ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে বিএনপির বক্তব্যকে ‘বিভ্রান্তিকর, মিথ্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি এ ধরনের বক্তব্য বিশ্বাস না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বুধবার দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে তাঁর দপ্তরে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে রুশ রাষ্ট্রদূত এ মন্তব্য করেন।
রাশিয়া, চীন ও ভারতের কারণে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে পেরেছে—বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ তার সরকারকে নির্বাচিত করেছে। কর্মকর্তারা বলেছেন যে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ এবার ভোট দিয়েছে। যাদের অধিকাংশ ভোট দিয়েছে আওয়ামী লীগকে।
আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি বলেন, ‘আমি যেটা বুঝি, এই নির্বাচনে আপনাদের জনগণই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে রাশিয়া কী করছে? আমরা কোনো দেশের রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো বন্ধুদেশে। এসব (হস্তক্ষেপ) বিভ্রান্তিকর তথ্য বা মিথ্যা তথ্য। এগুলো বিশ্বাস করবেন না।’
বিএনপির এমন মন্তব্যকে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে রাজনৈতিক বক্তব্য হিসেবে দেখছেন কি না, এ প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এ প্রশ্ন আপনার তাদের করতে হবে, আমাকে নয়।’
গত শনিবার দলের একটি কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছিলেন, ভারত, চীন আর রাশিয়া—তাদের সরকার হাসিনার সরকার; এটা বাংলাদেশের জনগণের সরকার নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা দেশ থেকে কোনো একতরফা নিষেধাজ্ঞাকে রাশিয়া আমলে নেয় না। অবশ্যই এটি (নিষেধাজ্ঞা) একটি সমস্যা। এর ফলে শুধু বাংলাদেশ বা রাশিয়া নয়, অনেক পশ্চিমা দেশও সমস্যায় পড়েছে।
ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, বৈঠকে রাজনীতি, অর্থনীতি, কারিগরি ও বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গত বছর দুই দেশের বাণিজ্য ২৩০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা তিনটি ক্ষেত্রে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে আলোচনা করেছি। বাংলাদেশ থেকে শুধু পোশাক নয়, পাট ও চামড়াজাত পণ্য নিতে আগ্রহী রাশিয়া।’ তিনি জানান, দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে রাশিয়ার ব্যাংকের শাখা খোলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ জ্বালানি ও খাদ্যনিরাপত্তায় জোর দিচ্ছে। জ্বালানির ক্ষেত্রে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ সময় অনুযায়ী সম্পন্ন হচ্ছে। এ ছাড়া গাজপ্রম গত বছর গ্যাসের অনুসন্ধান করে গ্যাসের মজুত খুঁজে পেয়েছে। রাশিয়া আশা করে, বাংলাদেশের সঙ্গে এ ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। রাশিয়া বাংলাদেশকে এলএনজি, তেল ও তেলজাত পণ্য সরবরাহ করতে প্রস্তুত।
খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত বলেন, খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য জরুরি। গত বছর বাংলাদেশকে ২৬ লাখ ৭০ হাজার টন গম দিয়েছে রাশিয়া। এ ছাড়া চলতি জানুয়ারিতে রাশিয়া ৩ লাখ টন গম সরবরাহ করছে। এ ছাড়া অন্যান্য সহযোগিতাও দুই দেশের মধ্যে অব্যাহত আছে।
নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্য বিষয়ে আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি বলেন, এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।