গোপালগঞ্জে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। জেলা ও উপজেলার সদরসহ গ্রামের মানুষ আক্রান্ত হয়ে গোপালগঞ্জ আড়াইশ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালসহ উপজেলা হাসপাতালে আসছেন চিকিৎসা নিতে। কিন্তু ডেঙ্গু বিস্তার রোধে প্রশাসন বা জনপ্রতিনিধিদের কোন কার্যক্রম না থাকায় ক্ষোভ জানিয়েছেন জেলাবাসী। ইতিমধ্যে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে সিট সংকুলানে বেগ পেতে হবে।
গোপালগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থান ও হাসপাতাল ক্যাম্পাসে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকায় সড়কে জমে আছে পানি। অপরিষ্কার অবস্থায় ড্রেন, বাসা-বাড়ি ও রাস্তাঘাটে ডাবের খোসা ও ফুলের টবে জমে থাকছে পানি । যা থেকে বংশবিস্তার করছে এডিস মশাসহ বিভিন্ন জাতের মশা। এসব মশা নিধনে স্প্রে বা ওষুধ না ছিটানোর কারণে শহর বা গ্রামের ডোবা নালায় জমে থাকা পানি থেকে মশার বংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গোপালগঞ্জে প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। শুধু শহরে নয় আক্রান্ত হচ্ছে গ্রামের মানুষও। অথচ ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রশাসন কিংবা পৌরসভার পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোন কার্যক্রম দেখা যায়নি।এ কারণে মানুষের মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে।
এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, চলতি বর্ষা মৌসুমের জুন থেকে জুলাই ১৬ তারিখ পর্যন্ত ১৭৬ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। জুন মাসে রোগী ছিলো ৭০ জন। আর জুলাই মাসের ১৬ তারিখ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ১০৬ জন। এখন জেলার বিভিণ্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ৪৩ জন। রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ আড়াইশ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ২০ জন, টুঙ্গিপাড়া হাসপাতালে ৩জন, কোটালীপাড়া হাসপাতালে ২জন, মুকসুদপুর হাসপাতালে ১৪জন ও কাশিয়ানী হাসপাতালে ৪জন রোগী ভর্তি আছে।১৩২জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।
শনিবার গোপালগঞ্জের পাশ্ববর্তী বাগেরহাট জেলার আস্তাল গ্রামের গাউজ (৫০) নামে এক ব্যক্তি গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশ রোগী ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় শহর থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গোপালগঞ্জ জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। এরমধ্যে শিশু, নারীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ রয়েছেন।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার রামদিয়ার আসমা বেগম (৩৫) নামে এক নারী ও সদর উপজেলার জালালাবাদ থেকে উম্মে হাবিবা (৮) নামে এক শিশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত ওই নারী জানিয়েছেন তিনি ১০ দিন পূর্বে জ্বরে আক্রান্ত হন। ৪ দিন আগে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এখানে ভর্তি হওয়ায় পর পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়েছে।
শিশু উম্মি হাবিবার পিতা রায়হান মোল্লা জানিয়েছেন, ঈদের ২ দিন পর থেকে তার শিশু কন্যা জ্বরে আক্রান্ত হন। স্থানীয়ভাবে মেয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। কিন্তু কোন উন্নতি না হয়ে অবনতি হওয়ায় ৪ দিন আগে হাসপাতালে এনেছেন। এখানে ভর্তি করে পরীক্ষার করার পর ডেঙ্গু ধরা পড়েছে।
গোপালগঞ্জের নজরুল ইসলাম বলেছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে গোপালগঞ্জে তেমন কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি। আমরা যারা শহর বা গ্রামে বসবাস করছি, প্রতিটি মানুষের ভেতরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব ড্রেন পরিস্কার করা ও পর্যাপ্ত মশার ওষুধ ছিটানো দরকার।
রোগীর স্বজন ইলিয়াস শেখ বলেছেন, হাসপাতাল এলাকায় নোংরা পরিবেশ। এখানে মাসের পর মাস ময়লা আবর্জনা ও সেফটি ট্যাংকির ময়লা উপচে সয়লাভ থাকে। এখন থেকে প্রচুর মশা মাছির জন্ম হয়। এগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা জরুরী। তা না হলে এখান থেকেই ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়তে পারে।
গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা: জীবিতোষ বিশ্বাস বলেন, হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ছে। এর অধিকাংশ অন্যত্র থেকে আক্রান্ত হয়ে এখানে চিকিৎসারর জন্য ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতালে ইতিমধ্যে দুই পৃথক ওয়ার্ডে নারী ও পুরুষ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। শনিবার গোপালগঞ্জের পাশ্ববর্তী বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার আস্তাল গ্রামের গাউজ (৫০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। উনি ১২ জুলাই এখানে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন।
তিনি আরো জানান, হাসপাতাল থেকে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু যাতে ছড়াতে না পারে তার জন্য উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। হাসপাতাল আশপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্নের কাজ ইতিমধ্যে শুরু করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে হাসপাতালের পরিবেশ আরো উন্নত হবে।
সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার কমাতে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় সাধারন মানুষকে জানাতে ও সচেতনতা বাড়াতে মাইকিং করার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। নিজেরা সচেতন না হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা রয়েছে।
খুলনা গেজেট/এসজেড