যশোরের বাঘারপাড়ায় নতুন বাড়ির দোতলার কাজ শেষ হলেই বিয়ে করতে চেয়েছিলেন সুদীপ্ত। নিজের পছন্দের মেয়ের কথাও জানিয়েছিলেন মা ও বোনকে। কিন্তু সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। বৃহস্পতিবার রাতে স্কুলের পিকনিক থেকে বাড়ি ফেরার পথে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানিতে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান বাঘারপাড়া উপজেলার দোগাছি গ্রামের কুমারেশ বিশ্বাসের ছেলে ও বাকড়ী বহুমুখি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাব সহকারী সুদীপ্ত বিশ্বাস। এ দুর্ঘটনায় আরো দু’জন নিহত ও ৪১ জন আহত হয়েছেন। এদেরমধ্যে ৪ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, শুক্রবার রাত ১ টার দিকে মরদেহ সুদীপ্তের বাড়ি পৌঁছায়। এসময় গ্রামীণ জনপদ থাকে গভীর ঘুমে। কিন্তু এ রাতে তার ব্যত্যয় ঘটে। রাতের নির্জনতা ভেঙে কান্নার রোলে ভারী হয়ে উঠে আকাশ বাতাস। দূর থেকে শোনা যাচ্ছিল সেই কান্নার শব্দ।
এদিকে, শুক্রবার সকালে সুদীপ্তের বাড়িতে দেখা যায়, একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে স্কুল শিক্ষক মা মিনতি ভৌমিক বিলাপ করছেন ও মূর্ছা যাচ্ছেন।
স্কুল শিক্ষক বাবা কুমারেশ বিশ্বাস ছেলের শোকে অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। চেয়ারে বসে কি যেন ভাবছেন তিনি। কারোর সাথে কথাও বলছেন না। একমাত্র ছেলে অনন্তকালের যাত্রায় পাড়ি জমালো। কি করে ভুলবে এ ব্যাথা বাবা কুমারেশ বিশ্বাস। আর একমাত্র বোন তমা বিশ্বাস ভাইয়ের শবদেহ ধরে চিৎকার করে কাঁদছেন। মর্মান্তিক এই মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেনা।
স্বজনদের আহাজারিতে এগারোখান বাকড়ী এলাকায় শোকের ছায়া নামে। সুদীপ্তের অকাল মৃত্যুতে শুধু স্বজনরাই নয়, কেঁদেছেন পাড়াপড়শি, সহকর্মী ও দূরদূরান্ত থেকে আসা মানুষেরাও। শেষবারের মতো দেখতে শত শত মানুষ ভিড় জমায় তার বাড়িতে।
প্রতিবেশি কলেজ শিক্ষক নিখিল কুমার আঢ্য বলেন, সুদীপ্ত ছিল শান্ত প্রকৃতির। কারো সাথে বিবাদে জড়াতে দেখিনি কখনো। সবাই তাকে ভালোবাসতো।
শুক্রবার দুপুরে গ্রামের শ্মশানে ঠাকুরদা ও ঠাকুমার সমাধির পাশে সমাহিত করা হয় সুদীপ্তের মরদেহ।
এদিকে এ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বাকড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য বিদ্যুৎ বিশ্বাসের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে সুনসান নিরবতা। কেউ কারো সাথে কথা বলছেন না। শুক্রবার সকালে সমাহিত করা হয় বিদ্যুতের মরদেহ। এরপর থেকে পরিবারের সদস্যরা নিস্তব্ধ হয়ে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকালে তিনটি বাসে করে বাঘারপাড়ার বাকড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকরা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় পিকনিকে যায়। ফেরার পথে রাতে তাদের বহনকারী একটি বাস গোপালগঞ্জের কাশিয়ানিতে দুর্ঘটনায় কবলিত হয়। পিকনিকের একটি বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে আরেকটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।