খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

বদলে গেছে খুলনার প্রবেশদ্বার জিরো পয়েন্ট

একরামুল হোসেন লিপু 

বিভাগীয় শহর খুলনার প্রবেশদ্বার জিরো পয়েন্ট এক সময় খুবই দূরাবস্থায় ছিলো। ছিলো অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। সংযোগ সড়কগুলো ছিলো ভাঙ্গাচোরা। সড়কে কার্পেটিং ছিলো না। কোথাও সড়কে ইট বিছানো ছিলো। বছরের অধিকাংশ সময় জিরো পয়েন্টসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা ধুলায় আচ্ছন্ন থাকতো। সামান্য বৃষ্টি হলেই কর্দমাক্ত অবস্থা বিরাজ করতো। যানবাহন চলাচলে কোন শৃঙ্খলা ছিল না। যানজট লেগে থাকত সারাক্ষণ। যানজটের কারণে যানবাহনের হর্ন আর হুইসেলের শব্দে পথচারী, পার্শ্ববর্তী দোকানদার ও ব্যবসায়ীদের কান ঝালাপালা থাকতো সারাক্ষণ। সড়কের পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা ছিলো না। বর্ষা মৌসুমে সড়কের উপর পানি জমে থাকতো। জিরো পয়েন্টের এমন দৃশ্য ছিলো দীর্ঘদিনের। সব মিলিয়ে যানবাহনের চালক, পথচারী, পার্শ্ববর্তী দোকানদার এবং ব্যবসায়ীদের জন্য অস্বস্তিকর ছিলো।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) সরজমিনে গিয়ে চিরচেনা সেই জিরো পয়েন্টকে অনেকটা অচেনা মনে হয়েছে। হঠাৎ অনেকের কাছে এমন অচেনাই মনে হবে। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। নেই কোন ধুলাবালি, যানজট, যানবাহনের হর্ন কিংবা হুইসেলের শব্দ। কংক্রিটের ঢালাই দেওয়া প্রশস্ত সড়ক। যানবাহনগুলো জিরো পয়েন্টের বৃত্তাকার ঘেঁষে আসা-যাওয়া করছে শৃঙ্খলার সাথে । পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ড্রেন । গোল চত্বরের বৃত্তাকারের পাশ দিয়ে পথচারীদের হাঁটার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে প্রশস্ত ওয়াকওয়ে। ইন্টার সেকশনের সড়ক গুলোর মাঝখানে ডিভাইডার তৈরী করা হয়েছে। এছাড়াও পথচারীদের চলাচলের জন্য সড়কের পাশের ফুটপাতগুলো আধুনিকায়ন করা হয়েছে।

ইন্টার সেকশন নির্মাণ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে জিরো পয়েন্ট (গোলচত্বরে) নির্মিত হয়েছে ইন্টারসেকশন। ইতিমধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি রয়েছে শুধু রোড মার্কিং এর কাজ। এরপর ২য় পর্যায় জিরো পয়েন্টের গোল চত্বরের ওই স্থানটিকে আরো আকর্ষণীয় এবং দৃষ্টিনন্দন করার জন্য গোল চত্বরের বৃত্তাকারের ভেতর স্থাপন করা হবে দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য ও পানির ফোয়ারা।

ভৌগলিক কারণে খুলনা নগরীর প্রবেশদ্বার জিরো পয়েন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল। খুলনা সিটি বাইপাস জাতীয় মহাসড়ক, খুলনা-চুকনগর-সাতক্ষীরা আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং রূপসা সেতুর এপ্রোচ সড়কের সংযোগস্থল এটি। প্রতিনিয়ত এ সংযোগ সড়কগুলি দিয়ে জিরো পয়েন্ট ক্রস করে হাজা‌রো যানবাহন চলাচল করে থাকে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর জিরো পয়েন্টের সংযোগ সড়কগুলি দিয়ে যানবাহন চলাচল  বৃদ্ধি পায়। বিভাগীয় শহর খুলনার প্রবেশদ্বার হলেও দীর্ঘদিন যাবৎ জিরো পয়েন্টের সংযোগ সড়কগুলির বেহাল অবস্থা বিরাজ করছিলো। যানবাহন চলাচলে ছিলনা কোন শৃঙ্খলা। পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে গোলচত্বরের আশেপাশে কর্দমাক্ত পরিবেশ বিরাজ করতো। এ সময় যানবাহন চলাচল এবং পথচারীদের যাতায়াতে মারাত্মক দূর্ভোগ সৃষ্টি হতো।

খুলনা নগরীর প্রবেশদ্বার জিরো পয়েন্টে যানবাহন চলাচল সহজীকরণ, যানজট নিরসন, যানচলাচলে শৃঙ্খলা এবং পযঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রেখে জিরো পয়েন্ট (গোলচত্বর) কে আধুনিকায়ন আকর্ষণীয় এবং দৃষ্টিনন্দন করার জন্য ২০২২ সালে খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) জিরো পয়েন্টে ইন্টারসেকশন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।

সওজ সূত্রে জানা যায, এরই ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর খুলনা সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ আসলাম আলী মাহবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিঃ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ইন্টারসেকশন নির্মাণের কার্যাদেশ প্রদান করে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩০ কোটি ৮৯ লক্ষ ৯২ হাজার ৪৭৮ টাকা। কার্যাদেশ পাওয়ার পর ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইন্টারসেকশন নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করে। ইন্টারসেকশের গোলচত্বরটি ৭২ মিটার বৃত্তাকার। বড় বৃত্তাকারের মাঝখানে ছোট আর ১টি বৃত্তাকার দুই বৃত্তাকারের ভেতর দিয়ে ২১ মিটার প্রশস্ত ওয়াকওয়ে তৈরি করা হয়েছে। ইন্টারসেকশন টি বর্তমান সড়কের লেভেল থেকে ২ ফুট উঁচু করা হয়েছে। ২য় পর্যায় বৃত্তাকারের মাঝখানে স্থাপিত হবে আধুনিক মেটালিক ভাস্কর্য, সাথে থাকবে দৃষ্টিনন্দন এবং আকর্ষণীয় পানির ফোয়ারা।

রোড সেফটি ডিভিশনের মাধ্যমে ইন্টারসেকশের ডিজাইন তৈরী করা হয় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের অভিজ্ঞ প্রফেসর এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের প্রফেসর দিয়ে জিরো পয়েন্টের বৃত্তাকারের ভেতর যে ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হবে সেটির ডিজাইন তৈরী করা হয়। ইন্টাসেকশনটি নির্মাণের ফলে জিরো পয়েন্টের খুলনায় প্রবেশকালীন মানুষের এই নগরী সম্পর্কে সুন্দর একটা ধারণা জন্মাবে। ইন্টার সেকশনের ডিজাইন তৈরী করার সময় এই বিষয়টা মাথায় রাখা হয়।

কংক্রিটের ঢালাইকৃত সড়কের মাঝখানে ৩ ফুট ডিভাইডারের ভেতর বসানো থাকবে সোডিয়াম লাইট। বৃত্তাকার থেকে আফিলগেট অভিমুখী সড়কটি ১৯৮ মিটার, রুপসা ব্রিজ অভিমুখী সড়কটি ৪৯ দশমিক ৫ মিটার, সাতক্ষীরা অভিমুখী সড়কটি ১০৮ দশমিক ৫ মিটার এবং ময়লাপোতা অভিমুখী সড়কটি ২৩ দশমিক ৫ মিটার পর্যন্ত রিজিড পেভমেন্ট বা আরসিসি ঢালাই রোড নির্মাণ করা হয়েছে । এছাড়া জিরো পয়েন্টে নির্মিত বৃত্তাকার এবং ইন্টারসেকশনের সড়কগুলি মধ্যপ্রাচ্যের আদলে ঝকঝকে আলোকসজ্জায় রূপান্তরিত করা হবে।

ইন্টার সেকশন নির্মাণ কাজের তদারকির কাজে নিয়োজিত খুলনা সওজ ‘র উপ-সহকারী প্রকৌশলী এইচ এম শোয়েব ও গোপাল কুমার সাহা খুলনা গেজেটকে বলেন, খুলনা শহরের প্রবেশদ্বার জিরো পয়েন্টে ইন্টার সেকশন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। জিরো পয়েন্টকে আরো আকর্ষণীয় এবং দৃষ্টিনন্দন করার জন্য বৃত্তাকারের ভিতর মেটালিক ভাস্কর্য স্থাপন করা হবে। আলোকসজ্জ্বার ব্যবস্থা করা হবে। একইসাথে ময়লাপোতা হতে জিরো পয়েন্ট এবং জিরো পয়েন্ট হতে কুদিরবটতলা পর্যন্ত সড়কের বিউটিফিকেশনের জন্য ৩৫ কোটি টাকার প্রস্তাবনা তৈরি করে মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিঃ ‘র প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ আশরাফ আলী বলেন, খুলনার প্রবেশদ্বারে ইন্টার সেকশন নির্মাণের কাজটি আমরা শুরু থেকেই কাজের গুণগত মান বজায় রেখে সম্পন্ন করেছি। সিডিউল অনুযায়ী আমাদের যে কাজগুলো ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বাকি রয়েছে শুধু রোড মার্কিং এর কাজ। ৩০ এপ্রিল ইন্টারসেকশনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!