারা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মও তৈরি করেছেন।”

তিনি বলেছেন, ”আপনারা দেখেছেন, বিএনপির যে রাজনীতি, যে নেতৃত্ব, তা বিএনপির অনেক নেতাদের পছন্দ হচ্ছে না বলেই তারা দল ছেড়ে নতুন দল তৈরি করেছেন। এবং আমরা শুনছি বিএনপির অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করবেন। ”

শেষ দিন নিয়েও উদ্বেগ আছে
তবে ৩০শে নভেম্বর মনোনয়ন পত্র দাখিলের শেষ দিন নিয়ে এখনো উদ্বেগ আছে অনেকের মধ্যে। সে কারণে প্রার্থী হতে পারেন এমন নেতাই কার্যত নিজেদের ধরাছোঁয়ার বাইরে রেখেছেন দলীয় হাইকমান্ডের পরামর্শে। এমনকি কেউ যাতে যোগাযোগেরই সুযোগ না পায় সেজন্য ফোনও বন্ধ করে রেখেছেন অনেকে।

সেলিমা রহমান বলছেন ‘দলের নেতারা সবাই জানেন তাদের কী করতে হবে। কীভাবে সব ষড়যন্ত্র, চাপ মোকাবেলা করতে হবে’। এরপরেও যারাই নির্বাচনের দিক ঝুঁকেছেন তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বিএনপির দিক থেকে। কড়া ভাষায় ভিডিও বার্তা দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজেই।

চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান, ধামরাই পৌরসভা বিএনপির সভাপতি দেওয়ান নাজিম উদ্দিন মঞ্জু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু, ফরিদপুরের শাহ আবু জাফরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এছাড়া দলের আরও কয়েকজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে আলোচনায় এসেছেন। এর মধ্যে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান, দলের বহিষ্কৃত নেতা শওকত মাহমুদ, চট্টগ্রাম বিএনপির সাবেক নেতা নাজিম উদ্দিন, বগুড়ার মোহাম্মদ শোকরানা, বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সরকার বাদল এবং জেলা বিএনপির সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বিউটি বেগম।

দলের নেতারা বলছেন ভোটের রাজনীতিতে প্রভাব আছে এমন বিএনপি নেতাদের যাদের নামেই দল ছাড়ার গুঞ্জন তৈরি হয়েছিলো তাদের প্রায় সবার সাথেই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব আলাদা করে কথা বলেছে এবং তারা দল না ছাড়ার নিশ্চয়তা দিয়েছে।

“মূলত এসব কারণেই দলের জেলা, উপজেলা থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রার্থী হওয়ার মতো প্রায় সবাই এখন আত্মগোপনে,” বলছিলেন দলটির মধ্যম সারির একজন নেতা।

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!