খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ | ১৭ মে, ২০২৪

Breaking News

ফের বাঁধ নির্মাণের আপ্রাণ চেষ্টা চলছে

তরিকুল ইসলাম

টিকে থাকার লড়াইয়ে ফের খুলনার কয়রায় কপোতাক্ষ নদের ভেঙে যাওয়া রিংবাঁধ নির্মাণের জন্য কাজে নেমেছেন স্থানীয় প্রায় দুই হাজার মানুষ। আপ্রাণ চেষ্টায় করেও বার বার ব্যর্থ হচ্ছেন তারা।  আজ মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সকাল ৭ টা থেকে স্বেচ্ছাশ্রমে এ কাজে অংশগ্রহণ করেছেন দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার মানুষ।

এলাকাবাসি জানান, ১৭ জুলাই রোববার ভোররাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৪/১ প্লোডারের দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চরামুখা খালের গোড়া এলাকার বেড়িবাঁধের প্রায় ২০০ মিটার ভাটার টানে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। স্বেচ্ছাশ্রমে পরের দিন দুই হাজার মানুষ রিংবাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে সক্ষম হন।কিন্তু এক মাস অতিবাহিত হলে ওই স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন কাজ না করায় গত ১৪ আগস্ট বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে পুনরায় রিংবাঁধ ভেঙে কপোতাক্ষ নদের লোনা পানি ডুবে গেছে বিস্তীর্ণ জনপদ।

এলাকাবাসি আরও জানান, নদী ভাঙনে ঘর-বাড়ি, জমি-জমা সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ১০ গ্রামের অনেক পরিবার।পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ওই ইউনিয়নের প্রায় ১৫ হাজার মানষ। বাড়ি-ঘর হারিয়ে ছেলে-মেয়ে ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। ভেসে গেছে প্রায় তিন হাজার বিঘা চিংডি ঘের। ডুবে গেছে আমনের বীজতলা।

গতকাল সোমবার সকালে এলাকাবাসী বাঁধ বাধার চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। দুপরের জোয়ারে পুনরায় পানি প্রবেশ করে। জোয়ার শেষে রাতে পুনরায় বাঁধ বাধতে নেমে পড়ে এলাকাবাসি।সেখানে বাঁধে সকলের সাথে কাজ করেন জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার জিএম মাহবুবুল আলম। কাজের শেষে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাঁশ ও ব্যাগ স্বল্পতায় কাজে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড যে সরঞ্জামাদি দিয়েছিল সেটা যথেষ্ট ছিল না। যথেষ্ট মানুষ থাকার পরেও বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন করতে পারিনি। জোয়ার এসে পড়ে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওখানকার কাজ দেখাশুনা করেন ইউপি সদস্য মো. মোজাফ্ফার হোসেন। তিনি বলেন, যথেষ্ট ব্যাগ ছিল। যত খরচ আমিই করেছি এ পর্যন্ত। আমার নিজে হাতেই করেছি। একটা ব্যাগের দাম ৭ টাকা। অপচয় ঠেকাতে হয়ত ছোটদের কাছে ব্যাগ দেয়া হয়নি। আপনি নিজ হাতে কোন খরচগুলো করেছেন এটা জানতে চাইলে এড়িয়ে তিনি বলেন, নিজের থেকে করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড দিলে দিবে না দিলে না দিবে।  তখন তিনি আরও বলেন, পাউবো সরাসরি ফান্ড দিতে পারে না, ব্যাগ কিনে দিয়েছিল। তাকে ডিপিএম দিলে তার এই খরচ উঠবে বলে গতকাল জানান তিনি।

দক্ষিণ বেদকাশী গ্রামের আক্তারুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙনের কারণে আমার ঘরের ভিতরে পানি ঢুকে পড়েছে।কোথায় থাকবো জানিনা।রান্না করার কোন ব্যবস্থা নেই।বাঁধ না হলে ছেলে মেয়ে নিয়ে কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। সে কারণে সব কিছু ফেলে বাঁধ বাঁধার কাজে নেমে পড়েছি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মাসুদ রানা বলেন,পানিতে তলিয়ে গেছে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের ১০ গ্রাম। ভেসে গেছে তিন হাজার বিঘা চিংড়ি ঘের।পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১৫ হাজার মানুষ। ক্রমাগত ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের চরম গাফিলতি রয়েছে।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, একই স্থানে বারবার ভাঙা দুঃখজনক। কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই এই ভোগান্তি। সরকার ইতোমধ্যে ওই এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে দ্রুত স্বচ্ছতার সাথে কাজটি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত জনমনে স্বস্তি নেই। কারণ আমরা দেখেছি বিগত ১০ বছরে জরুরী কাজের নামে কয়রার বেড়ীবাঁধ সংষ্কার ও নির্মাণ বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে- ১শ ৪২ কোটি ৫৮ লাখ ৮ হাজার টাকারও বেশি। অথচ সেইসব জোড়াতালিতেও লুটপাট বাঁধ সংস্কারের নামে যেটুকু কাজ হয়, সেখানেও রয়েছে আমলা-কর্মকর্তা-জনপ্রতিনিধি-ঠিকাদার মিলিয়ে সরকারি তথা জনগণের অর্থ লুটপাটের অসাধু চক্র। টেন্ডারে কাজ পেয়ে মূল ঠিকাদার নিজের লাভটা রেখে কাজটা বিক্রি করে দেন আরেকজনের কাছে। এভাবে হাতবদল হলে কাজের মান খারাপ হতে বাধ্য- এটাই দেখে এসেছি এতদিন। এবার আর এমনটি চাইনা।

কয়রার এই নাগরিক নেতা আরও জানান, কয়রায় নদী ভাঙনের কারণে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ ভিটেমাটি হারিয়ে রাস্তাঘাটে, পরের জমিতে কোনরকমে আশ্রয় নেন। অনেকে আবার সর্বস্ব হারিয়ে ভাসমান কচুরিপানার মতো শহর-বন্দরে পাড়ি দেন, যাদের প্রকৃত হিসাব সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের নেই। সুধু দক্ষিণ বেদকাশী নয়, উপকূলীয় এ উপজেলার প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষকে নদীভাঙনের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হয়। একটি টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবিতে এতোদিন কয়রার মানুষ আন্দোলন করে আসছিল। এখন বরাদ্দ হয়েছে, এবার আন্দোলন সচ্ছতার সাথে কাজটি বাস্তবায়নের বিষয়টি বুঝে নেয়ার।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ণের বোর্ডের(বিভাগ-২) উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পুর) মো. মশিউল আবেদিন বলেন, প্রাথমিকভাবে ভেঙে যাওয়া রিংবাঁধ মেরামতের মাধ্যমে পানি আটকানোর জন্য মানুষ কাজ করছে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষে বস্তা ও বাঁশ দিয়ে সহযোগীতা করা হচ্ছে। পানি আটকানোর পর মূল ক্লোজারে কাজ করা হবে।

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!