খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৯ মে, ২০২৪

Breaking News

  ৭ ব্যক্তিকে জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী
  নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ১৭
দুর্নীতির ক্লু উদঘাটনে মাঠে তদন্ত টিম

বায়োমেট্রিক হাজিরা ক্রয়ের নামে হরিলুট, তিন মাসেও চালু হয়নি ডিভাইস

এম. পলাশ শরীফ, মোরেলগঞ্জ

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ডিজিটাল বায়োমেট্রিক শিক্ষক হাজিরা ডিভাইস ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি ও মোটা অংকের অর্থ কেলেঙ্কারীর অভিযোগ উঠেছে। মেশিন ক্রয়ের নামে হরিলুট ৩ মাসেও বায়োমেট্রিক হাজিরা বিদ্যালয়গুলোতে চালু হয়নি। ডিভাইস ক্রয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট একাধিক চক্রের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে আটকে গেছে এ কার্যক্রম। শিক্ষকদের এখন গলার কাঁটা এ বায়োমেট্রিক মেশিন। দুর্নীতির ক্লু উদঘাটনে মাঠে তদন্ত টিম।

বাগেরহাট-৪, মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. আমিরুল আলম মিলন নিজে শিক্ষক হাজিরা ডিভাইস ক্রয়ের নামে সরকারি টাকার আত্মসাতের অভিযোগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বারবার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

এমপি’র অভিযোগে জানা গেছে, অত্র উপজেলায় শিক্ষক হাজিরা ডিভাইস ক্রয়ের নামে কালক্ষেপন করা হয়। অনিয়মের কারনে অধিদপ্তর থেকে শিক্ষক হাজিরা ডিভাইস ক্রয় না করে টাকা ফেরত চাওয়া হয়। কিন্তু ডিভাইস সরবরাহ চক্র টাকা ফেরত না দিয়ে তড়িঘড়ি সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকার ডিভাইস ১৮ হাজার টাকা ভাউচার দেখিয়ে বাকী টাকা আত্মসাৎ করেন। বিষয়টি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করা হলে তিনি কোন ব্যবস্থা না নিয়ে বরং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দ্রুত কার্য সম্পন্ন করার নিদের্শ দেন।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, উপজেলার পৌর সদর সহ ১৬ ইউনিয়নের ৩০৯ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মান উন্নয়নে বরাদ্ধকৃত রুটিন মেইনটেন্স, স্লিপের টাকা দিয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা ক্রয়ের জন্য উপজেলার সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তা নির্দেশ প্রদান করেন। সে মোতাবেক বায়োমেট্রিক ক্রয়ের আগেই স্লিপের ২০ হাজার টাকার বিল ভাউচারও জমা দেয় শিক্ষকরা। ২০২০ সালের প্রথম দিকে কিছু বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রিক মেশিন ১৮ হাজার টাকা মূল্য দেখিয়ে ক্রয় করাও হয়। ২০২০ সালে ১৭ মার্চ থেকে করোনার কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে এর কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে বায়োমেট্রিক মেশিন ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বায়োমেট্রিক মেশিন ক্রয় না করে এ বছরের ২৯ জুলাইয়ের মধ্যে স্লিপের টাকা ট্রেজারীতে জমা দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন।

বায়োমেট্রিক মেশিন ক্রয় চক্রটি তার নির্দেশ উপেক্ষা করে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে তড়িঘড়ি করে অধিকাংশ বিদ্যালয়ই বায়োমেট্রিক ডিভাইস মেশিন পৌছে দেন চুক্তিবদ্ধ ৩টি প্রতিষ্ঠান।

এদিকে ২৬০ নং হোগলাবুনিয়া মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২০৩ নং উত্তর হোগলাবুনিয়া, ২৫৮নং মধ্য চিপা বারইখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১২৬নং চালিতাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৯৮নং সুর্যমুখি হালদারবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৬৬নং আমুরবুনিয়া বেলায়েতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখাগেছে মেশিনগুলো আলমীরাতে প্যাক করা অবস্থায় রয়েছে। আবার কোথাও কোথাও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীর ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের বাড়িতে রয়েছে মেশিন।

এ বিষয় একাধিক প্রধান শিক্ষক জানান, বায়োমেট্রিক মেশনি কোম্পানির লোক দিয়ে গেছে। ৩ মাস হয়েগেলেও এখনও সংযোগ দেয়নি। হসিদ মিলছে না ওই লোকদের।

এদিকে বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডঃ আমিরুল আলম মিলন এর লিখিত অভিযোগে ভিত্তিতে গত ১০ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রকিউরমেন্ট) শেখ মোঃ রায়হান উদ্দিন সরেজমিনে তদন্তে আসেন। এসময়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শাহ আলম, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. জালাল উদ্দিন খান, এমপি প্রতিনিধি এ্যাড. তাজিনুর রহমান পলাশ সহ যুবলীগ, সাংবাদিক ও শিক্ষক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

তিনি উপস্থিত সকলের লিখিত স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন এবং সকল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের লিখিত স্বাক্ষ্য দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, কয়েকজন শিক্ষিক নেতার চাপের মুখে এ বায়োমেট্রিক মেশিন নিতে বাধ্য হয়েছে। টাকাও নেয়া হয়েছে ১৮ হাজার করে। তারা আরো বলেন, কয়েক মাস হলে গেলে এ মেশিন চালু করা হয়নি। যে কোন সময় অকেজো হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. জালাল উদ্দিন খান বলেন, উপজেলা সকল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে উপ-পরিচালক বায়োমেট্রিক ক্রয়ের বিষয়ে লিখিত স্বাক্ষ্য নিয়েছেন। সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সময়ে এ বায়োমেট্রিক ক্রয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রকিউরমেন্ট) তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান ।

এ সর্ম্পকে বাগেরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ শাহ আলম বলেন, ২ বছর পূর্বে স্লিপের ভাউচার জমা দিয়ে বায়োমেট্রিক মেশিন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত হয়। সে সময়ে অনেকে এ মেশিন ক্রয় করতে পারেনি। এ বছরে শিক্ষকরা তড়িঘড়ি করে সেসব মেশিন ক্রয় করেছে। তবে এ মেশিন ক্রয়ে কোন অনিয়ন হয়েছে কিনা তার জানা নাই।

তিনি আরো জানান, বায়োমেট্রিক মেশিন ক্রয়ে অনিয়মের কারণে বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্যের অভিযোগের তদন্ত করেছেন শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রকিউরমেন্ট) শেখ মোঃ রায়হান উদ্দিন।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!