খুলনা, বাংলাদেশ | ১৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ২ জুন, ২০২৪

Breaking News

  কারও সাথে বৈরিতা নয় দেশের উন্নয়নই গুরুত্বপূর্ণ : প্রধানমন্ত্রী
  লুটেরা সরকারকে না ঠেকাতে পারলে দেশের অস্তিত্ব থাকবে না : ফখরুল

বাড়ির ছাদে মুক্তা চাষে সফল কলেজছাত্র আব্দুর রহমান

শাহিন হোসেন, অভয়নগর

যশোরের অভয়নগর উপজেলার এক্তারপুর গ্রামে বাড়ীর ছাদে মুক্তা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কলেজ পড়ুয়া ছাত্র আব্দুর রহমান। উপজেলার এক্তাপুর গ্রামের এক হত দরিদ্র পরিবারের সন্তান আব্দুর রহমান।
পিতা কবির হোসেন মিল শ্রমিক হিসাবে কাজ করে অভাব অনাটনের সংসার পরিচালনা করতেন।

জানা যায়, ২০২১ সালে করোনা মহামারির সময় সবাই যখন ঘরবন্দি ছিল ঠিক তখন শ্রমিক বাবাকে সংসারে সহযোগিতার জন্য কিছু একটা করার পরিকল্পনা করেন ছাত্র আব্দুর রহমান। সে তখন রাজঘাট জাফরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। ইউটিউবে মুক্তা চাষের ভিডিও দেখে উৎসাহিত হয়। সেখান থেকে প্রাথমিক ধারণা নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার মুক্তা চাষের খামার পরির্দশন ও খামারিদের পরার্মশে বাড়ীর পুকুরে অল্প কিছু মুক্তা দিয়ে পরিক্ষামূলক ভাবে চাষ শুরু করে। ফলাফল ভাল হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে বাড়ির ছাদে পানির হাউজ করে প্রথমে ৫০০ ঝিনুক দিয়ে মুক্তা চাষ শুরু করেন। আর তাতেই আসে অভাবনীয় সফলতা। অভাব অনাটনের সংসারে জেগে উঠে আশার আলো। এরপর ঝিনুকের (মুক্তা) সাথে রঙ্গিন মাছের চাষ শুরু করেন তিনি।

রঙ্গিন মাছের সাথে বানিজ্যিকভাবে মুক্তা চাষ করে বেকারত্ব দূর করে রিতিমত এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ আর এগ্রো ফার্মিং মুক্তা চাষ ট্রেনিং সেন্টার খুলে অনেক বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থান তৈরি করে দিয়েছেন ঐ যুবক। ৫০০ ঝিনুক থেকে এখন তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ছয় হাজারে।

গত ৩ মাস আগে ঝিনুকের পাশাপাশি একই হাউজ কাজে লাগিয়ে আরো কিছু করার চিন্তা থেকে ছাদের জ্বলাশয়ে পরিক্ষামুলকভাবে ছাড়েন রঙ্গিণ মাছ। এক্ষেত্রেও দেখা দেয় বড় ধরনের আর্থিক আয়ের সম্ভাবনা। এখন প্রতিমাসে কয়েক হাজার টাকার মুক্তা বিক্রি করেন তরুন এই উদ্যোক্তা। বর্তমান নওয়াপাড়া সরকারী মহাবিদ্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আব্দুর রহমান।

পড়ালেখার পাশাপাশি বাড়ির ছাদে মুক্তা ও রঙ্গীন মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বেকার যুবকদের প্রশিক্ষন দিয়ে এ কাজে উৎসাহিত করছেন তিনি। আব্দুর রহমান জানান, নতুন কিছু করার তাড়না থেকে ইউটিউব দেখে এ ম্ক্তুা ও রঙ্গীন মাছ চাষ শুরু করেছিলাম। এখন আমি দেশের নামকরা বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে গোল ও ডিজাইন মুক্তা সাপ্লাাই করে থাকি। এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা উৎসক বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি।

তিনি আরও বলেন, সরকারী ভাবে কোন আর্থিক সাহায্য সহযোগীতা পেলে মুক্তা ও রঙ্গিন মাছের খামার আরও প্রশস্ত করতে পারবো। এতে করে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থার ব্যবস্থা করা যাবে। এবং উৎপাদনকৃত মুক্তা বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে। ইতো পূর্বে আমি বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাশিদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।

আব্দুর রহমানের বাবা কবির হোসেন জানান, ছেলের ব্যতিক্রমী কর্মকান্ডে প্রথম থেকে সহযোগিতা করেছি, এখন আলহামদুলিল্লাহ তার সুফল ভোগ করছি। বাড়ির ছাদে রঙ্গীন মাছের সাথে কিভাবে মুক্তা চাষ হয় সে বিষয়টি দেখার জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থী ছুটে আসেন।

খুলনা দৌলতপুর থেকে প্রজেক্ট দেখতে আসা আমিনুর রহমান বলেন, বেকার যুবকরা এ পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে স্বাবলম্বী হওয়ার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।

এব্যাপারে জানতে চাইলে অভয়নগর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার ঘোষ জানান, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উদ্যক্তাদের এমন নতুন নতুন উদ্ভাবনী আমরা প্রত্যাশা করি। উপজেলা মৎস্য অফিসের মাধ্যমে আমরা তার পাশে থেকে তাকে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করে যাবো। এবং এ ধরনের কার্যক্রমে আমরা পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করবো।

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!