পশ্চিম বনবিভাগের আওতাধীন সাতক্ষীরা রেঞ্জের কৈখালী স্টেশন কর্মকর্তা সাদ আল জামিরের বিরুদ্ধে টেংরাখালি বন টহল ফাঁড়ির নির্মাণাধীন ভবনের সিমেন্ট চুরি করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে সিমেন্ট চুরি করে বিক্রির কাজের ব্যবহৃত দুইটি ট্রলারসহ ১০০ ব্যাগ সিমেন্ট আটক করেছে স্থানীয় জনতা। সোমবার (১০ জুলাই) সন্ধ্যায় শ্যামনগর উপজেলার হরিনগর বাজারের মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সে সিমেন্টগুলো হস্তান্তরের সময় স্থানীয়রা তা আটক করে শ্যামনগর থানায় খবর দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের টেংরাখালি বন টহল ফাঁড়ি থেকে দুটি ট্রলারযোগে ১০০ ব্যাগ সিমেন্ট নিয়ে বনবিভাগের সিপিজির সদস্য ইউনুচ আলী হরিনগর বাজারের নৌ ঘাটে রাখে। সেখান থেকে হরিনগর বাজারের মোঃ সাইফুল্লাহ টুটুলের মালিকানাধীন মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সে শ্রমিক দিয়ে সিমেন্টের ব্যাগগুলো নামানো হয়। এসময় সন্দেহ হলে স্থানীয়রা সিমেন্টগুলো জব্দ করে শ্যামনগর থানা পুলিশকে খবর দেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের কৈখালী স্টেশনের আওতাধীন টেংরাখালি বনটহল ফাঁড়ির নতুন ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এই কাজ দেখভালের দায়িত্ব পান কৈখালী স্টেশন কর্মকর্তা সাদ আল জামির। তিনি কাজের সাইড থেকে গোপনে ১০০ ব্যাগ সিমেন্ট সরিয়ে ফেলেন। পরে তার স্টেশনের একটি ট্রলার ও ভাড়াটে একটি ট্রলারে করে ১০০ ব্যাগ ফাইভ রিং সিমেন্ট হরিনগর বাজারের মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সে বিক্রির চুক্তি করেন। পরে ওই সিমেন্ট বিক্রিকালে স্থানীয় জনতা তা আটক করে। এদিকে, খবর পেয়ে পুলিশ আসার আগেই বনবিভাগের বোট মাঝি ও সিপিজির সদস্য ইউনুচ আলী ট্রলার রেখে কৌশলে পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে সিপিজির সদস্য ইউনুচ আলীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, কৈখালী স্টেশন কর্মকর্তা সাদ আল জামিরের নির্দেশে টেংরাখালি ফাঁড়ি থেকে ১০০ ব্যাগ সিমেন্ট হরিনগর বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে গিয়েছিলাম। এছাড়া আমি আর কিছু জানি না।
সিমেন্ট বহনকারী শ্রমিকরা জানান, সিপিজির সদস্য আমাদের ঠিক করে এই বলে যে, টেংরাখালি ফাঁড়ি থেকে ১০০ ব্যাগ সিমেন্ট হরিনগর বাজারে নামিয়ে দিতে হবে।
হরিনগর বাজারের মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের মালিক মোঃ সাইফুল্লাহ টুটুল বলেন, ভেটখালি বাজারের ব্যবসায়ী ইয়াছিন আমাকে এই সিমেন্ট ঠিক করে দেয়। আমি প্রতি ব্যাগ সিমেন্ট ৫৩০ দরে কিনে নিচ্ছি। কিন্তু কারা সিমেন্ট নিয়ে আসছে তা আমি জানি না। তবে ইয়াছিন আমাকে বলেছিল ১০০ ব্যাগ ফাইভ রিং সিমেন্ট বোটে করে নিয়ে তোমার দোকানে তুলে দিচ্ছে। এছাড়া আমি আর কিছু জানি না।
কৈখালী স্টেশন কর্মকর্তা সাদ আল জামির বলেন, এসিএফ স্যার কাজটি আমাকে দেখার দায়িত্বে দিয়েছেন। ফাইভ রিং সিমেন্টর মান ভালো না হওয়ায় পরিবর্তন করতে পাঠিয়েছি। এসময় বিক্রি করা হচ্ছে কেন জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
সাতক্ষীরা রেঞ্জর সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) কে, এম, ইকবল হোসেন চৌধুরী বলেন, সিমেন্ট পরিবর্তন করা বা বিক্রি করার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। বনবিভাগের কোনো সদস্য এ ধরনের কাজ করতে পারে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা করবে ঠিকাদার। আমাদের কোন স্টাফ করতে পারে না। যদি এ ধরনের কাজ করে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া কৈখালী স্টেশন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনের অভিযোগও রয়েছে বলে জানান তিনি।
শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, খবর পেয়ে এসআই সেলিম রেজাকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে মালামাল জব্দ করা হয়েছে। তদন্ত অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খুলনা গেজেট/এসজেড