খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ পৌষ, ১৪৩১ | ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে এক জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১১৪
  দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হলেও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আরেকটি যুদ্ধ করতে হবে : তারেক রহমান
  খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মুন্সি মাহাবুব আলম সোহাগকে কারাগারে প্রেরণ

প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অস্তিত্ব সংকটে মৃৎশিল্প

নড়াইল প্রতিনিধি

প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে মৃৎশিল্প। অ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক ও মেলামাইনের পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে দেশের মৃৎশিল্প। তবে ভিন্ন চিত্র নড়াইলের ১৫টি গ্রামে। প্রতিকূলতার মাঝেও এসব গ্রামে পাঁচ শতাধিক মৃৎশিল্প পুরনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এখানকার কুমারদের তৈরি মাটির পাত্র সরবরাহ হচ্ছে যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল, ঝালকাঠিসহ বেশ কয়েকটি জেলায়।

স্থানীয় মৃৎশিল্পীরা জানান, গ্রামে একসময় হাঁড়ি, কড়াই, বদনা, ঢাকুন, ফুলের টবসহ বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্রের চাহিদা ছিল। কালের বিবর্তনে মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিলের চাহিদা কমেছে। সে বাজার দখল করে নিয়েছে অ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক ও মেলামাইনের পণ্য। অধিকাংশ মৃৎশিল্প বন্ধ হয়ে গেলেও জেলার কুমারডাঙ্গা, চণ্ডীতলা, রতডাঙ্গা, রায়গ্রাম, ছোট কালিয়াসহ অন্তত ১৫টি গ্রামে তা সচল রয়েছে। এ জনপদের পাঁচ শতাধিক কারখানায় এখনো তৈরি করা হয় মাটির জিনিসপত্র। এ পেশায় জড়িত রয়েছে অন্তত ১২ হাজার মানুষ। মৌসুম শুরু হওয়ায় ব্যস্ততাও বেড়েছে তাদের। পুরুষের পাশাপাশি কাজ করছেন নারীরাও। তবে এ কাজে আগের মতো লাভ নেই। পেটের দায়ে এবং বাপ-ঠাকুরদার পেশা টিকিয়ে রাখতে এখনো শিল্পটিকে ধরে রেখেছেন তারা।

সদর উপজেলার চণ্ডীতলা গ্রামের অসীম পাল জানান, এ গ্রামে মৃৎশিল্পের ইতিহাস শত বছরের। এখানকার কুমারদের তৈরি মাটির জিনিসপত্রের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এখনো। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, বাগেরহাট ও খুলনার হাট-বাজারেও বিক্রি হয় মাটির জিনিসপত্র।

একই গ্রামের রতন পাল জানান, তার বাবা এবং ঠাকুরদা একসময় এ কাজ করে সংসার চালাতেন। তিনিও ছোট বেলা থেকে এ কাজ করেন। ৪৭ বছর ধরে এ কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। তবে তার তিন ছেলের মধ্যে দুজন চাকরি করে। একজন মৃৎশিল্পে কাজ করে।

সরেজমিন লোহাগড়া উপজেলার মধুমতী পাড়ের কুমারডাঙ্গা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, মাটির তৈরি জিনিসপত্র বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। বাড়িতে বাড়িতে ঘুরছে চাকা। কেউ মাটিতে পানি মিশিয়ে কাদা নরম করছেন, কেউ মাটির তৈরি জিনিস রোদে শুকানোর কাজ করছেন। কেউ আবার ব্যস্ত এসব পোড়ানোর কাজে। আবার অনেকে পোড়ানো জিনিসপত্রে রংতুলির কাজ করছেন।

কুমারডাঙ্গা গ্রামের অরবিন্দু পাল জানান, নভেম্বর থেকেই তাদের কাজ শুরু হয়। রোদের তেজ বেশি থাকায় এ সময় কাজ অনেক বেশি হয়।

রতডাঙ্গা গ্রামের সজীব পাল বলেন, ‘এ পেশায় এখন আর আগের মতো লাভ নেই। অন্য কোনো কাজ জানি না। তাই বাপ-দাদার পেশাকে কোনো রকমে আঁকড়ে ধরে আছি মাত্র।

মৃৎশিল্পীরা জানান, প্লাস্টিকের তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাজার হারিয়েছে মাটির তৈরি পণ্য। বেকার হয়ে পড়েছেন মাটির কারিগররা। এরই মধ্যে জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের কুমারেরা পেশা পরিবর্তন করেছেন। তাদের কেউ এখন রিকশা-ভ্যান, কেউ দিনমজুরের কাজ করছেন। সরকারি বা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও নেই এ শিল্পে। এমনটি চলতে থাকলে অচিরেই সম্পূর্ণ হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে মৃৎশিল্পের।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) নড়াইলের উপব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার মো. সোলাইমান হোসেন বলেন, ‘এখানকার মৃৎপাত্রের মান অনেক ভালো। এখন যে কারখানা রয়েছে, তা আরো বড় করার জন্য বিসিক তাদের পাশে থাকবে। মৃৎশিল্পীদের সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে এ শিল্প টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!