প্রেম মানে না কোনো বাধা। প্রেমের টানে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে প্রায় প্রতিনিয়ত বাংলাদেশে ছুটে আসছেন ভিনদেশি তরুণ-তরুণী। এবার বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে মেয়ে ফারিয়া সুলতানা মুন(২০)কে বিয়ে করলেন সাউই চুই (২৮) নামের এক চীন দেশের নাগরিক।
গত ৩০শে জুন ঢাকায় তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের আগে সাউই চুই মুসলিম হয়েছে বলে জানা গেছে। তার বর্তমান নাম আব্দুল্লাহ রাখা হয়েছে।
এরপর গত সোমবার চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামে নিজেদের বাড়িতে স্বামীকে নিয়ে আসেন ফারিয়া সুলতানা। সাউই চুই এখানে তিনদিন থেকে গতকাল বুধবার রাতে ঢাকায় ফিরে গিয়েছেন। ফারিয়া সুলতানা জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের গয়েশপুর গ্রামের মৃত শফিকুল ইসলামের মেয়ে।
স্থানীয়রা জানান,ফারিয়া সুলতানা মুন প্রায় ঢাকায় তার ফুফুর বাসায় যেত।গত সোমবার চীনা নাগরিকের সাথে বাড়ি আসলে জানতে পারি একবছর আগে চীনা যুবক সাউই চুই এর সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও উইচ্যাটে পরিচয় হয় তাদের। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। দু’জনের মধ্যে প্রায় ৭/৮ মাস উইচ্যাটের মাধ্যমে কথোপকথন হয়। একসময় চীনা যুবক মুনকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। বিষয়টি দুজনের পরিবারও জানত। এরই একপর্যায়ে সাউই চুই চীন থেকে ঢাকায় এসে ফারিয়ার সঙ্গে দেখা করেন এবং ঈদুল আজহার পরদিন ওই চীনা নাগরিকের বোনের উপস্থিতিতেই তাদের বিয়ে হয়।
স্থানীয় আরও বলেন, ‘ফারিয়ার এর আগেও চারবার বিয়ে হয়েছে। এটি তার পঞ্চম বিয়ে। তার মা আঞ্জুরা এক তৃতীয় স্বামীর সংসার করছেন। ফারিয়া আঞ্জুরার প্রথম স্বামীর সন্তান।
প্রতিবেশীরা বলেন, অন্য সকল বিয়ের চেয়ে এটি ছিল ভিন্ন একটি বিয়ে। কারণ ভিনদেশী ছেলে আর দেশি মেয়ের বিয়ে। আনন্দ ও উল্লাস ছিল আলাদা।আশপাশের অনেক গ্রামের মানুষ বিদেশি জামাইকে দেখার জন্য ভিড় করছে।
মুনের মা আন্জুরা বেগম বলেন, মোবাইলের মাধ্যমে আমার মেয়ের সঙ্গে চীনের ওই ছেলের পরিচয় হয়। পরিচয় হওয়ার পর ওই ছেলে আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাইলে আমরা তাকে আমাদের দেশে আসতে বলি এবং দেশের সকল আইন মেনে দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতে পারিবারিকভাবে ঈদের পরের দিন ঢাকায় তাদের বিয়ে দিয়েছি। বিয়েতে জামাই নগত ৩ লাখ টাকা কাবিন আমার মেয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দিয়েছে। জামাই অনেক ভাল ও শান্ত স্বভাবের।আমাদের বাড়িতে এসে তিন দিন ছিল। আমার রান্না করা খাবার খেয়েছে। খাবার খুবই সুস্বাদু বলে জানিয়েছে।গত বুধবার রাতে আমার মেয়েকে নিয়ে জামাই ঢাকায় চলে গেছে।আমার মেয়েকে চীনে নিয়ে যাবে বলে জামাই কথা বলছে।
৪নং সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইসাবুল ইসলাম মিল্টন মোল্লা বলেন, চীন থেকে এক যুবক গয়েশপুর গ্রামে হতদরিদ্র পরিবারের একটি মেয়েকে ইসলামিক শরিয়তের মাধ্যমে বিয়ে করেছে এটা আমি শুনেছি এবং তাকে দেখতে প্রতিদিন তার বাড়িতে মানুষ ভিড় করছে। মেয়ের পরিবারটি অন্তত দরিদ্র তাদের পরিবার আর্থিক ভাবে উন্নত হোক এবং তারা সুখে থাক এটা কামনা করি।
তিনি আরও বলেন, গত বুধবার রাতে ট্রেনের মাধ্যমে তারা ঢাকার উদ্দেশ্য গিয়েছে। চলে যাওয়ার কারণ এটি একেবারেই গ্রাম এখানে থাকার উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় সে তার পরিবারকে নিয়ে চলে গিয়েছে বলে জানতে পেরেছি।
জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন মৃধা বলেন, চীনের এক নাগরিক জীবননগর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামে এসে একটি মেয়েকে বিয়ে করেছে বিয়ের ঘটনাটি আমরা শুনেছি। তাদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে ডিএসবির সদস্যরা বলতে পারবে।
তবে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ লাখ টাকা কাবিনে ফারিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় ওই চীনা নাগরিকের। তিনি নগদ ২ লাখ টাকা দিয়েছেন। চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় তাঁদের বিয়ে হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ভোরে তারা গ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন।
খুলনা গেজেট/কেডি