খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৮ মে, ২০২৪

Breaking News

  করোনায় একজনের মৃত্যু, শনাক্ত ১১
  তিন জেলায় বজ্রপাতে প্রাণ গেল ৭ জনের
  রাঙামাটিতে সশস্ত্র হামলায় ইউপিডিএফ সদস্যসহ নিহত ২

বাড়তি ব্যয়ের চাপে হজযাত্রী কমে অর্ধেক

গেজেট ডেস্ক

পবিত্র হজের নিবন্ধনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে তিন দফা। তবে সৌদি আরবের দেওয়া কোটার অর্ধেকও পূরণ হয়নি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার নিবন্ধনের সময়সীমা শেষ হচ্ছে। এ সময়ের মধ্যে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা সৌদি সরকারকে জানিয়ে বাংলাদেশের বাকি কোটা ফেরত দেওয়া হবে।

হজে যেতে আগ্রহী ও এজেন্সি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত হজের ব্যয় এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় নিবন্ধনে আগ্রহী কম। এ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোলের মধ্যে হজ নিবন্ধনের কার্যক্রম চলা এবং ওমরাহের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় এবার নিবন্ধনে ধস নেমেছে।

হজ এজেন্সির মালিকরা বলছেন, হজ পালন করায় আগ্রহীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নিবন্ধনের শেষ সময় ১ ফেব্রুয়ারি। ৭ ফেব্রুয়ারি হজযাত্রীর সংখ্যা সৌদি সরকারকে জানিয়ে বাকি কোটা ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পাঁচটি হজের তুলনায় (২০২০ ও ’২১ সালে সীমিত আকারে হজ হয়, বাংলাদেশ থেকে কেউ যায়নি) এ বছর হজে যাওয়ার বিষয়ে আগ্রহ সবচেয়ে কম। ২০১৭ ও ২০২২ সালে বাংলাদেশের জন্য দেওয়া হজ কোটা পূরণ হয়েছে। অন্য তিন বছর কোটা কাছাকাছি পূরণ হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের হজে যাওয়ার কোটা রয়েছে। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৬৩ হাজার ৬০৯ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার ৯৭৬ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৯ হাজার ৬১৩ জন নিবন্ধন করেছেন।

এ হিসাবে কোটা খালি রয়েছে ৬৩ হাজার ৬০৯ জনের। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আরও কিছু বাড়বে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের কর্মকর্তারা মনে করছেন। যারা প্রাথমিক নিবন্ধন করেছেন, তাদের আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ব্যাংকে বাকি টাকা জমা দিয়ে পুরো নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। শেষ পর্যন্ত নিবন্ধনকারীর সংখ্যা কিছু কমে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে।

হজের নিবন্ধন শুরু হয় গত ১৫ নভেম্বর, যা ১০ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রত্যাশিত সাড়া না মেলায় প্রথম সময় বাড়ানো হয় ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে সময় ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত এবং তৃতীয় দফায় ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

কোটা পূরণে সময় আরও বাড়ানো হবে কিনা– জানতে চাইলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) মতিউল ইসলাম  বলেন, ‘কোনোভাবেই আর সময় বাড়ানো হবে না। সে সুযোগও নেই।’ কেন সুযোগ নেই– জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৭ ফেব্রুয়ারি হজযাত্রীর সংখ্যা সৌদি সরকারকে জানিয়ে কোটা সারেন্ডার করতে হবে। বাংলাদেশি কোটার ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ হজযাত্রীর জন্য মাথাপিছু সিকিউরিটি মানি হিসাবে ২৮ রিয়াল করে জমা দিতে হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সৌদি সরকারকে মোট সংখ্যা না জানালে বাকি অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে না।’

এবার আগ্রহ সবচেয়ে কম

বাংলাদেশের জন্য দেওয়া সৌদি সরকারের হজ কোটা ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত (করোনার কারণে তিন বছর ব্যতিক্রম ছাড়া) একই আছে, ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। ২০১৭ ও ২০২২ সালে কোটা পূরণ হয়েছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে হজ করতে যান ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৯৮ জন। ২০১৯ সালে হজ করেছেন ১ লাখ ২৬ হাজার ৯২৩ জন। ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনার কারণে হজ করতে বিদেশ থেকে কারও সৌদি আরব যাওয়ার সুযোগ হয়নি। ২০২২ সালে বাংলাদেশের কোটা ছিল ৬০ হাজার। সে কোটা পূরণ হয়েছিল। গত বছর বাংলাদেশ থেকে হজ করেছেন ১ লাখ ২২ হাজার ৫৫৮ জন। ওই বছরও নিবন্ধনের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছিল।

কেন হজ কোটা পূরণ হচ্ছে না

হজ গমনেচ্ছুদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হজের ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া ও জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে মানুষ হিমশিম খাওয়ায় নিবন্ধন কমেছে। নিবন্ধনে মানুষের সাড়া কম কেন জানতে চাইলে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম  বলেন, নির্বাচনের কারণে এ বছর হজে যেতে মানুষের আগ্রহ কম। কোনো কারণে হয়তো মানুষের হাতে টাকাপয়সা কম। তাই এ বছর হজ করতে চাচ্ছেন না। পরে হয়তো করবেন। আর অনেকে ওমরাহ করে নেওয়ায় হজে এখনই আগ্রহী হচ্ছেন না। নির্বাচনের কারণে নিবন্ধন কেন কম হবে– এ প্রশ্নে তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচন আর হজের নিবন্ধন এবার একই সময়ে পড়েছে। গত ১০-১৫ বছরে আমি এমনটা দেখিনি।

খরচ অনেক বেড়েছে

গত দুই বছরে হজের খরচ অনেক বেড়েছে। ২০২২ সালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। প্যাকেজ-১-এ সর্বমোট খরচ ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা, প্যাকেজ-২-এ ৩ লাখ ৬০ হাজার এবং প্যাকেজ-৩-এ ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা ছিল। বেসরকারি প্যাকেজে ৩ লাখ ৫৮ হাজার টাকা খরচ ঘোষণা করা হয়। তবে পরের বছরই খরচ বেড়ে যায়। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজের খরচ নির্ধারণ করা হয় ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় খরচ ধরা হয় ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। তাই কুলাতে না পেরে প্রাক-নিবন্ধনকারী অনেকেই আর নিবন্ধন করেননি। বর্তমানে হজে যেতে হলে প্রথম ধাপে ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে প্রাক-নিবন্ধন করতে হয়। সারা বছরই প্রাক-নিবন্ধন করা যায়। মূল নিবন্ধনের জন্য ন্যূনতম ২ লাখ ৫ হাজার টাকা দিতে হয়। বাকি টাকা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়।

এবারের হজের জন্য খরচ কমিয়ে গত নভেম্বর প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। সাধারণ প্যাকেজে হজ করতে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা এবং বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা ব্যয় ধরা হয়। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮৩ হাজার ২০০ টাকা কমিয়ে সাধারণ প্যাকেজ ৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা এবং বিশেষ প্যাকেজ ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করে হাব।

নিবন্ধনে মানুষের সাড়া কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে রাজধানীর উত্তরা এলাকার হজ এজেন্সি আল হাজ্ব ট্রাভেল ট্রেডের ম্যানেজিং পার্টনার মঈনুল ইসলাম  বলেন, ‘সোজা কথা, খরচ বেশি। অনেকে হয়তো ২০২০ বা ২০২১ সালে প্রাক-নিবন্ধন করে রেখেছেন। তখন ৩ লাখ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় হজ প্যাকেজ ছিল। আমি এমন অনেককে চিনি, এক পরিবারের চারজন একসঙ্গে প্রাক-নিবন্ধন করে রেখেছেন। এখন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় হজ করা তাদের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। চারজনের পরিবর্তে এখন হয়তো একজন হজে যাচ্ছেন। নিজ প্রতিষ্ঠানের চিত্র তুলে ধরে মঈনুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত ৪৬ জন নিবন্ধন করেছেন। অথচ আরও ১২০ জন প্রাক-নিবন্ধিত রয়েছেন।’

চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকার হজ এজেন্সি আল হারামাইন ট্রাভেলসের মোহাম্মদ মুছা বলেন, ‘এবার নিবন্ধনের শুরুতেই টাকা চাওয়া হয়েছে। এর কোনো কারণ ছিল না। সংসদ নির্বাচনের মধ্যে নিবন্ধনের কাজ শুরু করাটা ভুল ছিল। হজ করতে এবার প্রায় ৭ লাখ টাকা লাগছে। এসব কারণে হয়তো মানুষ বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।’

হজের খরচ বেশি হওয়া প্রসঙ্গে অতিরিক্ত সচিব মতিউল ইসলাম  বলেন, মক্কা ও মদিনায় পুরোনো বাড়িগুলো ভেঙে ফেলা হচ্ছে। পুরোনো বাড়িগুলোর ভাড়া ছিল কম, নতুনগুলোর তুলনামূলক বেশি। মক্কায় বাংলাদেশ হজ মিশন অফিসেও সিল মেরে গেছে সরকারি কর্মকর্তারা। এবারের হজের পরে ভেঙে ফেলবে। মিসফালাহ এলাকার সব বাড়িই ভেঙে নতুন করে করা হচ্ছে। মদিনায়ও বাঙালিপাড়াখ্যাত এলাকার সব বাড়ি ভাঙা হচ্ছে। এবার এসব কারণে সাধারণ প্যাকেজের হাজিদের মারকাজিয়া এলাকার বাইরের বাড়িতে রাখতে হবে। বিশেষ প্যাকেজের হাজিদের মারকাজিয়া এলাকায় রাখা হবে।

 




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!