খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড

বহুল আলোচিত ফোর মার্ডার মামলার রায় ২৯ আগস্ট

রুহুল কুদ্দুস, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার কলারোয়ার আলোচিত খলিসা গ্রামে একই পরিবারের স্বামী স্ত্রী ও তাদের দু’সন্তানকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় আদালতে রোববার (২২ আগস্ট) উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। সাতক্ষীরার দায়রা ও জজ আদালতের বিচারক শেখ মফিজুর রহমান আসামীপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানী শেষে আগামি ২৯ আগস্ট মামলার রায় ঘোষনার জন্য দিন ধার্য করেছেন ।

রাষ্ট্রপক্ষের পিপি এড. আব্দুল লতিফ বলেন, মামলার ১৮ জন সাক্ষীর জবানবন্দি, রায়হানুলের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, জব্দ তালিকা ও বাদির দায়েরকৃত এজাহার সাক্ষ্য প্রদানকালে হুবহু মিল থাকায় আসামী রায়হানুলের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তিনি আসামীর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দাবি করেন।
অপরদিকে আসামীপক্ষের আইনজীবী এড. এসএম হায়দার আসামী রায়হানুলের ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে বিচারক বিলাস কুমার মন্ডল আসামী স্বীকারোক্তি না দিলে তাকে আর পুলিশে না দিয়ে জেলখানায় পাঠানো হবে এমন কথা না বলায় সে বাধ্য হয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে আদালতে উপস্থাপন করেন।

আসামী পক্ষের আইনজীবী এড. এসএম হায়দার বলেন, আসামীর সাথে তার ভাই ও ভাবীর কোন বিরোধ ছিল না। তবে জমি নিয়ে প্রতিবেশী আকবরের সঙ্গে তাদের মামলা ছিল। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আকবর আলী তাদের জামিতে বাড়ির ভিত তৈরি করেছিল। এ ঘটনায় মামলা ছাড়াও কয়েকটি সাধারণ ডায়েরীও আছে। এ ছাড়া ২০১৯ সালে শাহীনুরের বিরুদ্ধে কলারোয়া থানায় একটি মাদকের মামলা আছে। মাদকের টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে এ ধরণের হত্যাকান্ডও ঘটতে পারে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিষা গ্রামের শাহজাহান ডাক্তারের বড় ছেলে শাহীনুর রহমান আট বিঘা জমিতে পাঙ্গাস মাছ চাষ করেন। মেঝ ছেলে আশরাফ আলী মালয়েশিয়ায় থাকেন। ছোট ছেলে রায়হানুর রহমান বেকার। বেকারত্বের কারণে বড় ভাই শাহীনুরের সংসারে সে খাওয়া দাওয়া করতো। শারীরিক অসুস্থতার কারণে কোন কাজ না করায় গত বছরের ১০ জানুয়ারি স্ত্রী তালাক দেয় রায়হানুর রহমানকে। সংসারে টাকা দিতে না পারায় শাহীনুৃরের স্ত্রী দেবর রায়হানুরকে মাঝে মাঝে গালমন্দ করতো।

এরই জের ধরে গত ১৪ অক্টোবর রাতে ভাই মোঃ শাহীনুর রহমান(৪০) ভাবী সাবিনা খাতুন(৩০), তাদের ছেলে ব্রজবক্স সরকারি প্রাথমিক বিদ্যূালয়েরে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র সিয়াম হোসেন মাহী (১০) ও মেয়ে একই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী তাসমিন সুলতানাকে (৮) কোমল পানীয় এর সাথে ঘুমের বাড়ি খাওয়ায় রায়হানুল। পরদিন ১৫ অক্টোবর ভোর চারটার দিকে হাত ও পা বেঁধে তাদেরকে একে একে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
এসময় হত্যাকারী ওই পরিবারের ৪ মাসের শিশু মারিয়াকে হত্যা না করে লাশের পাশে ফেলে রেখে যায়। এ ঘটনায় নিহত শাহীনুরের শ্বাশুড়ি কলারোয়া উপজেলার উফাপুর গ্রামের রাশেদ গাজীর স্ত্রী ময়না খাতুন বাদি হয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে থানায় ১৫ অক্টোবর একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার তদন্তে নেমে সিআইডির সাতক্ষীরা অফিসের পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম সন্দিগ্ধ আসামী হিসেবে শাহীনুরের ভাইর রায়হানুলকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত রায়হানুলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ২১ অক্টোবর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বিলাস মন্ডলের কাছে একাই হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। তদন্তভার গ্রহণের এক মাস আট দিন পর ২৮ জনের সাক্ষী ও রায়হানুলের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি পর্যালোচনা শেষে ২৪ নভেম্বর মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা রায়হানুলকে একমাত্র আসামী করে ৩২৮ ও ৩০২ ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

পরবর্তীতে দায়রা জজ আদালতে মামলার ১৮ জন সাক্ষী ও এক জন সাফাই সাক্ষী দেন। তবে পরবর্তীতে আসামীপক্ষের আইনজীবী এড. ফরহাদ হোসেন রায়হানুলের ১৬৪ ধারার জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন জানালে আদালত তা নথিভুক্ত করে।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি এড. আব্দুল লতিফ শাহীনুরসহ তার পরিবারের চারজনকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় রায় আগামি ২৯ আগস্ট বলে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!