আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক চরিত্র সংশোধন হয়নি। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে দলটির নেতাদের চরিত্র সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছিলেন, সেখান থেকে কোন পরিবর্তন তাদের ঘটেনি। খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে আসা ও ফিরে যাওয়ার পথে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, দানবীয় বর্বরতায় হত্যার উদ্দেশ্যে চালানো আঘাত এবং মারপিটের পর নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, খাবার ও স্বর্ণালংকার কেড়ে নেয়ার অসংখ্য ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এ মন্তব্য করেন দলের খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টায় কে ডি ঘোষ রোডস্থ কার্যালয়ে বিএনপি খুলনা বিভাগের পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন তিনি।
এ সময় জানানো হয়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খুলনার পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটর করছেন এবং আহত ও ক্ষতিগ্রস্থদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, বিএনপির গণসমাবেশ পন্ড করতে বিভাগ জুড়ে চালানো গণগ্রেফতার অভিযানে কারাবন্দী হন ২৫০ জন। হামলায় আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক। এ পর্যন্ত দৌলতপুর থানায় দুটি ও জিআরপি থানায় দুটি সহ মোট মামলা ৪টি। এ চার মামলায় আসামি সহস্রাধিক। আরও কয়েকটি মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে শোনা যাচ্ছে। শাসক দলীয় ক্যাডারদের হামলার ভয়াবহতা না দেখলে উপলব্ধি করা অবর্ণণীয়।
অমিত জানান, বিভাগের ১১টি সাংগঠনিক ইউনিটের সব জায়গায় হামলা, নির্যাতন ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, বাগেরহাটে রীতিমতো তান্ডব চলেছে। তবে খুলনার ফুলতলা উপজেলার নেতাকর্মীদের ওপরে যে হামলা হয়েছে তা প্রত্যক্ষ করলে শিহরে উঠতে হয়। পাঁচটি ট্রলার যোগে তারা খুলনায় রওনা হন। ৫ নং ঘাটি এলাকায় পৌছানোর আগেই তাদেরকে প্রতিহত করতে শটগানের গুলি ছোড়া হয়। ডুবিয়ে দেয়া হয় তাদেরকে বহনকারী ট্রলার। প্রাণ বাঁচাতে কর্মীরা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়তে বাধ্য হন। যাদেরতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়েছে তাদের শরীরে আঘাতের বর্ণণা দেয়া সম্ভব নয়। একজনের শরীরে ২২ টি কুড়ালের আঘাতের চিহ্ন আছে। আব্দুল্লাহ নামের এক কর্মীকে হাসপাতালে আনার পর ডাক্তাররা মৃত মনে করে ফেলে রেখেছিল। পরে আল্লাহর রহমতে তার শরীরে প্রাণের স্পন্দন পেলে চিকিৎসা শুরু করা হয়। জনপ্রিয়তম ইউপি চেয়রম্যান আবুল বাশারকে নির্মমভাবে আহত করা হয়।
তিনি বলেন, দৌলতপুর ও খালিশপুরে বিএনপির দুটি অফিস পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। নগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক তরিকুল ইসলাম জহীরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ এবং কম্পিউটারসহ অনেক কিছু লুটে নিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে।
বিএনপি নেতা বলেন, গণসমাবেশ থেকে ফিরে যাওয়ার পথে বিএনপি কর্মীদের মারপিট করে কাছে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ফোন এবং আংটি-চেন কেড়ে নেয়ার অভিযোগ প্রতিনিয়ত আমাদের কাছে আসছে। আওয়ামী লীগ যে ঐতিহ্যগতভাবে একটি লুটেরা সংগঠন, তা তাদের পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ৭৪ সালে বলে গিয়েছিলেন। সেই চরিত্র আজও সংশোধন হয়নি।
সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় ছিত্রংয়ের প্রভাবে চরম বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে যারা সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে অমিত বলেন, আমরা সাহসী জাতি। সম্মিলিতভাবে আমরা প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলা করতে পারি। যারা প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকবেলা করতে পারে তারা রাজনৈতিক দূর্যোগও মোকাবেলা করতে পারবে। অমিত জানান, ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির প্রেক্ষিতে খুলনা জেলা বিএনপি ক্রাইসি ম্যানেজমেন্ট সেল গঠন করেছে। সবারইক সেলের সাথে যোগাযোগ রাখার ও ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে মহানগর বিএনপির আহবায়ক শফিকুল আলম মনা, সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন ও জেলা বিএনপির আহবায়ক আমীর এজাজ খান বক্তব্য রাখেন।
এ সময় নগর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পী, নগরের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মোঃ তারিকুল ইসলাম জহীর, স ম আব্দুর রহমান, কাজী মাহমুদ আলী, বদরুল আনাম খান, শেখ তৈয়েবুর রহমান, মাহবুব হাসান পিয়ারু, চৌধুরী শফিকুল ইসলাম হোসেন, একরামুল হক হেলাল, আশরাফুল আলম খান নান্নু, শাহিনুল আলম পাখী, বিপ্লবুর রহমান কুদ্দুস, এহতেশামুল হক শাওন, শেখ ইমাম হোসেন, রফিকুল ইসলাম বাবু, তারিকুল ইসলাম, মিজানুর রহমান মিলটন, শামসুল বারিক পান্না, আলী আক্কাস, জাভেদ মল্লিক, স্বেচ্ছাসেবক দলের আতাউর রহমান রনু, মুনতাসির আল মামুন, কৃষক দলের আক্তারুজ্জামান তালুকদার সজীব, শ্রমিক দলের খান ইসমাইল হোসেন, জাসাসের শহিদুল ইসলাম, মোঃ আশরাফুল ইসলাম, মৎস্যজীবী দলের আজিজুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী আইন ছাত্র পরিষদের এস এম মারুফ আহমেদ, যশোরের আমির ফয়সাল, সাদ্দাম হোসেন, সানী আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।