খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৮ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  খুলনায় মাদক মামলায় ৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত
  দুর্গাপূজার ছুটি একদিন বাড়িয়ে আজই প্রজ্ঞাপন জারি : মাহফুজ আলম
  সাবেক সচিব আমিনুল ও নজিবুর রহমান ৩ দিনের রিমান্ডে

বাহারি নাম, স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় পিঠা-পুলির পসরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাহারি নাম, স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। দেখতে যেমন চমকপ্রদ, খেতে তেমন সু-স্বাদু। লোভনীয় ও মজাদার পিঠা-পুলির পসরা বসেছে খুলনা প্রেসক্লাব চত্বরে। ক্লাবের আয়োজনে রবিবার বিকেলে শুরু হওয়া ৩ দিনব্যাপী পিঠা ও বস্ত্র মেলা চলবে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত। এবারের পিঠা ও বস্ত্র মেলায় স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে স্বনামধন্য ৩২টি স্টল অংশ নিয়েছে।

মেলার স্টলগুলোতে চিতই, মালপোয়া, দুধ পুলি, ভাপা, নকশি পিঠা, মুগ পাকন, পাটিসাপটা, লবঙ্গ লতিকা, হৃদয় হরণ, ডিম সুন্দরী, বিবি খানা, চালতা পাতা, জামাই পিঠা, গোলাপসহ মজার মজার নামের বাহারী সব পিঠা পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও স্টলগুলোতে রয়েছে বস্ত্র ও বিভিন্ন রকমারী পণ্য।

মেলায় ঘুরতে আসা ইঞ্জিনিয়ার মোঃ রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, অত্যন্ত চমৎকার পরিবেশ এবং খুবই সাশ্রয়ী মূল্যে এখানে পিঠা পাওয়া যাচ্ছে। একই সঙ্গে ভাজাসহ বিভিন্ন খাবার খাওয়ার সুযোগ রয়েছে। যেটা বাঙালির ঐতিহ্য। এই আয়োজন আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। গত দু’দিনই আমি এসেছি। ধন্যবাদ জানাই খুলনা প্রেস ক্লাবকে। তিনি এই মেলার সময়ে আরও দু’দিন বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন। তার মতে, দু’দিন সময় বাড়ালে খুলনার ব্যস্ত মানুষ সপরিবারের এই মেলা উপভোগ করতে পারবেন।

সংগঠক সুমা বড়াল বলেন, আমাদের এখানে সাতটি স্টল রয়েছে। সকলেই কেক ও পিঠা উপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এখানে একদিনের তৈরি প্রডাক্ট দ্বিতীয় দিন থাকে না। প্রতিদিনই নিত্যনতুন পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। শ্বাসও ভিন্ন, আপনারা এসে খেয়ে দেখবেন তাহলে বুঝবেন।

পিঠার পসরা বসিয়েছেন মানসুরা তুলি। তিনি বলেন, পিঠা আমাদের ঐতিহ্যবাহী একটি জিনিস। প্রত্যেক বছর একবার পিঠা মেলা হওয়া উচিত। প্রথম দিনের চেয়ে আজ ক্রেতা ও দর্শনার্থী বেশ ভালো। বেচা-কেনা ভালো হচ্ছে। এখানে দুধ পাকান, বধূ পাকান, রস পাকান, বধূবরণ, চিকেন কুলি, হোমমেট মিষ্টি, ভাপা পিঠা, বালুসাই, গাজরের হালুয়াসহ ২০-২৫ রকমের পিঠা রয়েছে।

বাষ্প ব্যবহার করে ভিন্ন পদ্ধতিতে ভাপা পিঠা তৈরি : মেলায় ভিন্নতা দেখা মেলে ইয়াম্মি কেক ল্যান্ডের স্টলে। সেখানে পেশার কুকারে তৈরি করা হচ্ছে ভাপা পিঠা। পেশার কুকারে পানি গরম করে সেখান থেকে বের হওয়া বাস্প ব্যবহার করে ভাপা পিঠা তৈরি করতে দেখা যায়। স্টলে ভাপা পিঠা তৈরি করছিলেন ফাহিমা আক্তার। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, হাড়ি-পাতিলের পরিবর্তে পেশার কুকারে দ্রুত পিঠা তৈরি হয়। আর বাড়ি থেকে স্টলে হাড়ি-পাতিল না এনে সহজেই এই প্রক্রিয়ায় পিঠা তৈরি করা যায়। সবাই খেয়েও প্রসংশা করেছেন।

তিনি বলেন, পেশার কুকারের বাষ্প বের হতে দেখে নিজে নিজেই ভাবলাম এই বাষ্প ব্যবহার করে ভাপা পিঠা তৈরি করা যায় কিনা। দেখলাম খুব সহজে এবং দ্রুত পিঠা তৈরি করা যায়। আমার দেখা দেখি অনেকেই এই পদ্ধতিতে পিঠা প্রস্তুত করছেন। এতে সময় সাশ্রয় হয়। শুধু পিঠার মেলা নয়, এখানে পোশাকসহ বিভিন্ন জিনিস নিয়ে বসেছে বস্ত্র মেলাও। রয়েছে নানা ধরনের গহনার স্টল।

এদিন সন্ধ্যায় ক্লাব চত্বরে সাত রাস্তার মোড় বন্ধু মহলের পক্ষ থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

খুলনা প্রেস ক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদক মোঃ মাহবুবুর রহমান মুন্না বলেন, বাঙালির ঐতিহ্য পিঠা ও বস্ত্র মেলার পাশাপাশি আজ সন্ধ্যা থেকে বন্ধুমহলের আয়োজনে করা হয়েছে। এখানে মনোমুগ্ধকর গান পরিবেশন করছেন শিল্পীরা।

ক্লাবের সহকারী সম্পাদক এএইচএম শামীমুজ্জামান বলেন, মানুষ যাতে শীতকালের পিঠার স্বাদ নিতে পারে সেই জন্যই পিঠা ও বস্ত্র মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় সব বয়সের মানুষ আসছে। কেনা-কাটা করছেন, ঘুরছেন, বিনোদন উপভোগ করছেন। শুধু পিঠা নয়, এখানে পোশাকসহ বিভিন্ন বস্ত্র স্টল রয়েছে। এই শুধু প্রেস ক্লাব নয়, বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এই মেলার আয়োজন করা উচিৎ।

ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমেদ মোল্লা বলেন, গত কয়েক বছর ধরে এই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। নগরবাসীর তাদের যান্ত্রিক জীবনের বাইরে যেয়ে এই ধরনের বাঙালির ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত হচ্ছে। ব্যাপক উৎসাহ রয়েছে।

খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু হাসান বলেন, প্রতি শীত মৌসুমে গ্রাম বাংলায় এই পিঠা-পুলির আয়োজন করা হয়ে থাকে। যখন ধান ওঠে, তারপরই কিন্তু এই উৎসব শুরু হয়। এই উৎসবটা আমাদের সংস্কৃতির একেবারে শেকড়ের। খুলনা প্রেসক্লাব এ আয়োজনের মধ্যদিয়ে নতুন প্রজন্মকে জানা ও উপভোগ করার সুযোগ করে দিয়েছে। অনেকেরই পিঠা-পুলির বিষয়ে আইডিয়া নেই। তাদের মধ্যে এই মেলা দেশের প্রতি ভালোবাসা, জাতীয়তাবোধ, বিনোদন, সাংস্কৃতিবোধ জাগ্রত করবে। এই আয়োজন বছর জুড়ে হওয়া উচিত।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!