সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ৫০ ভাগ পাচ্ছে ৭ জেলায়। এ বরাদ্দ প্রাপ্তির দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা জেলা; এ জেলার বরাদ্দ ২১ ভাগ। বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বিভিন্ন বড় প্রকল্প চলমান থাকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে কক্সবাজার; সেখানে বরাদ্দ ৯ ভাগ। তৃতীয় স্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম; এ জেলায় বরাদ্দ ৬ দশমিক ৮৫ ভাগ। আর চতুর্থ অবস্থানে থাকা নারায়ণগঞ্জের ৩ দশমিক ৮৫ ভাগ।
এছাড়া নরসিংদীতে ৩ দশমিক ৬১ ভাগ, খুলনায় ২ দশমিক ৮৭ ভাগ এবং গাজীপুরে ২ দশমিক ৫২ ভাগ বরাদ্দ পাচ্ছে। পিছিয়ে পড়া ২৫ জেলা মিলে এখাতের বরাদ্দ মাত্র ১৩ শতাংশ। বৈষম্য পরিমাপক ‘পালমা রেশিও’ অনুযায়ী যার মান ৩ দশমিক ৭২ ভাগ; যা দেশের মধ্যে উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দের উচ্চ বৈষম্যকেই নির্দেশ করে।
ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভলাপমেন্ট (আইপিডি) সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দের আঞ্চলিক বিন্যাস’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে। শনিবার (১৭ জুন) অনলাইনে আয়োজিত এক সভায় গবেষণাটি উপস্থাপন করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান এবং পরিকল্পনাবিদ রেদওয়ানুর রহমান।
আইপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, আঞ্চলিক বিবেচনায় বৃহত্তর ঢাকা অঞ্চল (পুরাতন বৃহৎ জেলা) পাচ্ছে শতকরা ৩২ ভাগ ও চট্টগ্রাম অঞ্চল পাচ্ছে ১৫ ভাগ। বিপরীতে সর্বনিম্ন বরাদ্দ পাচ্ছে বৃহত্তর কুষ্টিয়া (১.৫৩ ভাগ), পার্বত্য অঞ্চল (১.৬০), বৃহত্তর বগুড়া (১.৬৮) ও বৃহত্তর দিনাজপুর (১.৮০ ভাগ)। ফলে দেশের জেলা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বাজেট বরাদ্দের মধ্যে ব্যাপক ভিন্নতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে দেশের পদ্মা সেতু চালু হবার পাশাপাশি বিভিন্ন অবকাঠামো ও উন্নয়ন উদ্যোগের কারণে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে উন্নয়ন বৈষম্য কমবার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, বরাদ্দপ্রাপ্তির দিক থেকে সবচেয়ে কম পাচ্ছে মেহেরপুর জেলা (০.৩৬ ভাগ) ও পঞ্চগড় (০.৩৯ ভাগ)। এর উপরেই আছে চুযাডাংগা ( শতকরা ০.৪১), ঠাকুরগাঁও (০.৪৩), ঝালকাঠি (০.৪৫), ঝিনাইদহ (০.৪৮), বরগুনা (০.৪৮) ও জয়পুরহাট (০.৪৮ ভাগ)।
তিনি আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দের আঞ্চলিক বৈষম্য এখনও দৃশ্যমান। দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল (পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট), উত্তর পূর্বাঞ্চল (নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ) মধ্য দক্ষিণাঞ্চল (মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, রাজবাড়ী) এলাকায় উন্নয়ন বাজেটের বরাদ্দ মধ্যাঞ্চল তথা ঢাকা এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল তথা চট্টগ্রাম অঞ্চলের তুলনায় তাৎপর্যপূর্ণভাবে কম। ফলে এসব অঞ্চলের অনেক এলাকাতেই দারিদ্র্যের হারও তুলনামূলকভাবে বেশি।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের সাধারণ সরকারি সেবা, প্রতিরক্ষা এবং জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষা খাত ব্যতীত বাকি ১২ টি খাতের চলমান প্রকল্পের বাজেটসমূহের জেলা ও আঞ্চলিক অবস্থান বিবেচনানিয়ে স্থানিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যাতে এডিপির প্রায় ৭০ ভাগ প্রকল্পকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তবে এ গবেষণায় জাতীয় প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে দেশের জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পদ্মা বহুমুখী সেতু, পদ্মা রেলসেতু ও যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু রেল সেতুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
আইপিডির উপদেষ্টা এবং জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের সুষম আঞ্চলিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিশেষায়িত এলাকা তথা পাহাড়ি অঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল, হাওর এলাকা ও চরাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। কুডিগ্রামের চর রাজিবপুর এলাকার দারিদ্র্যের হার স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও কেন ৭৯ শতাংশ, সেই বিশ্লেষণ করে এই ধরনের এলাকাসমূহের জন্য বিশেষ বাজেট বরাদ্দ ও টেকসই অর্থনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন ছিল।
ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে উন্নয়ন গবেষক রেদওয়ানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে, যা প্রশংসনীয়। কিন্তু এক্ষেত্রেও অধিকাংশ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে হচ্ছে, যা সরকারের উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক।
অনুষ্ঠানে ছিলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফরহাদুর রেজা, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আশরাফউদ্দিন ফাহিম, কো-ওপারেটিভ জোনাল ইন্সটিটিউটের কর্মকর্তা মো. সালিমুল আলম প্রমুখ।
খুলনা গেজেট/কেডি