খুলনা, বাংলাদেশ | ২৭ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১২ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯১৫
  ময়মনসিংহে ভিমরুলের কামড়ে বাবা-মেয়ের মৃত্যু
  এমন রাষ্ট্র গঠন করতে চাই যা নিয়ে দুনিয়ার সামনে গর্ব করা যায়, ঢাকেশ্বরী মন্দিরে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
  আজ মধ্যরাত থেকে ইলিশ ধরা-বিপণনে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা

বাঘারপাড়ায় ইটভাটার ধোয়ায় পুড়ছে ৩৫ বিঘা আখ খেত

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

যশোরের বাঘারপাড়ায় ইটভাটার কারণে আখ খেত পুড়ে যাচ্ছে। প্রায় ৩৫ বিঘা জমির আখ খেত ভাটার কালো ধোঁয়ায় পুড়ে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সাতজন কৃষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কৃষকদের অভিযোগ ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ও কয়লার আগুনে তাদের আখ খেত পুড়ে যাচ্ছে।

গ্রামবাসী ও কৃষকদের অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার সোনাখোলার মাঠের বেশির ভাগ জমিতে আখের চাষ হয়। এছাড়া মাঠে বোরো এবং আমন ধানের চাষ হয়ে থাকে। জমিতে ভাদ্র মাসে আখের বীজ রোপণ করতে হয়। আষাঢ় মাস থেকে আখ বিক্রি শুরু হয়।

২০১৩ সালে বাঘারপাড়া উপজেলার জামদিয়া গ্রামে যশোর-নড়াইল সড়কের পাশে কৃষি জমিতে মেসার্স সিটি ব্রিকস-১ নামে ইটভাটা গড়ে ওঠে। আর এ ভাটাই কৃষকের কাল হয়ে দেখা দেয়।

কৃষকরা জানান, প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসে ভাটায় ইট পোড়ানো শুরু হয় এবং তা আষাঢ় মাস পর্যন্ত চলে। এই ইটভাটার চিমনি কিছুটা ছোট। ইট পোড়ানোর সময় কালো ধোঁয়া এলাকায় ছেয়ে যায়। এ ধোঁয়ার সাথে অসংখ্য কয়লার ছোট ছোট টুকরো বের হয়। এতে আগুন থাকে। কয়লার টুকরোগুলো সরাসরি আখ ও ধান গাছে গিয়ে পড়ে পাতা পুড়ে যায়।

তারা জানান, ইটভাটা তৈরি পর গত ১০ বছর ধরে আশেপাশের খেতের ফসলের এমন ক্ষতি হচ্ছে। মাঝে মাত্র এক বছর ফসলের কোনো ক্ষতি হয়নি। এবার চৈত্র মাসে একদিন এবং আষাঢ় মাসে একদিন কালো ধোঁয়া এবং কয়লার আগুনে আশপাশের আখ খেতের পাতা পুড়ে গেছে। এতে ৩০ থেকে ৩৫ বিঘা জমির আখ খেত নষ্ট হয়েছে। এ ভাটার কারণে প্রতি বছর আখ চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়। এবার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।

আখ সাধারণত পাঁচ-ছয় হাত লম্বা হয়। বিপর্যয়ের কারণে এবার হয়েছে সাড়ে তিন থেকে চার হাত। ফসলের ক্ষতির কারণে ভাটার মালিক এবার ১০-১২ জন আখ চাষীকে পাঁচ হাজার থেকে নয় হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়েছেন। এ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও গ্রামবাসীর মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জামদিয়া গ্রামের কৃষক সুকান্ত গাঙ্গুলী বলেন, আমার ছয় কাঠা জমিতে আখ রয়েছে। বছরে কাঠা প্রতি দেড় হাজার টাকা করে লিজ নিয়ে ওই জমিতে আমি আখ চাষ করি। ইটভাটার কালো ধোঁয়া আর কয়লার আগুনে আমার পুরো জমির আখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাইজপাতা পুড়ে আখ লম্বা হয়নি। গতবছর ওই জমি থেকে আমি ৯০ হাজার টাকার আখ বিক্রি করেছিলাম। এবার ৬৫ হাজার টাকার আখ বিক্রি করেছি। প্রতি বছর ইটভাটার ধোঁয়া ও আগুনে ফসল পুড়ছে। ইটভাটার মালিকের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতে গেলে তিনি মামলার ভয় দেখান। আমরা ক্ষতির শিকার কৃষকেরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

দাঁতপুর গ্রামের কৃষক টুকু মিয়া বলেন, অন্যের কাছ থেকে সাত হাজার টাকায় পাঁচ কাঠা জমি নিয়ে আখ চাষ করছি। ইটভাটার ধোঁয়া ও আগুনে আমার খেতের সব আখ মারাত্বকভাবে ক্ষতি হয়েছে। গত বছর আমি ৬০ হাজার টাকার আখ বিক্রি করেছিলাম। এবার ৩১ হাজার টাকার আখ বিক্রি করেছি। এ ক্ষতি দেখার কেউ নেই। যদিও ইটভাটার মালিক ফসলের এ অবস্থা দেখে আমাকে নয় হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, গ্রামের এ মাঠে অন্যান্য কৃষকেরও একই অবস্থা হয়েছে। প্রায় ৩৫ বিঘা জমির আখ খেত পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে।

এ নিয়ে ইটভাটার মালিক আব্দুল মালেক বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার ছেলে রিপন হোসেন বলেন, তার বাবা মালিক হলেও তিনি ইটভাটা দেখাশুনা করেন। ভাটার কারণেই কিছু আখ খেতের ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত ১৫ জনের বেশি কৃষককে ক্ষতিপূরণ দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন কৃষকদের ভয়ভীতি দেখানোর বিষয়টি ঠিক না। ভাটার আশেপাশের মাঠে ফসলের যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য আমরা কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ বছর ৬০ ফুট উচ্চতার চিমনি বাড়িয়ে ১২০ ফুট করা হবে। এছাড়া, ভাটায় ডিজিটাল লোড দেয়া হবে। আশা করছি আগামী বছর থেকে ফসলের আর কোনো ক্ষতি হবে না।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ইটভাটা আশপাশের ফসলের ক্ষতি করে। জামদিয়ার ইটভাটার ধোঁয়া ও আগুনে আখের ক্ষতির ব্যাপারে কোনো কৃষক অভিযোগ করেননি। তারপরও দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের খেত পরিদর্শন করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনম আবুজর গিফারী বলেন, ইটভাটার কারণে আখ খেত নষ্ট হওয়ার কথা তিনি শুনেছেন। দুই-এক দিনের মধ্যে পরিদর্শন করে বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।

এ ব্যাপারে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাঈদ আনোয়ার বলেন, নতুন ইটভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে না। পুরাতন ভাটার পরিবেশগত ছাড়পত্র নবায়ন বন্ধ রয়েছে। মেসার্স সিটি ব্রিকস-১ ইটভাটার ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হবে। পরিবেশ দূষণ ও ফসলের ক্ষতি হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!