খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৯ মে, ২০২৪

Breaking News

  ৭ ব্যক্তিকে জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী
  নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, নিহত ১৭

বাগেরহাটে ব্যাংক কর্মকর্তার জমি ও বসতবাড়ি দখল চেষ্টার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট

বাগেরহাটের চিতলমারীর খড়মখালি গ্রামে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা হরিদাস মজুমদারের জমি ও বসত ঘর দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে হরিসভা আশ্রম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। নিজের ক্রয়কৃত জমি শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ দখল করার জন্য বিভিন্ন দপ্তরের দারস্ত হয়েছেন অসহায় এই ব্যাংক কর্মকর্তা। তারপর নিজের বসত ঘরে শান্তিতে থাকতে পারছেন না তিনি। প্রতিনিয়ত আশ্রম কর্তৃপক্ষের বাঁধার সম্মুখিন হচ্ছেন। তবে আশ্রম কর্তৃপক্ষ বলছে আশ্রমের পক্ষে মামলার রায় হয়েছে, এই জমির প্রকৃত মালিক আশ্রম কর্তৃপক্ষ। জমির দখল নিয়ে প্রায় উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হওয়ায় এলাকাবাসীও দ্রুত সমাধান চায়।

ব্যাংক কর্মকর্তা হরিদাস মজুমদার বলেন, ১৯৮৯ ও ৯১ সালে চিতলমারী খড়মখালী মৌজায় খড়মখালী দূর্গা মন্দিরের সামনে সূর্যকান্ত চক্রবর্তী, প্রফুল্ল বৈরাগী, বিজেন ও বিধানের কাছ থেকে ৪টি দলিলে ২১ শতক জমি ক্রয় করি। পরবর্তীতে টিনসেড ঘর তৈরি করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস শুরু করি। চাকুরীর সুবাদে এবং একমাত্র সন্তানের পড়াশুনার জন্য বসতবাড়ি ফেলে রেখে শহরে ভাড়া থাকতাম। এই সুযোগে আশ্রম কর্তৃপক্ষ বসত ঘরের কাঠের বেড়া ও বিভিন্ন মালামাল খুলে নিয়ে গেছে। এরপরে আশ্রম কর্তৃপক্ষ তাদেরকে বসত ভিটা থেকে উচ্ছেদের পায়তারা চালাচ্ছে। আমার মা পারুল রানীর সমাধি এই জমিতে। এমনকি স্ত্রীসহ মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছে এমন দাবি করেন এই ব্যাংক কর্মকর্তা।

তিনি আরও বলেন, এই জমির বৈধ দলিল ও বিআরএস রেকর্ড হরিদাসের নামে রয়েছে। সেই অনুযায়ী হাল সনের খাজনাও দেওয়া হয়েছে। এর পরেও আশ্রম কর্তৃপক্ষ গায়ের জোরে জমি থেকে উচ্ছেদের পায়তারা চালাচ্ছে আশ্রমের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মন্ডল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা।

হরিদাস মজুমদারের স্ত্রী কল্পনা মজুমদার বলেন, পৃথিবীতে এই জমি ছাড়া আমাদের আর কোন জমি নেই। পুলিশ, প্রশাসন, আদালত কারও কথাই মানেন না শান্তুনু রানা রুবল, মিহির কুমার রায়সহ আশ্রমের সদস্যরা। বৃদ্ধ বয়সে স্বামীকে নিয়ে নিজের বসত ভিটায় থাকতে প্রশাসনের উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

স্থানীয় প্রেমদাস মন্ডল, আবু হোসেন লাল কাজী, এমদাদুল দিবাকর মুখার্জী, প্রশেন্জিত ভট্টাচার্য, গোলক চন্দ্র মন্ডলসহ কয়েকজন বলেন, হরিদাস মজুমদার এই জমিতে ঘর তৈরি করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। কিন্তু পরবর্তীতে জানতে পারি এই জমি নিয়ে আশ্রমের সাথে বিরোধ রয়েছে। যদি আশ্রমের জমি হয়, তাহলে যখন হরিদাস বসবাসের জন্য ঘর তৈরি করল তখন আশ্রম কর্তৃপক্ষ বাঁধা দিল না কেন। মূলত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আড়ালে অসহায় মানুষের জমি দখলের পায়তারা বলে দাবি করেন তারা।

স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সূর্যকান্ত মন্ডল বলেন, এই জমিতে দীর্ঘদিন ধরে হরিদাস মজুমদার বসবাস করেছেন। এখন আশ্রম কর্তৃপক্ষের এই দাবি অন্যায় ও অযৌক্তিক।

চিতলমারী উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি শেখ আতিয়ার রহমান বলেন, বিবাদপূর্ণ এই জমিতে বসতবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করেছেন হরিদাস ও তার পরিবার। কিন্তু তখন কোন দাবিদার ছিল না। আশ্রম যেমন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান , হরিদাসেরও আর কোন জমিজমা নেই। দুই পক্ষকেই কিছু ছাড় দিয়ে এই বিবাদ মিটিয়ে ফেলার অনুরোধ করেন এই রাজনীতিবিদ।

হরিদাস মজুমদারের অভিযোগ অস্বীকার করে আশ্রমের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ মন্ডল জানান, হরিদাস মজুমদার যাদের কাছ থেকে জমি ক্রয় করেছেন, তারা আগেই আশ্রম কর্তৃপক্ষকে এই জমি দান করে দিয়েছেন। এই জমি নিয়ে আদালতে দায়েরকৃত মামলায় আশ্রমের পক্ষে রায় পেয়েছি। এই জমির মালিক আশ্রম কর্তৃপক্ষ।

চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এইচ এম কামরুজ্জামান খান বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে মামলা চলমান রয়েছে। বিবাদমান জমিতে যাতে কোন প্রকার বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয় সেজন্য আমাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।

চিতলমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়াল বলেন, দুই পক্ষকে নিয়ে আমরা একাধিকবার শালিস মীমাংসার জন্য বসেছি। কিন্ত কোন পক্ষই কারও কথা শোনে না। আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। জানতে পেরেছি উচ্চ আদালত থেকে আশ্রমের পক্ষে রায় হয়েছে । আদালতের বাইরে আর কিছু বলব না।

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!