খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  অ্যান্টিগা টেস্ট: শেষ দিনে বাংলাদেশের দরকার ২২৫ রান, হাতে ৩ উইকেট

প্রথমবারের মতো ভোমরা সিএন্ডএফ’র নির্বাচন, বিএনপি পন্থীদের প্যানেল ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার নির্বাচন কমিশনার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেন। আগামী ১১ জানুয়ারি এসোসিয়েশনের ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের পূর্বেই জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়। দলের জেলা কমিটির শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক শেখ এজাজ আহমেদ স্বপনকে সভাপতি এবং এএসএম মাকছুদ খানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৯সদস্যের এই প্যানেল ঘোষণা করা হয়।

অন্যদিকে বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ীদের প্যানেলের সভাপতি কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছেন মোঃ অহিদুল ইসলাম। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ব্যবসায়ী আবু মুছার নেতৃত্বে ৫জনের একটি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাছিম ও কাজী ইমাম উদ্দিন স্বতন্ত্র সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৯ পদে মোট প্রার্থী রয়েছে ২৫ জন।

উল্লেখ্য, ভোমরা স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার পর থেকে ধীরে ধীরে এটি আমদানী রপ্তানী বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। রাজস্ব আয়ও প্রতিবছর বাড়তে থাকে। কিন্তু প্রশাসন ও রাজনীতির দুর্নীতিবাজদের অনৈতিক হস্তক্ষেপসহ নানা কারণে বন্দরটিতে ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণের পরিবর্তে সংকুচিত হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে গত তিনটি মেয়াদে বন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনে টাকার বিনিময়ে গঠিত কমিটি ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিবেশ নষ্ট করে দেয় বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ভোমরা স্থল বন্দরে আমদানী রপ্তানী পণ্যের লোড-আনলোডের জন্য ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে দুবার টাকা আদায় করা হয়। সরকার নির্ধারিত ঠিকাদার প্রতিমাসে লেবার বিল সরকারের নিকট থেকে গ্রহণ করে। কিন্তু লোড় আনলোডের সাথে যুক্ত শ্রমিকদের তিনি কোন বিল দেন না। লেবাররা সরাসরি আমদানী রপ্তানীকারকদের নিকট থেকে নগদেও বিল আদায় করে। আবার একই ব্যবসায়ীকে ঐ টাকা সরকারকেও দিতে হয়। বারবার বিষয়টি সামনে এলেও আজও এটি বন্ধ করার কেউ উদ্যোগ নিতে পারিনি।

অপরদিকে ব্যবসায়ীরা আরো জানায়, ওপারের ঘোজাডাঙ্গায় সিরিয়ালের নামে ট্রাক প্রতি ৩০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। ঐ টাকা না দিলে সিরিয়ালের নামে একমাস থেকে দেড়মাস পর্যন্ত ট্রাক আটকিয়ে রাখা হয়। ফলে ব্যাপক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে এখন প্রায় সকলেই টাকা দিয়ে দিনে দিনেই ট্রাক ছাড় করিয়ে নিয়ে আসে। এই টাকা যায় বাংলাদেশের আমদানীকারক ব্যবসায়ীদের পকেট থেকে। প্রতিদিন প্রায় দেড় শত ভারতীয় ট্রাক মালামাল বাংলাদেশের আমদানীকারকরা ট্রাক প্রতি ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে ঘোজাডাঙ্গা থেকে ছাড় করিয়ে নিয়ে আসে। ডাবল লেবার বিল এবং সিরিয়াল বাবদ দু’পারে প্রতিমাসে আদায়কৃত শত কোটি টাকার অবৈধ আয়ের একটি অংশ প্রশাসন ও রাজনীতির দুর্নীতিবাজদের মনোনীত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তাদের হাতেই এসে পৌছায়। ফলে এই অবৈধ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে একটি আজ্ঞাবহ কমিটি গঠন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ওই মহলটি।

সূত্রটি জানায়, কোলকাতা থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকটবর্তী স্থলবন্দর ভোমরা। মাত্র ৭৫ কিঃ মিঃ দূরত্বের কারণে ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে কম খরচে পণ্য আমদানী করতে পারে। কিন্তু প্রশাসন, রাজনীতি ও ব্যবসায়ী নেতাদের দুর্নীতিবাজ একটি চক্রের অশুভ আঁতাত এই বন্দরে ব্যবসা সম্প্রসারণের প্রধান অন্তরায়। তাদের সাথে সমঝোতা না করলে সাধারণ ব্যবসায়ীরা পদে পদে হয়রানীর শিকার হয়। ফলে এই বন্দরে ব্যবসা করতো এমন অনেক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এখান থেকে অন্যত্র চলে গেছেন। এমন কি সাতক্ষীরার একাধিক ব্যবসায়ী ভোমরা স্থল বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দরে চলে গেছেন। তবে এসব নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি হননি।

এব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ও স্বপন-মাকছুদ প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন বলেন, সিন্ডিকেটের কারনে ভোমরায় নির্বাচন করতে দেওয়া হতো না। ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়ে আমি সেটা ভেঙেছি। আমাকে টাকা ও পদ দিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি সেটাও প্রত্যাখান করেছি। এখন সবাই উৎসবমুখর পরিবেশে প্রথমবারের মত ভোট প্রদান করবেন। তিনি আরও বলেন, আমরা নির্বাচিত হলে বন্দরে ব্যবসায়ের পরিবেশ ফিরিয়ে আনবো। সকল পণ্য আমাদানী রপ্তানীর বাধা অপসারণ করবো। ২৪ ঘন্টা আমদানী-রপ্তানী কার্যক্রম চালু রাখার উদ্যোগ নিব।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!