খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ট্রাকের চাপায় বাবা ও ছেলে নিহত
  বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক রাখলেন ট্রাম্প, আগস্ট থেকে কার্যকর

ফেসবুকে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোর পোষ্ট দেখে কাঠের ব্রিজ নির্মাণে বরাদ্দ দিলেন ইউএনও

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঝুঁকিপূর্ণ একটি বাঁশের সাঁকোর পোষ্ট দেখে শ্যামনগরের ধুমঘাট এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে কাঠের ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছাঃ রনী খাতুন।

উপজেলার ঈশ্বরীপুর ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের যথাক্রমে হরিনগর ও ধুমঘাট গ্রাম দু’টিকে সংযুক্তকারি বাঁশের সাঁকোর স্থলে এই কাঠের ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। ইউএনও’র এই মহতি উদ্যোগের খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই রীতিমত উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছে সাঁকো সংলগ্ন দুই গ্রামের মানুষ।

জানা যায়, শ্যামনগর উপজেলার ধুমঘাট এলাকার জিয়াউর রহমান নামের এক ব্যক্তি সম্প্রতি তার ফেসবুকে অতি ভাঙা একটি বাঁশের সাঁকোর ছবি পোষ্ট করেছিলেন। প্রায় একশ সাত ফুট দীর্ঘ ওই সাঁকো পার হয়ে শিশুরা ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করছে বলেও ছবির ক্যাপশনে লেখেন তিনি।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ওই সাঁকো ব্যবহারে প্রাপ্ত বয়স্করা রীতিমত ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে পড়ে। অথচ প্রয়োজনের তাগিদে নানা বয়সী মানুষ প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় পড়া সত্ত্বেও একই সাঁকো ব্যবহার করে পারাপার হচ্ছে।

বিষয়টি নজরে আসতেই প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে (পিআইও) ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছিলেন শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রনী খাতুন।

ইউএনও এর নির্দেশে সরেজমিন পরিদর্শনকালে পিআইও মিয়ারাজ হোসেন খান স্থানীয় ভুক্তোভোগীদের দুর্দশার কথা জানতে পারেন। এসময় তিনি আরও অবগত হন যে, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের ওই সাঁকোটি উপজেলার ঈশ্বরীপুর ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের যথাক্রমে হরিনগর আর ধুমঘাট গ্রাম দু’টিকে সংযুক্ত করেছে।

স্থানীয়রা জানান, জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়া সাঁকোটির কারণে বিপরীত পারে বসবাসরত দুই গ্রামের হাজারো পরিবারকে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষায় অন্তত ১১ কিলোমিটার কম ঘুরতে হয়। সে কারণে প্রতিদিন শত শত মানুষের চলাচলের জন্য উক্ত সাঁকো ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু সাঁকোটি বছরের পর বছর ধরে ভঙ্গুর অবস্থায় থাকলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কখনো তা মেরামতের উদ্যোগ নেয়নি।

সাঁকো পরিদর্শনকারী সহকর্মী পিআইও’র মাধ্যমে সোমবার (৭ জুলাই) সকালে সমগ্র বিষয়ে অবহিত হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা পরিষদের তহবিল থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এছাড়া দুই ইউনিয়নের প্রায় ৫৫ হাজার জনগোষ্ঠীর মধ্যে সাঁকোস্থল দিয়ে উন্নত যোগযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পাকা একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠাতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন ইউএনও।

এদিকে খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই রীতিমত উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছে সাঁকো সংলগ্ন দুই গ্রামের হাজারো পরিবার। সামান্য একটা পোষ্ট এর সুত্র ধরে এতদাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা দূরীকরণের উদ্যোগে ইউএনও’র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।

পোষ্টাদাতা জিয়াউর রহমান জানান, তিনি নিজে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে দু’দিন আগে ফেসবুকে ক্ষোভ থেকে কিছু কথা লিখেছিলেন। এসময় ভাঙাচোরা ওই সাঁকোর ছবিও তিনি পোষ্ট করেন। কিন্তু তারপর দ্রুত এতকিছু ঘটবে সেটা তার চিন্তায় আসেনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম জানান, তাদের কল্পনায় ছিল না সেখানে কোনদিন পাকা বিজ্র হবে। সামান্য একজনের ফেসবুক পোষ্টকে এভাবে আমলে নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বাঁশের সাঁকো সরিয়ে কাঠের ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগে তারা উৎফুল্ল।

প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিয়ারাজ হোসেন খান জানান, ইউএনও স্যার হঠাৎ একদিন আগে তাকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ওই সাঁকোর এলাকা পরিদর্শনে যেতে বলেন। সেখানে পৌঁছে স্থানীয়দের সমস্যার কথা জানতে পেরে তিনি তা ইউএনওকে শেয়ার করেন। পরমুহুর্তে আপাতত কাঠের ব্রিজ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়ার পাশাপাশি তাদেরকে মন্ত্রণালয়ে একটি ব্রিজের প্রস্তাবনা পাঠাতে নির্দেশনা দিয়েছেন।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রনী খাতুন জানান, এলাকার উন্নয়নের জন্য সরকার বরাদ্দ দিয়ে থাকে। ভুলবশতঃ হয়ত জনপ্রতিনিধিরা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় এড়িয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু একজন সচেতন ব্যক্তির পোষ্ট দেখার পর সত্যতা নিশ্চিত হয়ে সেখানে কাঠের ব্রিজ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যেসব শিশুরা ওই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো ব্যবহার করে স্কুলে যাতায়াত করে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি তাকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!