করোনা ভাইরাসের মধ্যেও যশোরের চৌগাছার প্রখ্যাত পীর বলু দেওয়ানের মেলা হবে কিনা এই নিয়ে সংশয়ে আছেন ব্যবসায়ী সহ এলাকাবাসী।প্রতি বছর ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার এলেই চৌগাছার নারায়ণপুর ইউনিয়নের হাজরাখানা গ্রামে শুরু হয় এই মেলা। তবে এই বছর করোনা ভাইরাসের কারণে মেলাটি চলবে কি না এই নিয়ে দুচিন্তায় আছেন ব্যবসায়ী সহ মেলাটির আয়োজক কমিটি। ইতিমধ্যে অনেক ব্যবসায়ীরা এসেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে।
চৌগাছার অন্যতম একটি গ্রাম হচ্ছে হাজরাখানা। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিতে হয় এ গ্রামটিতে যেতে হলে। এই গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই বিভিন্ন ব্যবসার সাথে জড়িত। অনেকে করেন চাষাবাদ। এই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা মহাকাবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের কপোতাক্ষ নদের পাড়ে চিরনিদ্রায় শায়িত এ অঞ্চলের প্রখ্যাত পীর বলুহ দেওয়ান (র.)।
কোনো রকম প্রচার প্রচারণা ছাড়াই প্রতি বছর ভাদ্র মাসের শেষ মঙ্গলবার এই গ্রামটিতে বসে বিরাট বড় এক মেলা। প্রতি বছর মেলাটি দেখতে হাজারও মানুষের ঢল নামে এখানে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে নানা ধরনের ব্যবসায়ীরা বেশ আগেভাগেই হাজির হয়ে পসরা সাজিয়ে বসেন। সপ্তাহ খানেক ধরে চলা মেলাতে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা। এই গ্রাম সহ আশে পাশের বেশ কয়েকটি গ্রামে এখনও এই প্রথা চালু আছে যে, ঈদ বা বড় কোন অনুষ্ঠানে মেয়ে জামাইকে দাওয়াত না করলেও এই মেলায় মেয়ে জামাইকে দাওয়াত করে আনতে হয়। কিন্তু গত দুই বছর মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে মেলা বন্ধ থাকায় সেই আনন্দে পড়ে ভাটা। সব কিছু কাটিয়ে এ বছর মেলা হবে এমন আশায় বুক বেধেছে গ্রামবাসীসহ ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার সকালে পৌর সদরে একাধিক মোড়ে বিভিন্ন অচেনা ব্যক্তিকে শিশু খেলনা বিক্রি করতে দেখা যায়, এমনকী কপোতাক্ষ ব্রিজের পাশেও বসে শিশু খেলনা বিক্রি করছে অনেকে। হঠাৎ করেই এ ধরনের ভাসমান ব্যবসায়ীদের আনাগোনা জানান দেয় চলে এসেছে ভাদ্র মাস এমনটিই বলছেন এলাকাবাসী।
গ্যাস দিয়ে ফুলিয়ে রাখা হরেক রকমের বেলুন নিয়ে বাজারের এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত ছুটে বেড়াচ্ছেন একাধিক ব্যক্তি। ৪০ থেকে ২শ টাকা দরে বিক্রি করছেন এক একটি বেলুন।
এ সময় কথা হয় সুদুর বগুড়ার বিভিন্ন ব্যবসায়িদের সাথে। তারা বলেন, মূলত বলুহ মেলাকে কেন্দ্র করে এক মাস আগেই তারা এলাকাতে চলে আসেন। চৌগাছায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে তারা একাধিক ব্যবসায়ী ওই বাসাতেই থাকেন। বর্তমানে উপজেলা সদরে সকাল হতে রাত অবধি চলে বেচাকেনা। মেলা শুরু হলে সেখানে বেচাকেনা শেষে ফিরবেন নিজ জেলাতে।কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে শেষ কি হবে এই নিয়ে সংশয় এই সকল ব্যবসায়ীরা।
এদিকে ঐতিহ্যবাহী এই বলুহ মেলা উপলক্ষে বেশ আগেভাগেই উপজেলার ব্যবসায়ীরা কাঠের ফার্নিচার বানাতে ব্যস্ত। দুই বছর মেলা বসছে না, এ বছর মেলা হতে পারে সেই ভাবনা থেকে তারা এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ফার্নিচার ব্যবসায়ী আব্দুল গনি বলেন, সরকার ধীরে ধীরে সব কিছুই খুলে দিচ্ছে। সেকারণে মনে হচ্ছে এ বছর মেলা বসবে, তাই কিছু ফার্নিচার তৈরি করছি, দেখা যাক শেষমেষ কি হয়।
হাজারাখানা গ্রামের বাসিন্দা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মনিরুজ্জামান মিলন বলেন, ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক বলুহ মেলা। বৈশ্বিক মহামারির কারণে গত দুই বছর মেলা বন্ধ আছে। পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক হয় সেক্ষেত্রে মেলা বসানোর ব্যাপারে কাজ করা হবে।
খুলনা গেজেট/কেএম