করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় এ বছর আগের মতো ‘বই উৎসব’ হবে না। এবার ভার্চুয়ালি হবে পাঠ্যপুস্তকের উদ্বোধন। উদ্বোধনের পরে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে পাঠ্যপুস্তক। এ জন্য খুলনায় সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে থানা ও উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে বিদ্যালয়গুলোতে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ শুরু হয়েছে। নতুন বছরের প্রথমদিন খুলনায় প্রায় ১১ লাখ পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হবে।
খুলনার নূরনগর সদর থানা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস প্রাঙ্গণে সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষকরা সিরিয়াল অনুযায়ী তাদের চাহিদা মাফিক পাঠ্যপুস্তক সংগ্রহ করছেন। কেউ কেউ বই নিয়ে মাঠের এক পাশে নিয়ে আসছেন। কেউ কেউ বই বিদ্যালয়ে নেওয়ার জন্য প্যাকেটিং করছেন। আবার কেউ পরিবহণে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে বিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন।
এসময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্লাটিনাম জুট মিলের এক শিক্ষক বলেন, বই পেয়েছি। এখন বিতরণের জন্য বিদ্যালয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তবে করোনা পরিস্থিতিতে কিভাবে বই বিতরণ করা হবে এখনো লিখিত কোন নির্দেশনা আমরা পাইনি। নির্দেশনা আসলে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, করোনা পরিস্থিতির কারণেই এবারের উৎসব বাতিল করা হয়েছে। অন্যান্য বছর প্রধানমন্ত্রী শিশু কিশোরদের সঙ্গে নিয়ে উৎসব উদ্বোধন করেন। এবার সেটি হবে ভার্চুয়ালি। নতুন বছরের পাঠ্যপুস্তক এবার ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৩১ ডিসেম্বর নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তকের উদ্বোধন করা হবে। আর শিক্ষার্থীরা বই হাতে পাবে জানুয়ারির প্রথম দিনে। খুলনায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথমদিন পাঠ্যপুস্তক পৌছে দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
খালিশপুর আল-ফালাহ্ একাডেমীর প্রধান শিক্ষক রমজান আলী বলেন, পাঠ্যপুস্তক পেয়েছি। শিক্ষা অফিসের নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে বই বিতরণ করা হবে। সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, খুলনা জেলায় বাংলা ও ইংরেজি ভার্ষন মিলিয়ে সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১ হাজার ৭২৭টি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১ হাজার ১৫৯টি, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেন রয়েছে ৫৬৮টি। এছাড়াও মাদ্রাসা রয়েছে ১৭১টি। এবার থানা ও উপজেলা অফিস থেকে ১ হাজার ৭২৭টি সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০ লাখ ৯৬ হাজার ৪৬৭টি বই শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করা হবে।
এর মধ্যে খুলনা সদরে ৩ লাথ ২১ হাজার ৩৩টি, ডুমুরিয়ায় ১ লাখ ২৪ হাজার ৮০টি, রূপসায় ৮৫ হাজার ৬৫০টি, কয়রায় ৯২ হাজার ৪০৬টি, তেরখাদায় ৭২ হাজার ৯২৪টি, দাকোপে ৬৪ হাজার ৫০টি, দিঘলিয়ায় ৬২ হাজার ৯৬৪টি, পাইকগাছায় ১ লাখ ২৩ হাজার ৬৯০টি, ফুলতলায় ৬৩ হাজার ৪২০টি ও বটিয়াঘাটায় ৮৬ হাজার ২৫০টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হবে। তবে আগেরবারের থেকে এবার বই বিতরণে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বই বিতরণ করা হবে।
এ বিষয়ে খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এএসএম সিরাজুদ্দোহা বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার আগের মতো পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হবে না। ইতোমধ্যে খুলনায় প্রাথমিকের শতভাগ বই এসেছে। বছরের প্রথমদিনই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে পারবো। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছে বিতরণ করা হবে। সকলকে মাস্ক এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বই সংগ্রহ করতে হবে। বিদ্যালয়ের প্রধানদের এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এমএম/এমএইচবি